লক্ষ্য একটাই ঘুরে দাঁড়ানো। দেশের মাটিতে গত ৮ মাসে যা হয়নি এবার সেই সুযোগ বিদেশের মাটিতে। বিধ্বস্ত বাংলাদেশের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ও স্বপ্ন এখন ক্যারিবীয় মিশন। বুধবার রাতেই সেই স্বপ্ন নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ উড়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। আর গতকালই পৌঁছে গেছে ক্যারিবীয় দ্বীপ গ্রানাডাতে। সেখানে আজ থেকে বাংলাদেশ মূল মিশনের প্রস্তুতিতে নামবে। ১৫ই আগস্ট একটি একদিনের অনুশীলন ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। এরপর ১৮ ও ১৯শে আগস্ট অনুশীলন শেষে ২০শে আগস্ট প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আর এই ম্যাচ দিয়েই শুরু বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনও। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি অনুষ্ঠিত হবে গ্রানাডাতে। তবে শেষ ম্যাচটির জন্য উড়তে হবে আরেক দ্বীপ দেশ সেন্ট কিডসে। সব ব্যর্থতার গ্লানি ঝেড়ে ফেলে নতুন আলোর মিশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাচ্ছেন মুশফিকরা। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩৭ দিনের এই সফরে ৩টি ওয়ানডে, একটি টি-টোয়েন্টি এবং ২টি টেস্ট ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। যাওয়ার আগে ক্রিকেটাররা বিমানবন্দরে রেখে গেছেন আত্মবিশ্বাস ও আনন্দের সেলফি। শেষ পর্যন্ত ফিরার সময় সেই আনন্দের সেলফি দিয়ে দেশে ফেরাটাই এখন ক্রিকেটারদের একমাত্র চাওয়া। বিশেষ করে জাতীয় দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলেছেন- ‘লক্ষ্য একটাই, ভাল ও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলা। তাহলে যে কোন দেশের বিপক্ষে জয় সম্ভব।’ অন্যদিকে তাসকিন আহমেদ ও আল আমিন হোসেন বলেছেন, সেরাটা দেয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
২০০৯ সালে শেষ বার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছেন জাতীয় দল। দীর্ঘ ৫ বছর পর আবারও ক্যারিবীয় সফরে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দলের স্বপ্ন সেই সময়ের অসাধারণ প্রাপ্তির স্মৃতি। ঐ সফর বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মধুর এক অধ্যায় হয়েই রয়েছে। সেবারে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছিল টাইগাররা। সফরের শুরুর দিকে মাশরাফি ইনজুরিতে পড়ায় নেতৃত্বের ভার পড়েছিল সাকিব আল হাসানের ওপর। সাকিবের নেতৃত্বে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে ওই একবারই টেস্ট সিরিজ জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সাকিব আল হাসান ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ। তাই তার এই সফরে আর যাওয়া হলো না। তবে সেই সফরের আলো ছড়ানো আরেক ক্রিকেটার তামিম ইকবাল আছেন দলে। যদিও ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খুব বাজে সময় পার করছেন তিনি। তবে প্রায় ৪ বছর পর জাতীয় দলের সঙ্গে বিদেশ সফর করছেন আরেক তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা। আছেন দলের তরুণ পেস ভরসা তাসকিন আহমেদ ও আল আমিন হোসেন। যাওয়ার আগে সবাই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
২০১৪ সালটি যেন বাংলাদেশের জন্য অপয়া হয়েই এসেছিল। মোটেও সময়টা ভালো কাটছে না বাংলাদেশ ক্রিকেটের সময়। একের পর এক ব্যর্থতাই কেবল উপহার দিয়েছে জাতীয় দল। তবে নতুন কোচ হাথুরুসিংহের তত্ত্বাবধানে গত দেড় মাস কঠোর অনুশীলন করেছেন মুশফিকরা। টেস্ট ও ওয়ানডের প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের মধ্যে ২টি অনুশীলন ম্যাচও খেলেছেন তারা। সেখানে ভালোই পারফরমেন্স করেছেন ব্যাটসম্যান ও পেসাররা। শিষ্যদের অনুশীলন দেখার পর কোচ হাথুরুসিংহে আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলেছেন, এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সব ফরম্যাটের সিরিজেই জিততে চান তিনি। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও এবারের সফরে ভালো করার আশ্বাস দিয়েছেন। গত রোববার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেছেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলার লক্ষ্য নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাচ্ছে দল। যদি আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলতে পারি তাহলে যে কোন ভেন্যুতেই যে কোন শক্তিশালী দলকে হারাতে পারবো আমরা। প্রতি সিরিজেই নিজেদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি এবং এবারের সফরেও আমাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
তবে সবার প্রত্যাশা বাংলাদেশ দলের লড়াকু মনোভাব ফিরে পাবে আর ক্যারিবীয় দ্বীপে চলবে টাইগারদের দাপট।