Wednesday, January 22Welcome khabarica24 Online

চট্টগ্রামে বাংলাদেশের অগ্নিপরীক্ষা

52ed5af71ace3-Untitled-23

বিমানবন্দরে তখনো নামেনি দুই দল। তার আগেই বিমানবন্দর সড়ক থেকে উধাও সাধারণ যানবাহন। একপর্যায়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমানবন্দর থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত ভিআইপি সড়কের সব যানবাহন চলাচল। এর প্রভাব পড়ে পুরো শহরের সড়ক-উপসড়কে। যানজটে বিরক্ত কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেন, কে এমন ভিআইপি যে মূল সড়ক বন্ধ রাখতে হবে?ক্রিকেটাররা আসছেন শোনার পর কেউ কেউ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ‘ডাংগুলি’ শব্দটিও উচ্চারণ করতে ছাড়েননি, ‘ঢাকায় গো-হারার পর এখানে এসে ভিআইপি মর্যাদা!’এমন তাচ্ছিল্যভরা কথা কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল পেনিনসুলা হোটেলের অদূরে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষের মুখে। নিজেদের দেশ আর দলের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই মানুষের মুখে এই কথা আসে। সে যা-ই হোক, চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট সিরিজ ঘিরে রাখা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তার বর্মে। ঢাকা টেস্টে নাস্তানাবুদ বাংলাদেশ দলের জন্য এই নিরাপত্তা যতটা নয়, তার চেয়ে ঢের বেশি অতিথি শ্রীলঙ্কার জন্য। এই কঠোর নিরাপত্তা একটি পরীক্ষাও বটে। শ্রীলঙ্কার পর আগামী মাসে এই শহরে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। তারই আগাম মহড়া হয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে ঘিরে।তবে চট্টগ্রামে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে মাস দেড়েক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুব দল সিরিজের মাঝপথে দেশত্যাগ করায়। সেটি শোনালেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মনজুর মোরশেদ, ‘আগ্রাবাদ হোটেলের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেশত্যাগের ঘটনার পর এবার আমরা বেশি সতর্ক। এ জন্য প্রায় প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদার নিরাপত্তা পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। তা ছাড়া সামনে বিশ্বকাপ। সবকিছু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের হুইসেলের মধ্য দিয়ে বিকেল পাঁচটার পর হোটেলে পৌঁছায় দুই দল। প্রথমে সস্ত্রীক সাকিব আল হাসান। এর পর ঘরের ছেলে তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। কথা বলা দূরে থাক, খেলোয়াড়দের কাছাকাছি যাওয়াটাই ছিল দুরূহ।একটি কঠিন সময়ে বন্দরনগরে পা রাখল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। একদিকে ঢাকা টেস্টের দুঃসহ হার পেছনে ফেলে চট্টগ্রামে নিজেদের ফিরে পাওয়ার অগ্নিপরীক্ষা, অন্যদিকে টেস্ট মর্যাদা নিয়ে শঙ্কা। দুটো পরীক্ষার জবাবই যে ব্যাটে বলে দিতে হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত কতটা সম্ভব হবে তা সময় বলে দেবে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্ট শেষে হবে দুটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচও।তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য অতীতের সুখস্মৃতি প্রেরণা জোগাতে পারে মুশফিকদের। গত অক্টোবরে এখানে হওয়া সর্বশেষ টেস্টে দাপটের সঙ্গে খেলেই নিউজিল্যান্ডকে ড্র করতে বাধ্য করেছে বাংলাদেশ। মুমিনুল হকের ১৮১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসের পাশে সোহাগ গাজী তো গড়লেন ইতিহাস। প্রথমে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে থাকলেন অপরাজিত (১০১*), পরে হ্যাটট্রিকসহ এক ইনিংসে ৬ উইকেট (ম্যাচে ৮ উইকেট) নিলেন তাঁর অফ স্পিনে। ১৩৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে একই ম্যাচে সেঞ্চুরির সঙ্গে হ্যাটট্রিক করতে পারেননি আর কেউ।এসব সুখ-জাগানিয়া স্মৃতির ভেলায় ভাসতে ভাসতে যদি অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় মুশফিকের দল, তাহলে কে বলতে পারে তাচ্ছিল্যভরা এই কণ্ঠগুলো থেকেই উঠবে না ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ ধ্বনি!