পড়ন্ত বিকাল। পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। কিন্তু রোদ্রের প্রখরতা তখনো কমেনি। সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। সব কিছু উপেক্ষা করে গতকাল মানিক মিয়া এভিনিউয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন হাজার হাজার জনতা। মাইলসের গানের তালে তালে গা দুলাচ্ছে সবাই। কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ৫টায় গান থামিয়ে মাইকে ঘোষণা, এক এক করে মঞ্চে উঠছেন, মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা।ঘোষণা শেষ হতে না হতেই জনতার গগনবিদারী চিৎকার, ‘টাইগার, টাইগার’। এক এক করে ক্রিকেটাররা মঞ্চে উঠছেন, সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের নামে স্লোগানে স্লোগানে কেঁপে উঠছে সংসদ ভবন এলাকা। শুরু হয়েছিল শফিউল ইসলাম সুহাসকে দিয়ে, সব শেষে মঞ্চে উঠলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সাকিব আইপিএল খেলতে ভারতে থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। সাব্বির রহমানের বাবা অসুস্থ, তাই তিনিও থাকতে পারেননি। এ ছাড়া বাকি সব ক্রিকেটারই উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।একে একে বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, বরণ করে নেন মাশরাফিদের। সবশেষে টাইগারদের ফুলেল অর্ভ্যথনা দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাশরাফি বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। ইনজুরির পরও আমার ওপর আস্থা হারায়নি, এজন্য আমি বিসিবিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। বিসিবি আমাদেরকে বিশ্বকাপ শুরুর ২০ দিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে গিয়েছিল বলেই বিশ্বকাপে আমরা ভালো করতে পেরেছি।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মাশরাফি বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমরা সব ম্যাচ জিততে পারিনি। কিন্তু উনি প্রতিটি ম্যাচের পর সব ক্রিকেটাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের সাহস দিয়েছেন। আশা করি, তিনি সব সময় আমাদের পাশে থাকবেন।’ সতীর্থ ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জানি, সবাই হয়তো সব ম্যাচে ভালো করতে পারেনি। কিন্তু সবাই আমরা একসঙ্গে চেষ্টা করেছি। যে কারণেই আমাদের এই সাফল্য। সবাইকে ধন্যবাদ।’ দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সব সময় ক্রিকেটের পাশে ছিলেন। আমার ভালো ও খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আশা করি সামনেও ক্রিকেটের পাশে থাকবেন। কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ। দোয়া করবেন, আমরা যেন ভালো করতে পারি। আমাদের চেষ্টা থাকবে আপনাদের খুশি করার জন্যই যাতে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারি।’ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা যখন কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পেরেছি সামনে এক নম্বরেও (চ্যাম্পিয়ন) যেতে পারব। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’ এমপি ও সংসদের পক্ষ থেকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, ‘আমি ক্রিকেটের এই সাফল্যে অভিভূত। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠায় জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে ক্রিকেটার ও টিম ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অভিনন্দন জানাই।’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল ‘নেমেসিস’ ব্যান্ডের সুরের মূর্ছনার মধ্য দিয়ে। তারপর একে একে গান পরিবেশন করেছে ‘ক্রিপটিক ফেইট’, মাইলস, অর্থহীন, ওয়ারফেস প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে আতশবাজির আভায় বর্ণিল হয়ে উঠেছিল সংসদভবন চত্বর।