তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই এবং স্থল সীমা চুক্তি ও প্রটোকল বাস্তবায়নসহ ভারতের সঙ্গে অনিষ্পিন্ন ইস্যুগুলোর দ্রুত সমাধানে দেশটির নতুন নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন-জেসিসি’র তৃতীয় বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হবে। রাজনৈতিক পর্যায়ে দু’দেশের মধ্যে নিয়মিত আলোচনার ফোরাম জেসিসি। যেখানে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। মুখ্য সচিব, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, পানি সম্পদ, পরিকল্পনা কমিশন ও নৌ-মন্ত্রণালয়ের মোট ৭ জন সচিবসহ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে গতকাল ভারত গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে সকাল ৯টার দিকে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, আসন্ন জেসিসি হবে দেশটির নতুন সরকারের সঙ্গে প্রথম দ্বিপক্ষীয় ও আনুষ্ঠানিক বৈঠক। যদিও দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম একক বিদেশ সফরে ঢাকা ঘুরে গেছেন মোদি সরকারের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সেটি ‘গুড উইল ভিজিটি’ ছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দিল্লিতে আয়োজিত এবারের জেসিসিতে দু’দেশের মধ্যে অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলোর দ্রুত সমাধানের আহ্বানই মুখ্য হবে। ওই বৈঠকে অংশ নেয়া ছাড়াও চারদিনের সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশের মাটি ভারতবিরোধী কাজে কোনভাবেই ব্যবহৃত হতে দেয়া হবে না- দেশের সরকার ও বিরোধী দলের নেতৃত্বের তরফে এমন অঙ্গীকার করা হয় প্রতিনিয়ত। ভারতের কাছ থেকে একই রকম প্রতিশ্রুতি আদায়ে এবারের জেসিসিতে চেষ্টা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে মাহমুদ আলী বলেন, নিশ্চয়ই আমরা চাইবো। ভারতের ভূমি যাতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়, সে রকম একটি ব বোঝাপড়া দেশটির সঙ্গে আছে। বৈঠক শেষে দেশে ফিরে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত বলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। ভারতের একটি কোম্পানি বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনকে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর নিষ্পত্তিও সেখানেই হবে বলে আশা করেন তিনি।
জেসিসি বৈঠকে এক গুচ্ছ এজেন্ডা: সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে দেয়া লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, এবারে জেসিসিতে দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি যেমন- সীমান্ত হত্যাকাণ্ড কমাতে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও উপ আঞ্চলিক সহযোগিতা, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংযোগ, পানি সম্পদ খাতে সহযোগিতা, জনসংযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ সহযোগিতা বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান বহুমাত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ করার বিষয়ে আলোচনা হবে। তাছাড়া বাণিজ্য ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংযোগ বৃদ্ধিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সড়ক, রেল ও উপকূলীয় নৌ-যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বিগত দিনের অগ্রগতিও খতিয়ে দেখা হবে। মন্ত্রী বলেন, পানিবণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন, যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়গুলো উত্থাপন করবে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাগুলো এবং বাংলাদেশে যে সব পণ্যে বিএসটিআই সনদ ভারতে গ্রহণে অসুবিধা হচ্ছে তার সুরাহার জন্য এ সংক্রান্ত একটি তালিকা দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ভারতের বিহারে নবপ্রতিষ্ঠিত তবে আধুনিক কারিকুলাম সমৃদ্ধ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা ও বিনিয়ম কার্যক্রম বাড়াতে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় সরকারই আঞ্চলিক সহযোগিতায় গুরুত্ব আরোপ করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রেক্ষিতে বিমসটেক, সার্ক, বিসিআইএম-ইসিসহ আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে জেসিসি বৈঠকে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দু’দেশের মধ্যকার সমঝোতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোও আলোচিত হবে। বৈঠকটি ফলপ্রসূ হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা, ফলোআপ এবং সহযোগিতার আরও নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন রাজনৈতিক পর্যায়ের ওই ফোরাম নিয়ামক রূপে কাজ করবে বলে আশা করেন তিনি। দেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ভারতের তরফে সহায়তার যে প্রস্তাব করেছে তা নিয়ে জেসিসিতে কোন আলোচনা হবে কিনা জানতে চান এক সাংবাদিক। মন্ত্রী ইতিবাচক দিয়ে বৈঠকের পর বিস্তারিত বলবেন বলে জানান। আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লি থেকেই নিউ ইয়র্ক যাবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। সেখানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেয়া ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেশকিছু কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রীর দপ্তর সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, আগামী ১০দিন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রেই থাকছেন তিনি। অবশ্য এই সময়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কর্মকর্তা দেশের বাইরে থাকবেন বলে জানা গেছে।