জয়, শব্দটি এখন যেন বাংলাদেশ দলের জন্য সোনার হরিণ। চলতি বছরের শুরু থেকে ৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে মুশফিকুর রহীম বাহিনী। কিন্তুসবগুলো ম্যাচে শুধুই পরাজয়ের লজ্জা। ঘরের মাঠে টাইগারদের এমন পতনে উঠে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। দলে আসে বেশ পরিবর্তন। আজ আবারও নতুন চ্যালেঞ্জ মুখোমুখি বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় দ্বীপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে লড়াই। তার আগে সর্বত্র প্রশ্ন আর শঙ্কা পারবেতো বাংলাদেশ? ভাঙতে পারবেতো পরাজয়ের গণ্ডি! এমন শঙ্কা আর প্রশ্নের বোঝা নিয়ে বিদেশের মাটিতে এই সিরিজকে সহজেই বলা যায় ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন। আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে গ্রেনাডার ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের ক্রিকেট পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বাংলাদেশকে এখনও ছোট বলেই অভিহিত করতে হবে। তবে দু’দেশের পরিসংখ্যান বলেও খুব বেশী পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। কারণ যে ক’টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পরিসংখ্যান ভারী তার মধ্যে অন্যতম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশেষ করে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবীয়দের ওয়ানডে ও টেস্টে দু’টি সিরিজেই হোয়াইট ওয়াশ করে। ঠিক ৬ বছর পর আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ দলের লড়াই। তাই আজ এই লড়াইয়ে বাংলাদেশের অন্যতম পুঁজি সেই সময়ের স্মৃতি। অন্যদিকে নতুন কোচ চণ্ডীকা হাথুরুসিংহের এটি প্রথম মিশন। এখন অপেক্ষা কতটা সফলতা বয়ে আনতে পারে তার নতুন কোচিং দর্শন।
গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজে দলের সফরসঙ্গী ম্যানেজার ও সহযোগী নির্বাচক হাবিবুল বাশার মুঠোফোনে মানবজমিন’কে ভাল লড়াইয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘দলের সবাই সুস্থ আছে। লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত সবাই। আশা করি ভাল করার জন্যই সবাই মাঠে নামবে।’ তার এই ভাল খেলার আশাবাদের অন্যতম কারণ দলের বেশ কয়েকজন অফ ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান প্রস্ততি ম্যাচে রানে ফিরেছেন। দেশের মাটিতে দু’টি প্রস্তুুতি ম্যাচে রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল অফ ফর্মে থাকা তামিম ইকবালের ব্যাট। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গ্রেনাডা একাদশের বিপক্ষে ৯১ রান করে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়েছে দলের। রানে ফিরেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেনও। সেই সঙ্গে দলের বোলাররাও প্রস্ততি ম্যাচে নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন। বিশেষ করে তিন পেসার মাশরাফি বিন মতুর্জা, আল আমিন হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী আবদুর রাজ্জাকও দু’টি উইকেট নিয়েছেন প্রস্ততি ম্যাচে। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দল কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘আমরা আসলে কাল (আজ) উইকেট দেখেই কেমন দল হবে তা ঠিক করবো। উইকেট না দেখে দলের বিষয়ে তেমন কিছুই বলা যাচ্ছে না।’ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি পেসারদের জন্য স্বর্গরাজ্য। আর তাই দলে পেসারদের আধিক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাশার বলেন, ‘প্রস্ততি ম্যাচে পেসারদের সঙ্গে স্পিনাররাও ভাল করেছে। আমরা আজ (গতকাল) বিকালে অনুশীলন করবো। আর ঠিক করেছি উইকেট না দেখে কোন সিদ্ধান্ত না নেয়ার।’ তবে তিন পেসার নিয়ে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশ দলের আর তা হলে বিদেশের মাটিতে তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ প্রথম খেলার সুযোগ পবেন।’২০০৯ সালে মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল সফরে গেলেও সেখানেই তিনি ইনজুরিতে পড়েন। এরপর তার পরিবর্তে দলের নেতৃত্ব দেন সাকিব আল হাসান। সাকিব সেই সিরিজে জয়ের নায়কের ভূমিকা পালন করেন। তার সঙ্গে জয়ের নায়ক ছিলেন তামিম ইকবালও। তবে এবার সাকিব আল হাসান দলের সঙ্গে নেই। তাকে বিসিবি ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু আছেন তামিম। তার সঙ্গে দলের ব্যাটিং ভরসা হিসেবে আছেন দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। তিনি এখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪১৫ রান সংগ্রহকারী। এছাড়াও দলের ওপেনিংয়ে আরেক ভরসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান এনামুল হক বিজয়ও। ওয়ান ডাউনে দেখা যেতে পারে ইমরুল কায়েসকে। আছেন দলের সঙ্গে তরুণ ব্যাটিং ভরসা মুমিনুল হক সৌরভ ও মো. মিঠুনও। দেশ ছাড়ার আগে প্রধান কোচ নিজের মূল শক্তি হিসেবে এই ব্যাটিংকে এগিয়ে রেখেছিলেন। এখন দেখার বিষয় ব্যাটসম্যানদের উপর কোচের আস্থা কতটা বাস্তবে রূপ নেয়।বাংলাদেশ ওয়ানডে দলমুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, এনামুল হক, মুমিনুল হক, শামসুর রহমান, রুবেল হোসেন, নাসির হোসেন, মাহমুদুল্লাহ, মোহাম্মদ মিঠুন, আব্দুর রাজ্জাক, মাশরাফি মুর্তজা, সোহাগ গাজী, তাসকিন আহমেদ, ইমরুল কায়েস, আল-আমিন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে দলডোয়েইন ব্রাভো (অধিনায়ক), ড্যারেন ব্রাভো, ক্রিস গেইল, কার্ক এডওয়ার্ডস, নিকিতা মিলার, সুনিল নারাইন, কাইরন পোলার্ড, দিনেশ রামদিন, রবি রামপাল, ড্যারেন সামি, লেন্ডল সিমন্স, জেসন হোল্ডার, কেমার রোচ।