দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বৈধতা প্রশ্নে আদালতে মতামত দিতে গিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যামিকাস কিউরি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার ছাড়া সংবিধানের আর কোনো ব্যাখা হতে পারে না। জনগণকে ভোটের অধিকার দিতে হবে। নির্বাচন হচ্ছে জনগণের পছন্দের অধিকার। জনগণকে সেই অধিকার অবশ্যই দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার নিয়োগপ্রাপ্ত সাত অ্যামিচি কিউরির মধ্যে ড. কামাল হোসেন হাইকোর্টে এ বিষয়ে তার মতামত উপস্থাপন করেন। এ বিষয়ে আগামী বুধবার তিনি তার বক্তব্যের সমাপ্তি টানবেন।সংবিধানা বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ এই আইনজ্ঞ বলেন, দশম সংসদে ১৫৪ আসনে ভোট হয়নি এটি উদ্বেগজনক। আমরা শান্তি এবং শৃঙ্খলা চাই। কিন্তু সেটি হতে হবে সংবিধানের মধ্যে থেকেই। গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এটি সাংবিধানিক অনুপ্রেরণার মূল ভিত্তি।ড. কামাল বলেন, গণতন্ত্রই সংবিধানের মূল ভিত্তি। যে ১৫৪ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলা হয়, তারা আসলেই ওই পদে থাকার অযোগ্য।ভবিষ্যতের প্রয়োজনে আমাদের সংবিধানের ভুল-ভ্রান্তি এখনই ঠিক করতে হবে বলেও ড. কামাল হোসেন আদালতে তার জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন।সংসদীয় আসনে একক প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার বৈধতা নিয়ে মতামত জানতে গত ১২ মার্চ সাতজনকে অ্যামিচি কিউরি নিয়োগ দেন হাইকোর্ট।বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের এক রিট আবেদনের পূর্ণাঙ্গ শুনানি নিয়ে ওই দিন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদেরকে নিয়োগ দেন।
ড. কামাল হোসেন ছাড়াও নিয়োগপ্রাপ্ত বাকি অ্যামিচি কিউরিরা হলেন- ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুজন’ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস সালাম রিট আবেদনটি করেন।রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সংসদীয় আসনে একক প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার বিধান সংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ১৯ ধারা কেন সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইনসচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তবে ১২ মার্চ পর্যন্ত ওই রুলের জবাব না দিলেও পূর্ণাঙ্গ শুনানিতে অ্যামিচি কিউরি নিয়োগ দেন আদালত।৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে যাচাই-বাছাই ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ১৫৪ আসনে এককপ্রার্থী থাকায় তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।