Sunday, January 19Welcome khabarica24 Online

তিন বোনের শেষ সেলফি

3_21780

তিন বোনের হাস্যোজ্জ্বল একটি সেলফি আজ কাঁদাচ্ছে হাজার মানুষকে। সোমবার মাদারীপুর শিবচরের বাড়ি থেকে ভ্যানগাড়িতে কাওড়াকান্দি লঞ্চঘাটে আসার পথে তিন বোন সেলফি তোলেন। পরে এক বোন তা নিজের ফেসবুকে আপলোড করেন সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে। ছবিটির ক্যাপশন ছিল ‘On the Way Sister journey’। কিন্তু এর দেড় ঘণ্টা পরই লঞ্চডুবিতে পদ্মার স্রোতে হারিয়ে যায় তিন বোন। আর এই তিনজন ছিল নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ভাগ্নি। এর মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য দুজন এখনো নিখোঁজ। গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া যাওয়ার পথে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে মাঝ পদ্মায় ডুবে যায় এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি। ফেসবুকে ছবি দেওয়ার আগে এই তিন বোন জানতেন না আর ফেরা হবে না ঢাকায়। কিংবা ফিরে যাওয়া হবে না প্রিয় গ্রামে, প্রিয়জনদের কাছে। ঈদের ছুটি শেষ করে ফিরছিলেন ঢাকায়। আনন্দপথের যাত্রায় জীবনের শেষ স্মৃতি সেলফিটি পাওয়া গেছে নুসরাত জাহান হীরার ফেসবুক পেজ থেকে। তিনজনের মধ্যে হীরা রাজধানীর সিকদার মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। অপর দুজন রাইফেলস পাবলিক কলেজের ছাত্রী ছোট বোন ফাতেমা তুজ জোহরা স্বর্ণা আর চীনের জইনজু ইউনিভার্সিটির এমবিএ ছাত্রী তাদের খালাতো বোন জান্নাতুন নাঈম।বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন দুই মেয়েকে। কিন্তু সব স্বপ্নের মৃত্যু ঘটল কয়েক মিনিটের মধ্যেই। ঈদ শেষে মেয়েদের নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বাবা নূরুল ইসলাম। পেশায় দলিল লেখক এই পিতার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল পদ্মার পানিতে। শিবচরের গুয়াতলা এলাকার নূরুল ইসলাম মুহুরি তার দুই মেয়ে হিরা ও স্বর্ণা এবং তাদের খালাতো বোন জান্নাত নাঈম লাকীকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। লঞ্চডুবির পর বাবা বেঁচে গেলেও তিন বোন বাঁচতে পারলেন না। লঞ্চডুবির প্রায় চার ঘণ্টা পর মেডিকেলের ছাত্রী হিরার মৃতদেহ উদ্ধার হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় পদ্মার পাড়ে। রাত ১০টার দিকে শিবচরের নিজ বাড়িতে হিরার দাফন সম্পন্ন হয়।তিন বোন নৌমন্ত্রীর ভাগ্নি : গতকাল দুপুরে মাওয়ায় উদ্ধার অভিযান পর্যবেক্ষণকালে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘লঞ্চডুবির ঘটনায় কোনো কোনো পরিবারের ১০ জন পর্যন্ত লোক নিখোঁজ হয়েছে। এমনকি আমার খালাতো বোনের তিন মেয়েও লঞ্চে ছিল। শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘লঞ্চটিতে কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে দেড়শ বা ১৬০ জন যাত্রী ওঠে। যদি ওই যাত্রী নিয়ে আসত, তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না। কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে আবার ৮০ থেকে ১০০ জন যাত্রী লঞ্চে উঠানো হয়। এতে সব মিলিয়ে ২৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল ওই লঞ্চে। এর মধ্যে নিখোঁজ যাত্রীর সংখ্যা ১২৫ জন, উদ্ধার হওয়া যাত্রীর সংখ্যা ১১০ জন। আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম, ডুবে যাওয়া লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০ জন হবে।’