যারা আবারও ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটিয়ে দেশের স্বাধীনতা নষ্ট করতে চায় তাদের সম্পর্কে ছাত্র সমাজসহ দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইয়হিয়ার পা চাটা কুকুর এখনও বাংলাদেশে আছে। তাদের দোসররা এখনও সক্রিয়। তাদের সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। তারা যেন দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ধারাবাহিক আলোচনা সভার শেষ দিনে রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্মরণে ছাত্রলীগের বিশাল ছাত্র সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জিয়া খুনিদের রাজত্ব কায়েম করে। যারা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে আনে। মার্শাল ল’ আইনে আল-শামস-আলবদরদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির যত অর্জন তাতে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তিনি নিজেও ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বিশ্বের সেরা ভাষণগুলো নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে একটি সংকলন বের হয়েছে। ওই সংকলনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ রয়েছে। বইটি আমার কাছে আছে। কিন্তু পঁচাত্তরের পর জিয়া এ ভাষণ কোথাও প্রচার করতে দেননি। এ ভাষণ বাজাতে গিয়ে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যারা সামরিক শাসকদের রোষানলে পড়ে শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্মৃতিচারণা করে বলেন, সামনে লাঠি হাতে লাখ লাখ মানুষ আর পেছনে বন্দুক হাতে পাক বাহিনী। এর মধ্যেই তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন।
সভায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের নেশায় যারা রাজনীতি করে, তারা কখনও উপরে উঠতে পারে না। ত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।
ছাত্র সমাবেশে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রলীগের নামে কিছু পরগাছার জন্য আমাদের নেত্রীর সোনালি অর্জন বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। বিএনপির সঙ্গে এ মুহূর্তে সংলাপের কোনো পরিবেশ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামানের সভাপতিত্বে ছাত্র সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংসদ সদস্য তারানা হালিম। বিভিন্ন সময়ে নিহত ছাত্রলীগ নেতাদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল। সমাবেশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
সমাবেশে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ থেকে ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশের পরিধি একপর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত ও আশপাশের এলাকা ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশের দু’একদিন আগ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও আঙিনায় অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে সমাবেশস্থলে অনেকেই উপস্থিত না থেকে রাস্তায় ঘোরাঘুরি ও বাসে বসে থাকতে দেখা গেছে। মিছিল নিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করে মেঘলা আবহাওয়ার কারণে আবার সঙ্গে সঙ্গেই অনেককে চলে যেতে দেখা গেছে। সুদূর ময়মনসিংহ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে সভায় যোগ দেন ফাহিম গোলন্দাজ।
এদিকে মঞ্চে আসন না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ সমাবেশস্থল থেকে ফিরে যান। এ নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এদিকে দুপুর ৩টার দিকে সমাবেশ মঞ্চের সামনে বসাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল এবং একুশে হল ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে গুরুতর আহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক মাহবুবুল হক অনন্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করে। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।