নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকা। ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে তিন সিটির মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নেমে পড়েছেন ভোটারদের মন জয়ে। নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ায় শুক্রবার এসব প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।গত ৭ এপ্রিল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন। এরপর থেকে চোখের ঘুম হারাম করে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটারদের দোরগোড়ায় ছুটছেন। ভোটোরের মন জয়ের প্রতিযোগিতায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে চান না। তাই প্রচারণার প্রথম দিন ভোর থেকে রাত-দিন প্রার্থীরা চালাচ্ছেন তাদের প্রচার-প্রচারণা। নানা প্রতিশ্রুতি আর কথামালায় ভোটারের মন জয় করে প্রত্যেক প্রার্থীই চাচ্ছেন ভোটের মাঠে আগামী ২৮ এপ্রিল ফাইনাল খেলায় শিরোপা জয় করতে।চৈত্রের খরতাপের সাথে নির্বাচনী এই উত্তাপ যুক্ত হয়ে তিন সিটির রাজনৈতিক অঙ্গনও সরগরম হয়ে উঠেছে। নির্বাচনী এই উত্তাপ দীর্ঘ প্রায় তিন মাসের অধিক সময় ধরে আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নৈরাজ্যকে ছাপিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে এনে দিয়েছে উৎসবের আমেজ।এ তিন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আটঘাট বেঁধে মাঠে নামলেও বিএনপি এখনো সিদ্ধান্তহীনতায়। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে নানা কৌশল প্রয়োগ করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরেই দলের সিদ্ধান্ত এসেছে কেন্দ্র থেকে, কোনো নেতা-কর্মী সিদ্ধান্তের বাইরে যাননি বা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেননি।অন্যদিকে প্রার্থী নির্বাচনে এলোমেলো ও অগোছালো অবস্থা বিএনপির। চট্টগ্রামে কিছুটা গুছিয়ে আনতে পারলেও ঢাকার অবস্থা সন্তোষজনক নয়। ফলে বিএনপি প্রার্থীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার দুই সিটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।ঢাকার দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হিসাবে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন মির্জা আব্বাস। আর উত্তরে বিএনপি নেতা আবদুল আওয়াল মিন্টুর প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় তার ছেলে তাবিথ আওয়ালকে সমর্থন দিয়েছে দলটি।ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাঈদ খোকন প্রচারণায় সরব। তিনি বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময়সহ ভোটারদের দ্বারেদ্বারে যাচ্ছেন। অন্যদিকে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস ৪০টি মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন। ৩৭টি মামলায় জামিন পেলেও তিনটি মামলায় জামিন পাননি। পলাতক থেকেই মনোনয়ন ফরম তোলা, জমা দেয়ার কাজ সেরেছেন। স্ত্রী আফরোজা আব্বাস তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন।আজ সকালে যাত্রাবাড়ী ধোলাইপাড়ে একটি কমিউনিটি সেন্টারে মত বিনিময়ের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। এছাড়া বিকেল ৪টায় গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় এবং ৫টায় বংশাল-কোতয়ালী এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে তিনি গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, নগর পিতা নয়, বরং নগরীর মানুষের সন্তান হিসেবে তিনি কাজ করে যাবেন।ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী অভিনেতা নাদের চৌধুরী আজ রাজধানীর মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড নিজ বাড়ির কাছ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা করেন।এ সময় তিনি বলেন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আমি কাজে বিশ্বাসী। আমি যা বলবো, নির্বাচিত হলে তা করে প্রমাণ দেবো। পহেলা বৈশাখের পর নাদের চৌধুরী তার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবেন জানিয়ে বলেন, এ ইশতেহারে উত্তরের বাসিন্দাদের মনের কথা ও সম্ভাবনার কথা থাকবে।ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র প্রার্থী ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক জোরেশোরে প্রচারণা শুরু করেছেন। এ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়ায় প্রচারণায় কাউকে দেখা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে তাবিথ আওয়ালকে বিএনপি সমর্থন জানানোয় শুক্রবার থেকে তিনি প্রচারণায় নামবেন বলে জানা গেছে।চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন বেশ জোরেশোরেই জনসংযোগ করছেন। তার সঙ্গে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম এবং তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এমপিও নাছিরের পক্ষে কাজ করছে।এদিকে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় চট্টগ্রাম সিটির বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম গণসংযোগ ও পথ সভা করছেন। নগন বিএনপি সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহবুবর রহমান শামীমসহ স্থানীয় নেতারা তার পক্ষে কাজ করছেন নিরলসভাবে।শুধু মেয়র প্রার্থীরাই নয় মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলররাও স্ব স্ব ওয়ার্ডে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন।আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। শুক্রবার সকাল থেকে এসব প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের পছন্দকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে একই প্রতীক যদি একাধিক প্রার্থী দাবি করেন, সে ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা লটারির মাধ্যমে প্রতীক দেবেন। এদিকে ৩০টি অতিরিক্ত প্রতীক নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রধান দুই দলের দুই প্রার্থী প্রতীক পেয়েছেন। এ সিটিতে বিএনপি সমর্থিত এম মঞ্জুর আলম পেয়েছেন কমলালেবু প্রতীক আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাসির পেয়েছেন দাতি প্রতীক।ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম স্বাক্ষরিত একটি বিশেষ পরিপত্রে জানানো হয়েছে, মেয়র পদের জন্য অতিরিক্ত প্রতীক ১২টি। এগুলো হচ্ছে আংটি, ঈগল, কলমদানি, কেক, চিতাবাঘ, জাহাজ, টেবিল, মগ, লাউ, ল্যাপটপ, শার্ট ও সোফা। তবে ইসির সংরক্ষিত ১২টি প্রতীক আগেরগুলো বরাদ্দের পরে বরাদ্দ দেয়া হবে।এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের জন্য অতিরিক্ত প্রতীক ১০টি। এগুলো হচ্ছে- ক্যাপ, ক্রিসমাস ট্রি, ঘোড়া, ভায়োলিন, ড্রেসিং টেবিল, প্রদীপ, সূর্যমুখী, স্ট্রবেরি, হেডফোন ও হেলিকপ্টার। আর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদের জন্য অতিরিক্ত প্রতীক আটটি। এগুলো হলো ঝুমঝুমি, টিয়ে পাখি, দোলনা, প্রেসার কুকার, ফ্রাইং প্যান, বাঁশি, ভ্যানিটি ব্যাগ ও হারমোনিয়াম। তবে ইসির সংরক্ষিত প্রতীক বরাদ্দের পরেই এসব প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে তিন সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮-এ। এদের মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) উত্তরে ১৬ জন, দক্ষিণে ২০ জন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১২ মেয়র প্রার্থী।কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ২৬ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন। ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।
উৎস- যুগান্তর