শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

তামিম ও মুশফিকের যুগলবন্দিতে রেকর্ড রান

image_211479.tamim bat
সাঈদ আজমল হাহাকার করবেন। জুনাইদ খান লজ্জায় অবনত হবেন। এত সহজ ক্যাচটাই কি না হাত থেকে ফেলে দিলেন জুনাইদ। বোলার আজমল। ফিল্ডার জুনাইদ। আর ব্যাটসম্যান মুশফিক তখন ৩৫ রানে দাঁড়িয়ে। তামিম ইকবাল ছিলেন ৪৭ রানে। রিটার্ন ক্যাচ দিয়েছিলেন। রাখতে পারেননি সাদ নাসিম। বাংলাদেশের ইনিংসের স্থপতি হয়ে ওঠা মুশফিক ও বিপজ্জনক তামিমকে সেবার বিদায় করতে না পারার মাশুল কড়ায় গণ্ডায়ই চুকাতে হয়েছে পাকিস্তানকে। তামিম ইকবালের সাথে ১৭৮ রানের একটা জুটি হয়েছে মুশফিকের। ওই জুটির ভরসাই তামিমকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছে ১৩২ রান। সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকও। ৭৭ বলে ১০৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন মুশফিক। আর বাংলাদেশ টপকে গেছে ওয়ানডেতে তাদের আগের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডকে। সেটি ৩২৬ রানের। গেল বছর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষেই ৩ উইকেটে তা করেছিল টাইগাররা। এবার ৬ উইকেটে করলো ৩২৯ রান। কি মাশুলটাই না দিলো পাকিস্তান!
সৌম্য সরকার আর তামিমের উদ্বোধনী জুটি অনেক ভালো কিছু দিতে পারেনি। কিন্তু যা দিয়েছে তাতে একটা ভালো ভিতই পেয়ে গেছে টাইগাররা। তার চেয়ে বড় কথা ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিতে থাকা তামিম উইকেটে সেট হয়ে গেছেন। ৪৮ রানে একটা শর্ট রান নিতে গিয়ে সৌম্যর ফেরাটা তামিমের বোকামি ছিল কি না তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। সৌম্য ২০ রান করে রান আউট হয়েছেন। এরপর টাইগারদের বিশ্বকাপ হিরো মাহমুদ উল্লাহের সাথে তামিমের জুটিটা চলেছে ঢিমেতালে। একটু হতাশা ছড়াচ্ছিল চার ধারে। দলের ৬৭ রানের সময় ব্যক্তিগত ৫ রানে মাহমুদ উল্লাহ বিদায় নিলে আসেন মুশফিক। সেখান থেকেই লেখা শুরু মুশফিক ও তামিমের অনন্য সাধারণ যুগলবন্দি।
তামিম বিশ্বকাপে একটি ইনিংস খেলেছিলেন নব্বইয়ের ঘরে। বাকিটা সময় ছিলেন ম্রিয়মান। অনেক কথা শুনেছেন। সমালোচনার তীব্র বাণ এসে বিদ্ধ করেছে তাকে। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ যেন জবাব দেবার জন্য বেছে নিলেন তামিম। কিন্তু ৭৫ বলে প্রথম ৫০ দেখে বোঝার উপায় নেই তামিমের আগ্রাসী মনোভাব। তামিম হয়তো তামিমে থেকে ব্যাট করেননি। অনেক রয়ে সয়ে খেলেছেন। মুশফিকের উপস্থিতি তার বিশ্বাসকে করেছে আরো অটল। মুশফিক তার স্বভাবসূলভ দ্রুতগতির ইনিংসই খেলার চেষ্টা করে গেছেন। তাতে সাফল্য আসতে দেখে হয়তো আরো উজ্জীবীত হয়ে থাকবেন তামিম। হারিস সোহেলকে তো এক ওভারের পর পর দুই বলে দুটি ছক্কা মেরে দিলেন। ছেড়ে কথা বললেন না সাঈদ আজমলকেও। আর এভাবেই হয়ে যায় তামিমের ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের বিপক্ষে খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসা তামিম যেন দিলেন একটি ঘোষণা। তিনি ও বাংলাদেশের এই সিরিজে আরো অনেক কিছু দেখানোর আছে। এটাই যেন বলে গেছে তামিমের ইনিংসটি। ১৩৫ বলে ৩টি ছক্কা ও ১৫টি চারের মারে ১৩২ রান তামিমের স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হবার কথাই বলে গেছে।

মুশফিক এসে দলের রানের গতি বাড়িয়েছেন। আত্মবিশ্বাসের বিশ্বাস ছড়িয়েছেন। তামিম ও তার গতিতে হতাশার মাঝে সময় পার করেছে পাকিস্তানের বোলাররা। মুশফিক খুব সহজেই যেন খেলে ফেলছিলেন। রান করছেন। মনে হয়েছে রান করার মতো সহজ কাজ বুঝি হয় না! বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন। সেঞ্চুরি করেছেন বাউন্ডারি মেরেই। মনে হয়েছে কাজগুলো কত সহজ! বলকে কি ফুটবলের মতো দেখছিলেন মুশফিক! বিরতির সময় তামিম বললেন, মুশফিক এসে তার কাজটাকে সহজ করে দিয়েছেন। তার মানে মুশফিক হলেন বাংলাদেশের ইনিংসের প্রাণভোমরা। বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির সন্ধান করে না পেলেও এবার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিটা পেয়ে গেছেন মুশফিক। ৬৯ বলে ১৩টি চার ও ২টি ছক্কায় সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিক। তার ও তামিমের সেঞ্চুরির সাথে যোগ হয়েছে সাকিবের ৩১ ও সাব্বিরের ১৫ রান। তাতে রেকর্ড রানের দেখাই পেয়েছে বাংলাদেশ। ৫৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েও ওয়াহাব রিয়াজ নিশ্চয়ই খুশি হতে পারেননি।

উৎস- কালেরকন্ঠ