শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

জার্গেনসেন অধ্যায় শেষ

22091_s1

অবশেষে জার্গেনসেনের বাংলাদেশ অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। গতকাল ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র গতকালের জরুরি সভার আগে এক বৈঠকে বোর্ড সভাপতি জার্গেনসেনকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তুজার্গেনসেন বোর্ড প্রধানের সেই অনুরোধ ফিরিয়ে  দেন। পরে সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘আমি এই প্রস্তাবের জন্য বোর্ড সভাপতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। কিন্তু আমি আর কোচ হিসেবে থাকতে চাইছি না। আমি আমার পদত্যাগের বিষয়ে অটল আছি। তবে বাংলাদেশের ভারত সফর পর্যন্ত থাকবো কিনা সেই প্রস্তাব নিয়ে এখনও চিন্তা করছি।’ কিন্তুতাকে আর না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বোর্ড সভায়। যে কারণে গতকালই ছিল শেনের বাংলাদেশের সঙ্গে শেষ দিন। বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘আমরা তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশে ভারত সফরের সময় কোন দেশী কোচ অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। তবে আশা করি এর আগেই আমরা বিদেশী কোচ পেয়ে যাব।’ শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে প্রধান কোচের প্রস্তাব নিয়ে পাঁচ থেকে ছয় জন বিদেশী হাই প্রোফাইল কোচের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন বোর্ড সভাপতি। তবে তিনি কোচের নাম প্রকাশ করতে চাননি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে।
গতকাল বিসিবি’র জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল দুপুর  সাড়ে ১২টায়। আর তার আগেই প্রধান কোচের সঙ্গে তার পদত্যাগপত্র নিয়ে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আলোচনায় বসার কথা ছিল ১২টায়। তবে বোর্ড সভাপতি ও প্রধান কোচের সেই বৈঠক শুরু হয় দুপুর ১টার পর। তবে খুব বেশি সময় তাদের সেই আলোচনা স্থায়ী হয়নি। সভাপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে শেন কথা বলেন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে। তার পদত্যাগের অন্যতম কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাঠের কিছু ঘটনাতো আছেই, তার ওপর আমি দীর্ঘদিন পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন। আর এখন নতুন চাকরির অফারগুলো আমার দেশের কাছাকাছি। এতে করে আমার পরিবারকে আমি সময় দিতে পারবো। যদিও আমি এখনও সেই অফারগুলো নিশ্চিত করিনি।’ জার্গেনসেন বলেন, ‘আমি আমার পদত্যাগে অটল। আমাকে বোর্ড অনুরোধ করেছিল। কিন্তু এখন আর আমার পক্ষে এই দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি ভারত সফর পর্যন্ত থাকবো কি-না সেই প্রস্তাবের কথাই চিন্তা করছি।’
অন্যদিকে বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বোর্ড সভায় আজ ২টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল। একটা ছিল কোচ ইস্যু আর অন্যটা ছিল মিডিয়া রাইটস। এছাড়া ছোটখাটো আরও কিছু ইস্যু ছিল। আপনারা জানেন যে, কোচ জার্গেনসেন ইতিমধ্যেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে। তার সঙ্গে আমি আজ লম্বা বৈঠক করি। তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমি চেষ্টা করছিলাম হঠাৎ করে তার পদত্যাগের কারণ বের করতে। তার সঙ্গে কথা বলে আমি বুঝলাম ৬ বছর ধরে বাড়ির বাইরে রয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ির কাছে আশে পাশে কোথাও যদি একটা ভাল অফার পান সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া দলের পারফরমেন্সটাও ভাল যাচ্ছে না। যদিও তার সঙ্গে আমাদের অনেক সফলতাও ছিল। তবে সব কিছু থেকে আমাদের মনে হয়েছে যদি তাকে ছেড়েই দেয়া হয় তবে এখনই দেয়াটা ভাল। তাড়াতাড়ি হওয়াটাই ভাল। যেহেতু সে চলে যাবে তাই কিছুদিনের জন্য থাকলে সেটা দলের জন্যও ভাল হবে না। আমি বোর্ডে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিলাম।’
নতুন কোচ খুঁজতে স্পেশাল কমিটি
জার্গেনসেনের অধ্যায় শেষ হতেই রব উঠেছে নতুন কোচ নিয়ে। তবে নতুন কোচ  খোঁজা এরই মধ্যে শুরু হয়ে  গেছে বলেও নিশ্চিত করেছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। শুধু তাই নয়, তিনি কোচ খুঁজে বের করতে একটি স্পেশাল কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন কোচ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি।  সেজন্য একটি কমিটিও করে দিয়েছি- স্পেশাল কমিটি, যারা নাকি নতুন কোচ ও কোচিং স্টাফ খুঁজে বের করার  ব্যাপারে কাজ করবেন। কমিটিতে আছেন মাহবুবুল আনাম, আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন, জালাল ইউনুস। আশা করি শিগগিরই নতুন কোচ পেয়ে যাব। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পর থেকে আমরা কেউই বসে নেই। কোচ খুঁজছিলাম, আমরা কথা বলছি বাইরে। যদি পেয়ে যাই ভাল। আর যদি না পাই তবে লোকাল কাউকে দায়িত্ব দিয়ে ভারত সফরটা শেষ করবো।’
বাংলাদেশে কোচ আসে যায়। ১৯৯০ সাল থেকে এই পর্যন্ত ১২ জন কোচ বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মধ্যে জার্গেনসেন ছিলেন ১২ নম্বর। প্রথমে দলের বোলিং কোচ হিসেবে ২০১১ সালে স্টুয়ার্ট ল’য়ের সময় এই কোচ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে যাত্রা শুরু করেন। এরপর ২০১৩ সালে তিনি প্রধান কোচের দায়িত্ব পান। এই সময়ের মধ্যে আরেক জন রিচার্ড পাইবাসও বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করে গেছেন ২০১২ সালে। এই ১২ জন কোচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কোচিংয়ে সময় কাটিয়েছেন একমাত্র ডেভ হোয়াটমোর। তার সময় ছিল ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত।
বাংলাদেশের বিদেশী কোচরা:
কোচ     দেশ     দায়িত্বকাল
মুদাসসর নজর     পাকিস্তান     ১৯৯০
মহিন্দর অমরনাথ    ভারত    ১৯৯৪
গর্ডন গ্রিনিজ     ও.ইন্ডিজ     ১৯৯৭-১৯৯৯
এডি বারলো    ইংল্যান্ড     ১৯৯৯-২০০০
ট্রেভর চ্যাপেল     অস্ট্রেলিয়া     ২০০১-২০০২
মহসিন কামাল    পাকিস্তান    ২০০২-২০০৩
ডেভ হোয়াটমোর    অস্ট্রেলিয়া     ২০০৩-২০০৭
শন উইলিয়ামস    অস্ট্রেলিয়া    ২০০৭
জেমি সিডন্স     অস্ট্রেলিয়া     ২০০৭-২০১১
স্টুয়ার্ট ’ল     অস্ট্রেলিয়া     ২০১১-২০১২
রিচার্ড পাইবাস    ইংল্যান্ড     ২০১২
শেন জার্গেনসেন     অস্ট্রেলিয়া     ২০১২-২০১৪।

 

উৎস- মানবজমিন