শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ইরাকে বিপদে আছে বাংলাদেশীরা

যুদ্ধকবলিত ইরাকে বিপদে আছে বাংলাদেশীরা। দেশটির বেশ কিছু শহরে ইরাকি সেনা ও সুন্নি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ এখন গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ হাজার এবং ভারতের ১০ হাজার অভিবাসী শ্রমিক ইরাকে অবস্থান করছে। তাদের বড় একটি অংশই সংঘর্ষ চলা এলাকাগুলোতে কাজে নিয়োজিত। তারা এলাকা ছাড়তে চাইলেও গোলাগুলির কারণে পারছেন না। ইরাক প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকের বরাত দিয়ে শুক্রবার এ তথ্য দিয়েছে ইউএনবি। বাংলাদেশী শ্রমিকদের ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শওকত হোসেন বলেন, সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজনে ইরাক থেকে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইরাকে বন্দি ৪৬ ভারতীয় নার্স অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছেন। তারা অবিলম্বে দেশে ফিরবেন।
ইরাক প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক শেখ বেলাল টেলিফোনে তার দুর্গতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমরা সরকারি বাহিনীকে যেমন ভয় পাই, তেমনি বিদ্রোহীদের নিয়েও আতঙ্কিত। যা কিছু নড়াচড়া করছে, তার ওপরই গুলি ছুড়ছে সেনাদের হেলিকপ্টার। আমরা যেতে চাই, কিন্তু পারছি না। বেলাল জানান, বুধবার তিকরিত শহরে ইরাকি সেনা ও সুন্নি জঙ্গিদের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, তখন গোলাগুলি থেকে রক্ষা পেতে তিনি এবং তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন বাংলাদেশী শ্রমিক একটি গুদামে গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে ছিলেন। এ সময় ইরাকে বাংলাদেশী দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সংঘর্ষ থামলে উদ্ধার করা হবে বলে আশ্বাস দেন। পরে দূতাবাসের সহায়তায় তারা মুক্তি পান। বেলাল আক্ষেপ করে বলেন, এটি তাদের দুর্ভাগ্য। তারা সবাই ইরাকে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে কাজ করতে চান।২৯ বছর বয়সী বেলাল দেশে থাকতে একজন কৃষক ছিলেন। বেশি উপার্জনের আশায় গত বছর ইরাকে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান তিনি। বেলাল জানান, ইরাকে বাংলাদেশী, ভারতীয় ও নেপালি শ্রমিকদের জীবন কাটছে ঝুঁকির মধ্যে। তাদের প্রায়ই সুন্নি বিদ্রোহী ও সেনাদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়তে হয়। ইরাকে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেশির ভাগই নির্মাণশ্রমিক, সেবিকা, গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বাগদাদের বাংলাদেশী দূতাবাস ৫১ জন বাংলাদেশী শ্রমিককে গত মাসে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মসুল থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে সহায়তা করেছে। কিন্তু অভিবাসী শ্রমিকরা বাংলাদেশে ফিরতে চান না; বরং তারা ইরাকের অন্য কোথাও থেকে কাজ করতে চান।ভারতীয় নার্সরা মুক্ত : ইরাকে বন্দি ৪৬ জন নার্স অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছেন। তারা অবিলম্বে দেশে ফিরে আসছেন বলে জানিয়েছে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। এদের সবার বাড়ি কেরল রাজ্যে। ভারতীয় নার্সদের জীবন নিয়ে নানা আশঙ্কার মধ্যেই শুক্রবার সকালে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চন্ডি এ তথ্য ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, তারা (নার্সরা) এখন কুর্দিস্তানের ইরবিল বিমান বন্দরে আছেন। দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তবে তারা কীভাবে ছাড়া পেলেন এ ব্যাপারে কোনো কিছুই জানাতে চাননি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। মুক্ত নার্সরা কেরলে তাদের পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেছেন।
গণভোটের দাবির বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র : বাসসের খবরে বলা হয়, ইরাকের কুর্দিস্তানে স্বাধীনতার প্রশ্নে কুর্দি নেতার গণভোটের আহবানের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার নাকচ করে দিয়ে বলেছে, ইরাকের সুন্নি জঙ্গিদের প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলের নেতা মাসুদ বারজানি কুর্দি পার্লামেন্টে ভাষণ দেয়ার সময় এ আহবান জানান। এদিকে হোয়াইট হাউস ইরাকে ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনে দেশটির সুন্নি, শিয়া ও কুর্দি নেতাদের রাজি করাতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। হোয়াইট হাউস মুখপাত্র জোশ আর্নেস্ট বলেছেন, ইরাকের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে সব দলকে একত্রে কাজ করতে আমরা আহবান জানাচ্ছি।