চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।উপজেলার সাদনপুর ইউনিয়নের লটকন পাহাড় এলাকায় শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। সেখানে পাহাড়ে গরু-মুরগির খামারের আড়ালে এই আস্তানা গড়ে তোলা হয়।র্যাব জানিয়েছে, অভিযানে তিনটি একে-২২ রাইফেল, ছয়টি পিস্তল, একটি ম্যাগনাম রিভলবার, ও তিনটি এলজি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া পিস্তলের নয়টি ম্যাগজিন, একে ২২ রাইফেলের ছয়টি ম্যাগজিন (৭৫১টি গুলি), .২২ গুলি ৪৩৮টি, .৩২ রিভলবারের গুলি ১৫টি, শর্টগানের গুলি ২৯৩টি ছাড়াও ১৬৬টি বিভিন্ন ধরণের গুলির খালি কেস উদ্ধার করা হয়েছে। এসব আগ্নোয়াস্ত্রের বাইরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার, ওয়্যারলেস সেট, আর্মি বুট, জঙ্গলে চলাফেরার বুট, টর্চলাইট, বক্সিং গ্লাভস, ট্রাকস্যুট, কম্বলসহ প্রশিক্ষণের নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।গ্রেপ্তাররা হলেন- আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, হাবিবুর রহমান, আমির হোসেন ও মোবাশ্বের হোসেন। এদের সবার বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সেখানে নিয়মিত জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। সামরিক কায়দায় গড়ে তোলা হয় ফায়ারিং জোন। গুলির প্রশিক্ষণের জন্য একে-২২ রাইফেল, রিভলবার, পিস্তল, এলজিসহ নানা আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ছিল সেখানে।র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ বলেন, জঙ্গি সন্দেহে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী থেকে গ্রেফতার ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই আস্তানার খবর জানা যায়। এখানে খামারের আড়ালে পাহাড়ের বিশাল এলাকায় আস্তানা গেড়ে সেখানে নিয়মিত ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণ’ দেওয়া হতো। বিভিন্ন এলাকা থেকে দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের এনে প্রথমে তাদের আরবি ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয় শেখানো হতো। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর হামলার দৃশ্য দেখিয়ে ‘মুসলমাদের মুক্তির’ জন্য জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা হতো। সেখানে অস্ত্র চালনা ও গেরিলা প্রশিক্ষণ, এমনকি বিমান ছিনতাইয়েরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।স্থানীয়রা জানান, সাধনপুরের মূল রাস্তা থেকে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে আসতে হয় এই আস্তানায়। মূলত ২০১০ সালে পাহাড়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আওতায় আসার পর সেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত দৃশ্যত বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯১ সালের ঝড়ের পর বাঁশখালীর ছনুয়া থেকে এসে এখানে বসতি গাড়েন মাওলানা মোবারক। মাওলানা আজিজ নামে আরেকজনকে নিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে ১২০ শতক জমি কিনে গরু, মুরগি ও ভেড়ার খামার করেছিলেন তিনি। রাতে ওই এলাকায় প্রায়ই গুলির আওয়াজ শোনা যেত।