রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার সড়কপথগুলোয় যানজট কমাতে দুই লেনের সড়ককে চার লেনে রূপান্তরের পরিকল্পনা করছে সড়ক বিভাগ। এই সড়কের দুই পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেন রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে তারা। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে ফ্লাইওভার নির্মাণ, প্রশস্ত সড়ক বিভাজক তৈরি এবং নির্বিঘ্ন রাস্তা পারাপারের জন্য আন্ডারপাস ও ফুটওভারপাস নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে বিভাগটির। এ ছাড়া ঢাকার পূর্বাঞ্চলকে বন্যামুক্তকরণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জমি অধিগ্রহণ ও বাঁধ নির্মাণ খরচ বাদেই দুই হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
গত ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব তথ্য জানান সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক। ওই বৈঠকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব ও দপ্তরের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার সড়ক পথ নির্মাণ ও ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক বহুমুখীকরণ প্রকল্পের নকশায় রেললাইন স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার সড়কপথের ওপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তুলে ধরে বৈঠকে সড়ক বিভাগের সচিব জানান, ঢাকা শহরের চারপাশে বৃত্তাকার সড়কপথ-আব্দুল্লাহপুর-ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-বাবুবাজার-সদরঘাট-ফতুল্লা-চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড-শিমরাইল-ডেমরা-পূর্বাচল সড়ক-তেরমুখ পর্যন্ত হবে, যার দৈর্ঘ্য ৯১ কিলোমিটার। প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের অভ্যন্তরে প্রবেশ ও বহির্গমন পথ যানজট মুক্তকরণ, সড়কের সুষম ব্যবহারের মাধ্যমে যানজট নিরসন, রেডিয়াল কানেকশনের মাধ্যমে যাতায়াত সহজ করা, ঢাকার পূর্বাঞ্চলকে বন্যামুক্তকরণ, পানি নিষ্কাশনের সুবিধা রাখা, খাসজমিতে বিনোদন পার্ক স্থাপন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বনায়ন এবং সড়ক বিভাজক ব্যবহার করে ভবিষ্যতে এলিভেটেড মেট্রোরেল বা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে।
ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক বহুমুখী প্রকল্প সম্পর্কে বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া জানান, ঢাকা মহানগরীর পশ্চিম অংশ সুরক্ষিত হলেও পূর্বাংশ অরক্ষিত। বিভিন্ন সময়ে বন্যায় পূর্বের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক বহুমুখীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ২০০১ সালে সেনাবাহিনী বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করেছিল। পরে বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি আর এগোয়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আগেও বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেছে। ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক বহুমুখী প্রকল্পের কার্যক্রম আবার শুরু হলে সেনাবাহিনী এ ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।
সেনাবাহিনীর পক্ষে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করে সেনাপ্রধান বলেন, এ প্রকল্পের কিছু কাজ আগেও করা হয়েছে। কিন্তু অর্থায়ন ও দিক-নির্দেশনার অভাবে প্রকল্পটির কার্যক্রম থেমে যায়। সর্বশেষ গত ২৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবদুস সোবহান সিকদার এ বিষয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেন। এতে একটি নতুন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিসহ ১৫ সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। বৃত্তাকার সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রস্তুত, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ড্যাপের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প বাস্তবায়ন। এ সময় ইস্টার্ন বাসপাইস সড়ক বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু সুপারিশ করেন তিনি।
পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সভায় বলেন, ইস্টার্ন বাইপাস প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের দরকার হবে। আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি জনগণকে পুনর্বাসনও করতে হবে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবদুস সোবহান সিকদারকে সমন্বয়কারী ও একই কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদকে যুগ্ম সমন্বয়কারী করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীদের নিয়ে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌ ও সড়কপথ নির্মাণকাজের সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।