শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

কে হচ্ছেন নগরপিতা?

30twq6y3

চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে হাওয়া বইছে রাজনৈতিক মহলে। আগামী এপ্রিল-মে মাসে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় শুরু হয়েছে জোর লবিং। আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ক্যারিশমা কতটুকু দমাতে পারবে বর্তমান নগর পিতা বিএনপির মনজুর আলমকে – এই প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরছে সর্বত্র। দু’টি দলেরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগেভাগে নেমেছেন রাজপথে। তবে শেষ মুহূর্তে মেয়র নির্বাচনের প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে সঙ্কট তৈরি হতে পারে দু’দলেই এমনটি আশঙ্কা সচেতন ভোটারদের।
ইতিমধ্যে আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কমিশনার আবদুল মোবারক। সম্প্রতি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনের সার্ভার স্টেশন পরিদর্শনের পর তিনি এই কথা জানান।
তিনি বলেন, আগামী জুন মাসে চট্টগ্রাম করপোরেশনের ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে। ওই সময় রমজান মাস থাকবে। রোজার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কোন নির্বাচনের আয়োজন করে না। এক্ষেত্রে দায়িত্ব গ্রহণের ১৮০ দিন আগে নির্বাচন হতে পারে।তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনের দিকে নজর সবার। তাই যাচাই বাছাই করে ভোটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কোন ভাবেই রোহিঙ্গাদের ভোটার করা হবে না।সূত্র জানায়, নির্বাচনে প্রার্থী হতে দু’দল থেকে জোরেশোরে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। ফলে নির্বাচনের শেষ সময়ে কোন্দলকে আরও চাঙ্গা করে তুলতে পারে। যে কারণে হতে পারে ভরাডুবিও। ২০১০ সালে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে চমক দেখিয়ে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া বর্তমান মেয়র মনজুর আলম। সেই সময় তার গুরু আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন চৌধুরীর চেয়ে ৯৫ হাজার ৫২৮ ভোট বেশি পান তিনি।তবে এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন চট্টগ্রামের কয়েক লাখ ভোটার। বিএনপির টিকিটে ফের জয়লাভ করতে ঈদের আগে ঢাকায় গিয়ে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন বর্তমান মেয়র মনজুর আলম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, দল চাইলে আমি নির্বাচন করবো। গত ৪ বছর আমি অনেক কাজ করেছি। আশা করছি তার সঠিক মূল্যায়ন হবে। আমাকে প্রার্থী করার বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতারা সবাই একমত।
তবে এবার আরও বেশ কয়েকজন নেতা বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে বেশ মরিয়া। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক বেসামরিক ও বিমান পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। এর বাইরে প্রার্থী নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বড় ধরনের ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারেন বলে অনেকের অভিমত।
বিএনপির একাধিক তৃণমূল কর্মী জানান, মেয়র মনজুর আলম বিজয়ী হওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ছাড়া আর কারও তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না। পরে একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিকেও ভাল চোখে দেখেননি অনেকে। এই নিয়ে স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাতের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। অন্যদিকে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ২০১০ সালের আগে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে। সেবার তিনি হেরেছিলেন ৯৫ হাজার ভোটে। ফলে সেই হারের ইমেজ কাটিয়ে তিনি কতটুকু সাফল্য পাবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।এছাড়া ডা. শাহাদাতকে প্রার্থী করার বিষয়ে দলের বেশ কয়েকজন নেতার রয়েছে ঘোর আপত্তি। বিশেষ করে মহানগর কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সম্পর্কে বেশ টানাপড়েন গেছে। এসব বিষয় নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে সবার ধারণা। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভ করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ম্যাডাম যাকে মনোনীত করবেন তিনি দলীয় প্রার্থী হয়ে লড়বেন। তার জন্য আমরা সবাই দিনরাত পরিশ্রম করবো। সবেমাত্র সময় ঘোষণা করা হলো। দিন ঘনিয়ে এলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।’নোমান আরও বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে সেখানে তা কেটে যায়। আশা করছি চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এমনটা তৈরি হলে তা দূর করতে পারবো।অন্যদিকে বিএনপির মতো প্রার্থিতা বাছাইয়ে তেমন ঝামেলা নেই আওয়ামী লীগে। কিন্তু মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপরীতে ইতিমধ্যে আরও কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা অবস্থান নেয়ায় বিষয়টি নিয়ে সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে সচেতন মহলের ধারণা। মহিউদ্দিন চৌধুরী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল লোকজনের সঙ্গে প্রতিদিনই বেশি করে যোগাযোগ করছেন।বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি নির্বাচন করার বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন নেত্রী শেখ হাসিনা চাইলে তিনি অবশ্যই নির্বাচনে আসবেন। তার এমন ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছে আওয়ামী শিবির। দলের কর্মীরা বলেছেন, এই মুহূর্তে বিএনপিকে ঠেকাতে তার কোন বিকল্প নেই।মহিউদ্দিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আমার আগাম কোন ভাবনা নেই। দল চাইলে দাঁড়াবো। যেহেতু জয়লাভ করার পুরনো অভিজ্ঞতা আছে তাই সেই কৌশল কাজে লাগিয়ে বিজয়ী হওয়া কঠিন হবে না।
প্রতিবার মহিউদ্দিন চৌধুরী এককভাবে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলেও এবার তাকে টেক্কা দিতে ভেতরে ভেতরে আরও অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।সূত্র জানায়, গত নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরাজয়ের পেছনে আওয়ামী লীগের একটি অংশ জড়িত ছিল বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ওঠে। বিশেষ করে মহিউদ্দিন বিরোধী শিবিরের লোকজন তার দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছাচারিতাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে তাকে সব ধরনের সমর্থন দেয়া থেকে বিরত ছিলেন তারা। এবারও এ ধরনের একটি বিষয় কাজ করতে পারে বলে সবার ধারণা। তাছাড়া তার বিকল্প হিসেবে ইতিমধ্যে অনেকে সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসির বিষয়ে মত দিয়েছেন। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে বিএসসি তার নির্বাচিত আসনটি জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দেন। এই সময় নেত্রী তাকে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে জানান তার অনেক কর্মী। অন্যদিকে বর্তমান সময়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে পাপনের হাত ধরে এগিয়ে গেছেন আজম নাসির। তিনিও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন বলে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে। সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি। জীবনের পুরোটা সময় তাদের জন্য ব্যয় করেছি। দলের বাইরে গিয়ে কখনওই কিছু করা সম্ভব না। শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। তিনি চাইলে নির্বাচন করবো। গত কয়েক বছর চট্টগ্রামের মানুষ বর্তমান মেয়র থেকে খুব বেশি উপকার পেয়েছে বলে মনে হয় না। তারা নতুন নেতৃত্ব চায়। একই রকম অভিমত ব্যক্ত করে সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, সিটি করপোরেশনের ব্যাপক উন্নয়ন দরকার। চট্টগ্রামের মানুষ উন্নয়ন চায়। আমি দায়িত্ব পেলে অবশ্যই বন্দর নগরীর চেহারা পাল্টে দেবো। তবে প্রার্থিতার বিষয়ে কিছুই বলতে পারছি না। যেহেতু আমি একটি দল করি। তাই এই ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।