শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

গণজাগরণ মঞ্চে পুলিশের হামলা

1_149074

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা করেছে পুলিশ। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। হামলার প্রতিবাদে আজ বিক্ষোভ সমাবেশ ও কাল মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আরিফ জেবতিক।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রজন্ম চত্বরে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এ সময় মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের দিকে রওনা হন নেতাকর্মীরা। ডা. ইমরানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ঢাবির টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মিছিল নিয়ে পুনরায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের মিডিয়া সেলে ফিরে আসেন তারা। মিছিল থেকে ইমরান এইচ সরকার বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসি দিয়েছেন। অথচ আপিল করার পর ফাঁসির রায় বহাল না রেখে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত; রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। আমরা ঘৃণাভরে এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। যতদিন পর্যন্ত সাঈদীর ফাঁসির রায় না হবে ততদিন পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে। এ সময় শাহবাগের মূল চত্বরে অবস্থানের ঘোষণা দেন ইমরান এইচ সরকার। তারা মিছিল নিয়ে মূল চত্বরের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে তারা মূল চত্বরে অবস্থান নেন। পুলিশ তাদের মূল চত্বর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে কর্মীরা রাস্তায় শুয়ে পড়েন। আটকে দেয়া হয় আশপাশের সব সড়ক। পরে চারপাশে তীব্র জানজট দেখা দিলে পুলিশের সহযোগিতায় রাস্তার একাংশ খুলে দেয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় রমনার দিক থেকে দুটি জলকামান আসে। এ সময় পুরো মঞ্চে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বিক্ষোভস্থল থেকে আশপাশে সরে যান। পরে বারডেম হাসাপাতালের দিক থেকে পুলিশ দুটি জলকামান থেকে বিক্ষোভকারীদের দিকে গরম পানি নিক্ষেপ করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে মঞ্চের কর্মীরা চারদিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এরপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ প্রায় ১০ জন আহত হন। আহত ইমরানকে মিডিয়া সেলে শুইয়ে রাখা হয়। পরে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়িতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে হাসপাতালের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলার পরপরই আজিজ সুপার মার্কেটের দিক থেকে ছাত্রনেতা বাপ্পাদিত্য বসু, তানভির রুসমত ও জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম সুমনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের সামনে দিয়ে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই শাহবাগ হয়ে জাদুঘরের দিকে যায়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অমি বাঙ্গাল, সহসভাপতি কানিজ আকলিমা, জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী সাজু প্রমুখ। সমাবেশ শেষে পুনরায় মিছিল নিয়ে তারা কাঁটাবনের দিকে যায়।
হামলা-পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে আলোচনায় বসেন বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতারা। বৈঠক শেষে বিকাল ৫টায় বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেন মঞ্চের সংগঠক আরিফ জেবতিক। তিনি বলেন, ফাঁসির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। কাল (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৪টায় শাহবাগ প্রাঙ্গণে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করব। শুক্রবার বিকাল ৪টায় শাহবাগেই মহাসমাবেশ হবে।
মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসূলের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মঞ্চের সংগঠক সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক, মহিলা পরিষদের সম্পাদক শম্পা বসু, ডাকসুর সাবেক জিএস ড. মোস্তাক, সংগঠক সাঈদা সুলতানা এনি, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ফারুক অভি, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাবিব রুমন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক, খেলাঘর আসরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা সুলতানা, সাবেক ছাত্রনেতা বাকি বিল্লাহ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সহসম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুদ প্রমুখ।