কর্ণফুলীকে বাঁচাতে রোডম্যাপ তৈরি করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। দেশের অর্থনৈতিক গতিধারায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এ নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প যখন কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত, তখন চবকের এমন নতুন উদ্যোগ আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে ব্যবহারকারীদের মধ্যে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের কারণে কর্ণফুলী নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু নদীটি খনন নয়, লাগোয়া চাক্তাই খাল, রাজা খালসহ অন্য খালগুলো খনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নাব্যতা রক্ষা এবং স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ নিশ্চিতে নেদারল্যান্ড থেকে চবক এনেছে একটি অত্যাধুনিক ড্রেজারও। গঠন করেছে টাস্কফোর্স। চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে এ নদী রক্ষায় চবকের এই নবতর উদ্যোগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ (চসিক) অন্য সেবা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও অনুপ্রাণিত করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। কর্ণফুলীর দখল-দূষণ দেখে ইতিমধ্যে বিস্ময় জানিয়েছে নদীশাসনে বিশেষ অবদান রাখা দেশ নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি দল। তাদের পরামর্শ নিয়েই নদী ও খাল দখলমুক্ত এবং নাব্যতা নিশ্চিতে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত উদ্যোগ নিচ্ছে চবক। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গঠিত টাস্কফোর্সে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চসিকসহ সব উন্নয়ন ও সেবা সংস্থার প্রতিনিধিদেরও রাখা হয়েছে। চবক জানায়, তাদের সংগৃহীত ‘ওয়াটার মাস্টার মাল্টিপারপাস ড্রেজার’ মাটি উত্তোলন, পাইলিং, ব্যাকহোলসহ ড্রেজিংয়ের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আপাতত এমন একটি ড্রেজার আনা হলেও ক্রমে আরও কয়েকটি সংযুক্ত হবে বহরে। মূলত ছয় মাসের মধ্যেই দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চান বলে জানান চবক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ। যারা আইন মানছেন না, নদী-খাল ভরাট, দখল ও দূষণ করছেন, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন, তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে চবক চেয়ারম্যান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অ্যারেস্ট অর ক্লোজড’। আইন না মানলে প্রয়োজনে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, কর্ণফুলী ও লাগোয়া খালগুলো পর্যায়ক্রমে দখল ও দূষণমুক্ত করতে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এদিকে চবকের এ উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের ফোরাম প্রধান ও চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ঠিকমতো নদী-খাল খনন হলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতাও আর থাকবে না। পরিবেশবাদী সংগঠক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী উদ্যোগটিকে স্বাগত জানালেও বলেন, নদী ও খাল রক্ষার মূল দায়িত্ব চট্টগ্রাম বন্দরেরই। এ ক্ষেত্রে চবক বিলম্বে কেন এগিয়ে এলো তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এদিকে দূষণের মূল চিহ্নিত করে উৎসেই তা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন চবক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দূষণকারী ও দখলকারী যত শক্তিধরই হোন না কেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বুড়িগঙ্গার মতো কর্ণফুলীকে দূষিত হতে দেব না।