বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে মমতার সম্মতি

image_194781.article
তিস্তার পানি-বণ্টন নিয়ে তিনি যে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির বিরোধী নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ঢাকা সফর থেকে ফিরে লেখা এই চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই চুক্তি নিয়ে জট কাটাতে তিনি সহযোগিতাই করতে চান। সব ঠিক থাকলে এপ্রিল মাসেই ঢাকা সফরে আসতে চান দেশটির প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের হাত দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন মোদি। সেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সফরের জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন। মোদি হাসিনাকে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই ঢাকায় যেতে চান তিনি। ১৯৯৬-এর ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে হাসিনার সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি করার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে সঙ্গে রেখেছিলেন, তিস্তা চুক্তিতেও মমতাকে ঠিক একই ভাবে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাইছেন মোদী। এই নীতি মেনেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়াতেও তিনি তামিলনাড়ুকে সঙ্গে রাখছেন। ভারতে ফিরেই মমতা নিজে তাঁর সফরের খুঁটিনাটি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁর সফর ইতিবাচক হয়েছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি যে হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছেন, সে কথাও প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে ভোলেননি মমতা। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ জলের ভাগ নিয়ে দু’পক্ষেরই কিছু দাবি-দাওয়া রয়েছে। এই চুক্তি নিয়ে যে জট পাকিয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমেই কাটিয়ে ফেলা সম্ভব। এ বিষয়ে সহযোগিতার প্রস্তাবও দিয়েছেন মমতা। সরকারি সূত্রের খবর, ৯ তারিখে মোদি-মমতা বৈঠকেও তিস্তা চুক্তি ও বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলি উঠবে।ঢাকা সফরের আগে দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সম্মানে দেওয়া প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নৈশভোজে মোদির মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা। অনেকের মতে মোদির সঙ্গে দেখা করতেই সে যাত্রা দিল্লিবাসের মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন তিনি। এর পর অতি সম্প্রতি মোদির সঙ্গে বৈঠকের জন্য তাঁর সময় চেয়েছেন মমতা। এই প্রেক্ষাপটেই তিস্তা নিয়ে মমতার চিঠি তাঁর নরম অবস্থানের আরও একটি উদাহরণ বলে মনে করা হচ্ছে। এবং তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও আশার আলো দেখছে ভারতের কেন্দ্র সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের মতে, মমতার এই চিঠির পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর কোনও বাধা থাকবে না।
শুরুতে মমতা ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তিতে সায় দিয়েছেন। পাশাপাশি সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ঢাকাকে শুধু আশ্বাসই দিয়ে আসেননি, দেশের প্রতিনিধি হিসেবে হাসিনা সরকারের সঙ্গে এই চুক্তি রূপায়ণের পথ নির্দেশিকা নিয়েও আলোচনা করেছেন। ঢাকার ভারতীয় হাই-কমিশনার পঙ্কজ সরন এই আলোচনায় আগাগোড়া মমতার সঙ্গে ছিলেন। মমতা ঢাকায় থাকাকালীনই এক রকম আলোচনা শুরু করে দিয়েছিলেন ভারতীয় হাই-কমিশনার। তার পরে পররাষ্ট্রসচিব জয়শঙ্কর গতকাল ঢাকায় পৌঁছে নানা বিষয়ের সঙ্গে তিস্তা নিয়েও কথা বলেছেন বাংলাদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে। এত দিন দিল্লির বিরুদ্ধে তিস্তা চুক্তি নিয়ে টালবাহানার হালকা নালিশ করে এলেও কাল লক্ষ্যণীয় ভাবে ঢাকা জানিয়েছে, এ বিষয়ে দিল্লির তৎপরতায় তারা সন্তুষ্ট। তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তি অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দিল্লির কূটনৈতিক মহলের একটি অংশ বলছে, ভোটের সঙ্গে বিষয়টির কোনও সম্পর্ক নেই। সূত্র-আনন্দবাজার