বাংলাদেশে সিটি নির্বাচনের আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে যেসব সম্ভাব্য প্রার্থীর নামে প্রচারমূলক বিলবোর্ড-ব্যানার-পোস্টার লাগানো হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পর এগুলো সব নামিয়ে ফেলা হচ্ছে।এ মাসের শুরুতে সরকার ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দেবার পর থেকেই, বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীরা এক ধরণের অনানুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে পড়েন।কিন্তু শুক্রবার রাতের মধ্যেই এ প্রচারণা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচনী আচরনবিধি অনুযায়ী সম্পূর্ণ বেআইনী হওয়ায় বুধবার তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরণের বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোষ্টার খুলে ফেলতে আটচল্লিশ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।কিন্তু তফসিল ঘোষণার আগে থেকে শুরু হওয়া এমন প্রচারণা নিয়ে কি বলছেন ভোটাররা? আর সম্ভাব্য প্রার্থীরাই বা কিভাবে দেখছেন বিষয়টি?সব ধরনের বিলবোর্ড, ব্যানার-পোস্টার নিজ উদ্যোগে নামিয়ে ফেলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।শুক্রবার ঢাকার শাহবাগ, লালবাগ, ফার্মগেট, আজিমপুর, ও মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন মোড়ে লাগানো বিশাল সব বিলবোর্ড ও ব্যানার নামিয়ে ফেলা হচ্ছে।কয়েকটি জায়গায় ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে রঙ্গিন পোষ্টারও। যারা সেগুলো ছিঁড়ছেন কিংবা খুলে নিয়ে যাচ্ছেন, নিজেদের ভাড়া করা রিক্সা কিংবা ভ্যানে করে।বিবিসি’র সঙ্গে তারা কথা বলতে রাজি না হলেও, আশেপাশে থাকা মানুষেরা বলছিলেন তাদের প্রতিক্রিয়ার কথা।“দেশের প্রচলিত আইন মেনে না চললে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব না।”“যারা আইন ভঙ্গ করছেন তাদের মধ্যে সংসদ সদস্যও রয়েছেন, আসলে তারা আইনের তোয়াক্কা করেনা।”“আইন ভঙ্গের এসব উদাহরন বাংলাদেশের জন্য ভালো না।”রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ বড় বিলবোর্ডগুলোতে মেয়র প্রার্থীদের বড় বড় ব্যানার টাঙ্গানো। এদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন, স্বতন্ত্র সাংসদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. সেলিম, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ।এ ছাড়া ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হকও এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন।তবে, প্রাক তফসিল প্রচারণায় দোষের কিছু নেই বলে মনে করেন এই প্রার্থীরা। ঢাকা দক্ষিণের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন বলছেন, বেশিরভাগ বিলবোর্ড তার অনুসারীরা লাগালেও বিষয়টিকে তিনি অন্যায় মনে করেন না।“এই বিলবোর্ডগুলো তফসিল ঘোষণার অনেক আগে নগরবাসীর দোয়া ও সমর্থন আদায়ের উপায় হিসেবে আমাদের অনুসারীরা লাগিয়েছেন। আমার জানামতে, তফসিল ঘোষণার আগে শুভেচ্ছা জানিয়ে এমন বিলবোর্ড লাগালে, সেখানে আইনের লঙ্ঘন হয় না।”সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে, অর্থাৎ নির্বাচনের দিনের একুশ দিন আগে থেকে, ভোট গ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। এর আগে ও পরে প্রচারণা চালানো যাবে না। এ সংক্রান্ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে প্রচলিত আইনে।এদিকে, ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক বলছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশণা মেনে তার বেশির ভাগ বিলবোর্ড নামানো হচ্ছে।“আইন আজ রাত বারোটা থেকে কার্যকর হবে, আমরা চাইনা নির্বাচনের একুশ দিনের আগে আর সেগুলোকে দেখা যাক। তবে, অনেকেই যারা লাগিয়েছেন, আমার অনুমতি নিয়ে লাগায়নি। তবু যাদের চিনি সবাইকে বলছি সেগুলো নামিয়ে ফেলতে।”তবে, এই বিলবোর্ড আর ব্যানার-পোষ্টার নামিয়ে ফেলা যেমন চলছে, তেমনি, ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে জুমা নামাজের পর অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করে হ্যান্ডবিলও করেছেন।ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯শে মার্চ। পয়লা ও দোসরা এপ্রিল মনোনয়ন পত্র বাছাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ই এপ্রিল।