শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার শুনানি ফের পেছাল

2_143135

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সময় আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য নেয়ার নতুন দিন ধার্য করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় শুনানির এ দিন ধার্য করেন। রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে চলছে মামলা দুটির বিচার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। শুনানির সময় খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সময় আবেদনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেন, মামলা দুটির বিচার প্রক্রিয়া ও বিচারক নিয়োগের বৈধতা নিয়ে করা রিট মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে দিন ধার্য রয়েছে। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে, আপিল বিভাগে মামলার কোনো বিষয় নিয়ে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকলে সেই মামলার বিচার কাজ চালাতে পারেন না কোনো অধস্তন আদালত। আদালতের কাছে আবেদন, সময় আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন দিন ধার্য করা হোক।
খালেদার অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া আদালতকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। এরপরও তিনি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আপনার আদালতে হাজির হয়েছেন। আপিল বিভাগে যেহেতু মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিটের শুনানি অপেক্ষাধীন। তাই সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন দিন রাখা হোক।আসামি পক্ষের সময় আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আদালতকে তিনি বলেন, আজ মামলা দুটির সাক্ষ্যগ্রণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ দুটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ কিংবা মামলা না চালানোর জন্য উচ্চতর আদালত কোনো আদেশ দেননি। আপনার কাছে আসামিপক্ষ তা দাখিলও করতে পারেনি। আইনজীবী কাজল আরও বলেন, চলতি বছরের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে আপনি (বিচারক) অভিযোগ গঠন করেছেন। এরপর একাধিক তারিখ রেখেছেন সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য। কিন্তু আসামিরা আদালতে না আসার কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আজ (গতকাল) যেহেতু আসামিরা আদালতে হাজির তাই আমার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হোক। কাজল আদালতকে জানান, মামলা দুটির সাক্ষীরা আদালতে হাজির আছেন।
আসামি ও দুদকের পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শেষে বিচারক বাসুদেব রায় বলেন, আজ আদালতের পরিবেশ অনেক ভালো। প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষকে এ জন্য অনেক ধন্যবাদ। এর আগে কখনও এমন পরিবেশ আমি দেখিনি। আসামি ও দুদকের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনেছি। আসামি পক্ষের আবেদন মঞ্জুর করা হল। ২৭ জুলাই মামলা দুটির সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় এবং তার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনের কারণে সেদিন শুনানি হয়নি।
এজলাস কক্ষে বিএনপির শীর্ষ নেতারা : সকাল ১০টার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির সব শীর্ষ নেতা আদালতে আসতে থাকেন। মির্জা ফখরুল ছাড়া বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান, মির্জা আব্বাস, ড. ওসমান ফারুক, বরকতউল্লা বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর নাসির উদ্দিন, আবদুস সালাম, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আওয়াল মিন্টু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শরাফত আলী সপু, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আসামিদের পক্ষে আইনজীবী জয়নাল আবেদিন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মহাসিন মিঞা, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মামলার আসামিরা : দুর্নীতির দুটি মামলার আসামিরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। এদের মধ্যে খালেদা দুটি মামলারই আসামি। তারেক, কামাল, শরফুদ্দিন, মমিনুর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি। আর জিয়াউল, মনিরুল, হারিছ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি। পলাতক আছেন হারিছ চৌধুরী, কামালউদ্দিন ও মনিরুল। এরা মামলার শুরু থেকে পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন। তারেক রহমান আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেন। বাকিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বলা হয়, এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আÍসাৎ করেন আসামিরা। এ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ মামলাটি তদন্ত করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানম নামক এক মহিলার কাছ থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। তবে জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয়েছে। এই টাকার বৈধ কোনো উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।