প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ওপর চরম ক্ষুব্ধ সরকারের প্রভাবশালী ও সিনিয়র মন্ত্রীরা। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। এইচ টি ইমামের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তাকে দ্রুত বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের কেউ কেউ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে মনগড়া কথা বলা এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারের ভিতরে-বাইরে। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে এইচ টি ইমামের বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নীরবে মন্ত্রীদের বক্তব্য শোনেন এবং নিজের ক্ষোভের কথাও প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানান, বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামকে নিয়ে বেশ উত্তপ্ত আলোচনা হয়। আলোচনার সূত্রপাত করে একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী ইমামের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী জানান, ইমামের সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি, যোগাযোগও হয়নি।একজন মন্ত্রী জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ইমামের সেদিনের ওই বক্তব্যের পর এখন পর্যন্ত তিনি আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। একাধিকবার চেষ্টা করলেও প্রধানমন্ত্রী তাকে সাক্ষাৎ দেননি। এমনকি তার টেলিফোনও ধরেননি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ইমামের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। গতকাল ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এইচ টি ইমাম যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন একজন সিনিয়র মন্ত্রী। মন্ত্রিসভার অপর একজন সিনিয়র সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী এই ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন যে, এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তার ছেলেকে সংসদ সদস্য বানিয়েছেন। আবার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের স্থানীয় নেতাদের বাদ দিয়ে ইমাম তার নিজের ছেলেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। এটিও প্রধানমন্ত্রী ভালো চোখে নেননি। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। মন্ত্রিসভার বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে এবং ছাত্রলীগ কর্মীদের লিখিত পরীক্ষায় পাস করলেই বিসিএস ক্যাডারে চাকরি দেওয়া সম্পর্কে যে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন তার জন্য ইমামের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী। বৈঠকে একজন মন্ত্রী বলেন, এইচ টি ইমাম চাকরির বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এর ব্যাখ্যা দিয়ে ওই মন্ত্রী বলেন, বিসিএসে মৌখিক বাদে দুই ধাপে মার্কস হচ্ছে ১২০০। অর্থাৎ প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারিতে ২০০ এবং দ্বিতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় হচ্ছে ১০০০। অর্থাৎ একজন পরীক্ষার্থীকে পাস করতে হলে এই দুই ধাপে মোট মার্কস পেতে হবে ৬৮০ (৮০+৬০০)। তারপর আসে মৌখিক পরীক্ষার বিষয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায়ই প্রার্থীদের পক্ষে পাস মার্কস উঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। ওই মন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, তাহলে তিনি (ইমাম) কীভাবে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন? বৈঠক সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে এইচ টি ইমামের বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী কথা বলেন। প্রসঙ্গত, গত বুধবার ছাত্রলীগের এক সভায় এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বুক পেতে দিয়েছেন।মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন : মালয়েশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া শ্রম কর্মসংস্থান বিষয়ক সমঝোতা চুক্তি সংশোধনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়। গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪ এর খসড়াও নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, কর্মী প্রেরণের বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে জি-টু-জি যে চুক্তি রয়েছে তার সংশোধন চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ার মূল ভূখণ্ডের পাশাপাশি সারওয়াক প্রদেশে কাজ করার সুযোগ পাবে। মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে বিদ্যমান যে চুক্তি তা মূল ভূখণ্ডের জন্য প্রযোজ্য ছিল।