বৈশাখের প্রায় শেষ আর জৈষ্ঠের আগমন দরজায় কড়া নাড়ছে। তবে এখনই গরমের প্রভাবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। কংক্রিটের এই শহরে তাই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। ঘামে ভিজে যায় শরীর। ক্লান্তি আর মাথা ব্যথাও প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই এসব ঝুট ঝামেলা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে চাইলে পান করতে পারেন ঘোলের শরবত। সুস্বাদু যেমন তেমনি তৃপ্তিও। আবার ফিরে পাবেন শক্তিও। তাছাড়া এর উপকারিতাও রয়েছে প্রচুর। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, প্রতিদিন একগ্লাস করে ঘোল খেলে অল্পতেই সমাধান শরীরের অনেক সমস্যার। বিস্তারিত জেনে নিন —
ঘোলের উপকারিতা
ভরপেট খাওয়ার পর একগ্লাস ঘোল বদহজমের সমস্যা নিমিষেই দূর হয়। ফলে শারীরিক কষ্টও লাঘব করে নিমেষে। মসলাদার খাবার খাওয়ার পর পেট ব্যথা বা শরীর হাঁসফাঁস করলে ঘোলেই এর সমাধান। কারণ ঘোলে থাকা প্রোটিন মসলাকে হজম করতে সাহায্য করে। ফলে শরীরও চাঙ্গা হয়ে যায়। ঘোলের শরবত হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যাসিড কাটিয়ে পেট সুস্থ করে দেয়। রোজ পান করতে পারলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
জানা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাহলে হাড় ও দাঁতের সমস্যা হয় না। এক কাপ দুধে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এক কাপ দইতে থাকে ৪২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। কিন্তু এক কাপ ঘোলে থাকে ৩৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। সুতরাং রোজ একগ্লাস ঘোল পান করতে পারলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে। ধীরে ধীরে শরীরের চর্বিও কমতে থাকবে। ঘোলে প্রচুর পরিমাণে পটশিয়াম ও ভিটামিন বি থাকে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ঘুমও ভালো হয়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘোলে থাকা নানা অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান ব্লাড প্রেসার কমায়। সঙ্গে ক্যানসারকেও রুখে দেয়।
এছাড়া কারও যদি দুধ পানে অ্যাসিডিটি হয়, সেই সব ব্যক্তিদের জন্য ঘোলের বিকল্প নেই। ঘোলের স্বাদে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না।
এবার জেনে নিন কয়েক ধরনের ঘোল তৈরির উপায়:
১. টেবিল চামচ দই ১ গ্লাস পানিতে দিয়ে ভালোভাবে মিশাতে হবে। স্বাদের জন্য সামান্য লবণ মিশিয়ে নিলে ভালো। একটি লেবুর অর্ধেক অংশের রস চিপে দিতে হবে। তাহলেই তৈরি ঘোলের শরবত।
২. দই, পানি, কাঁচামরিচ ও কারিপাতা একটি ব্লেন্ডারে নিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। কাঁচামরিচ ও কারিপাতা হামানদিস্তায় পিষে নিয়ে ঘোলের সঙ্গে মিশানো যেতে পারে। যারা মসলাদার পানীয় পান করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই পদ্ধতির ঘোল অতুলনীয়।
৩. সুস্বাদু ও কম মসলা যুক্ত স্বাদের জন্য আধা কাপ দইয়ের মধ্যে আধা টেবিল চামচ জিরা গুঁড়ো, এক চিমটি লবণ ও এক কাপ পানি ব্লেন্ড করতে হবে। এতে কয়েকটি পুদিনা পাতা বা ধনে পাতাও দেয়া যেতে পারে। সব শেষে এক টুকরো বরফও দিলে শীতল অনুভবটা বাদ যাবে না।
৪. খনিজ লবণ ও জিরার গুঁড়া ঘোলের সঙ্গে ঘন করে মিশাতে হবে। পুদিনা পাতাও মিশানো যাবে। এই পদ্ধতিতে এক বাটি তাজা পুদিনা পাতা, এক কাপ দই এবং ৩০০ মিলিলিটার পানি মিশাতে হবে। সঙ্গে আদা গুঁড়া ও আধা টেবিল চামচ জিরার গুঁড়া একসঙ্গে ব্লেন্ড করতে হবে। তারপর পানীয়টি ছেঁকে নিলেই হয়ে যাবে মজাদার এক পানীয়।