লর্ডস, ট্রেন্টব্রিজ, ওয়াংখেদ, সিংহলীজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডসগুলোর মতো পরিচিত মুখ নয় কিংসটাউন স্টেডিয়ামটি। তবে উত্তাল আটলান্টিক মহাসাগর এবং শান্ত ক্যারিবীয় উপসাগরের তীরঘেঁষে ও উঁচু-নিচু পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেডিয়ামটির সৌন্দর্য্য কিন্তু মন জুড়িয়ে দেয়। প্রশান্তি এনে দেয় দেহমনে। প্রকৃতি তার কৃপণতাকে পাশ কাটিয়ে দু’হাত উজার করে দিয়েছে সেন্ট ভিনসেন্ট দ্বীপকে। রুক্ষ পাহাড় আর সবুজের মিশেলের সেন্ট ভিনসেন্ট ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের যে কোনোটির চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে সৌন্দর্য্যরে মাপকাঠিতে। সেই সেন্ট ভিনসেন্টে আজ প্রথম টেস্ট খেলতে নামছেন মুশফিকুর রহিমরা। কিংসটাউনের সবুজ ঘাসে অবশ্য এই প্রথম খেলছে না টাইগাররা। পাঁচ বছর আগে, ২০০৯ সালে এখানে প্রথম টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের নান্দনিক সেঞ্চুরিতে ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়েছিল হাসিমুখে। সুখস্মৃতির সেই কিংসটাউনে পাঁচ বছর পর ফের নামছেন মুশফিকরা। টানা হারে ছন্দহীন মুশফিকরা এবার জয় নয়, নিজেদের ফিরে পেতেই উদগ্রীব।পাঁচ বছর আগে টাইগাররা যখন প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল কিংসটাউনে, ‘আন্ডার ডগ’ ছিল তখন। এবারও নামছে আন্ডারডগ। যদিও টেস্টে নামার আগে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ড্র করেছে মুশফিকবাহিনী। সেঞ্চুরি করেছেন অধিনায়ক মুশফিক ও নাসির হোসেন। ড্রয়ে ফিরেছে কিছুটা আত্মবিশ্বাস। সেটাকে পুঁজি করেই স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নামছে বাংলাদেশ। অবশ্য ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এবং টানা ১২ ওয়ানডে হারের ধাক্কায় বেসামাল টাইগাররা। সেই ভঙ্গুর মানসিকতাও থাকছে অবশ্য এই টেস্টের সঙ্গী। টানা হারের ধাক্কা সামলে ভালো খেলাটা কঠিন; ভালোই জানেন টাইগার অধিনায়ক। তারপরও টেস্ট সিরিজে ড্রয়ের লক্ষ্যেই টার্গেটে নামছেন কিংসটাউনে, ‘গত কয়েক মাস আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি না। তবে আমি বিশ্বাস করি আমাদের ভালো খেলার সামর্থ্য রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি টেস্টে ড্র করা আমাদের পক্ষে সম্ভব।’ কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহেরও টার্গেট ড্র, ‘আমার সত্যিকারের টার্গেট ড্র। যদি আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারি, তাহলে ম্যাচে টিকে থাকতে পারব। কেননা আমাদের বোলিং স্টক লিমিটেড। তাই আমাদের দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করতে হবে।’ ড্রয়ের স্বপ্ন দেখা অতিরঞ্জিতও নয় মুশফিকের জন্য। ইতিহাসও মুশফিকদের কথা বলে। ২০০৪ ও ২০০৯ সালে বাংলাদেশ দুটি সিরিজ খেলেছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। ১০ বছর আগে, ২০০৪ সালে গ্রস আইলেটে টেস্ট ড্র করেছিল টাইগাররা অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক ও খালেদ মাসুদ পাইলটের সেঞ্চুরিতে। রফিক সেঞ্চুরি করেছিলেন ৯ নম্বরে ব্যাটিং করে। যা টেস্ট ক্রিকেটে এখনও রেকর্ড। পরের টেস্ট অবশ্য হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। রামনারেশ সারওয়ান খেলেছিলেন অতিমানবীয় ২৬১* রানের ইনিংস। তবে ওই বছরই কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। ১৪৪ রানের মামুলী স্কোর নিয়ে লড়াই করে হেরেছিল ১ উইকেটে। ২০০৯ সালে দুই টেস্টেই স্বাগতিকদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ। করেছিল হোয়াইটওয়াশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওটাই বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র টেস্ট সিরিজ জয়। এছাড়া দেশের বাইরেও প্রথম সিরিজ জয়। ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশের প্র্রথমটিই ছিল এই কিংসটাউনেই। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন বাঁ হাতি ওপেনার তামিম। খেলেছিলেন ১২৮ রানের ইনিংস। ওই ইনিংসেই বাংলাদেশ জিতেছিল ৯৫ রানে। ওই টেস্টে অভিষেক হয়েছিল মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল হোসেনের। টেস্ট জয়ের পিছনে অবদান রেখেছিলেন রিয়াদ ৮ উইকেট নিয়ে। ওই টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার। কিন্তু ৬.৩ ওভার বোলিং করার পরই আহত হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন মাশরাফি। তার জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেন সাকিব আল হাসান। এরপর তো বাকি সব ইতিহাস। সাকিবের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচটি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। দুটি আবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। ঘরের মাঠ থেকেই বাইরেই পারফরম্যান্স ভালো টাইগারদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে চার টেস্ট খেলে হেসেছে দুটিতে। একটি ড্র এবং অপরটিতে হার। তাই অতীত রেকর্ডসকে পুঁজি করে এখন ড্র কিংবা অন্য কিছুর স্বপ্ন দেখতেই পারেন মুশফিকরা।