আওয়ামী লীগ নিজেরাই জঙ্গি তৈরি করে, আবার তারাই তা বিদেশীদের দেখানোর জন্য ধরে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আওয়ামী লীগের তৈরি। আওয়ামী লীগই এর সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন পর পর আনসারুল্লাহ, রহমাতুল্লাহ বানানো হয়। যখনই তাদের (আওয়ামী লীগ) অবস্থা খারাপ হয়, তখন বিদেশীদের দেখানোর জন্য বলে আনসারুল্লাহ, রহমাতুল্লাহকে ধরছি। বিদেশীদের বলে, আমরা না থাকলে এ জঙ্গিবাদের উত্থান হবে।মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালী আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব অভিযোগ বলেন। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নোয়াখালী আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫ পদের মধ্যে ৯টিতে জয় পায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।খালেদা জিয়া বলেন, আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগের সময়ই জঙ্গিবাদ ও বোমাবাজের উত্থান হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যশোরে উদিচি বোমা বিস্ফোরণ, পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে ও রমনা বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল কোন সময়ে। যত ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগের আমলেই। ওই সময়ে জঙ্গিদের তারা ধরেনি। আমরা জঙ্গিদের ধরেছি, সাজাও দিয়েছি।সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শেষ হয়ে যায়নি। সময়ের অপেক্ষায় আছি। যত কলাকৌশল করুক সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেই হবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা বাদই দিলাম। গত সিটি নির্বাচন দেখে বিদেশীরাও বলেছে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। কারণ তারা হতে দেবে না। তারা (আওয়ামী লীগ) জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের কী অবস্থা হবে। সে জন্য তারা ভোটেও যেতে চায় না। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেই হবে। দেশে সেই নির্বাচন ভবিষ্যতে অবশ্যই হবে ইনশাল্লাহ।দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, সুশাসন, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও জনগণের নিরাপত্তা নেই। আইনের শাসনও নেই। আদালতে গেলে আমরা (বিরোধী দল) জামিন পাই না। আজকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার এ অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল, তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়ে পারোয়ানা জারি করা হয়েছে। সে বিপদের মধ্যে আছে। অ্যাডভোকেট পাপিয়া আদালতে হাজিরা দিতে গেছে, তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা মনে করে জেলে ভরে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে শেষ করা, বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে। এতে কোনো লাভ হবে না।আসন্ন বার কাউন্সিল নির্বাচনে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে বিজয়ী করার আহ্বানও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।দলের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, আজকে সরকার খবরের কাগজগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। বিএনপির নামে উল্টাপাল্টা, মিথ্যা-বানোয়াট যা মর্জি হচ্ছে, তা লিখছে। ওইসব তাদের বানোয়াট ও মিথ্যা। আমি বলতে চাই, বিএনপি শক্তিশালী ছিল, আছে এবং ইনশাল্লাহ থাকবে। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে, এ দলে কোনো বিভেদ নেই।দলকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলকে সচল রাখার জন্য পুনর্গঠন করতে হয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা করতেই হয়। এটাই আমরা করছি। সে জন্য বিএনপি শেষ হয়ে গেছে, বিএনপি নেই বা বিএনপি শক্তিশালী হতে পারছে না, এটা ঠিক নয়। আমরা ঠিক আছি। আমরা শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি।ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দলসহ সব সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব এনে পুনর্গঠিত করা হবে বলেও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে দেশ নেই দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, হাসিনার নিয়ন্ত্রণে নয়, পুলিশের নিয়ন্ত্রণে দেশ চলছে। পুলিশ বলছে যে আমরা এ সরকারকে টিকিয়ে রেখেছি। আমরা সবকিছু করি। ছাত্রলীগ হয়ে গেছে দৈত্য। একদিকে পুলিশ অন্যদিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মিলে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা বলতে চাই, বিএনপি জনগণের দল। একে শেষ করা যাবে না।তিনি বলেন, এর আগে ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল আওয়ামী লীগ। এবার যদি ক্ষমতা থেকে বিদায় হয় তাহলে তা আর আওয়ামী লীগ থাকবে না। মুসলিম লীগের মতো টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। এ সময় রাজধানীতে এক নারী পুলিশ তার সহকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছনার ঘটনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।সরকার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কমিশন খায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, হাসিনা কেবল স্বৈরাচারীই নন। তিনি খুনি। গুম-হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম থেকে যতজন গুম হয়েছে, খুন হয়েছেন সব খুন-গুমের সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত। আওয়ামী লীগ হল সন্ত্রাসী, লুটেরা দল। তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী, আইনের শাসন ও মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করার দল।তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার সন্ত্রাসের কথা বলে। তাদের সরকারে একদল দুই দল থেকে আসা ব্যক্তিরা মন্ত্রী হয়েছেন। এরা কী সন্ত্রাসী নয়। এরা অতীতে কত মানুষ হত্যা করেছে।সংসদ সম্পর্কে তিনি বলেন, একটা সংসদ বসিয়েছে। এটা জনগণের সংসদ নয়। ওখানে শুধু আমাদের বিরুদ্ধে গালমন্দ করা হয়। আমরা সংসদের বাইরে।দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে প্রত্যাশা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আসবেও। তবে খুব বেশি দেরি হবে বলে সেটাও না। আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে। আপনারা একটু ধৈর্য্য ধরুন।খালেদা জিয়া বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, উচ্চ আদালত সব সময় স্বাধীন ছিল। তিনি বলেছেন, ছিল। তার মানে এখন নেই- প্রশ্ন করেন খালেদা জিয়া। প্রধান বিচারপতি আরও বলেছেন, নিম্ন আদালত নির্বাহী বিভাগের হাতে। আমি প্রধান বিচারপতির এ কথার পর বলছি, মানুষ আজ কোথাও ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। দলীয় বিচারপতি নিয়োগের ফলে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবিএম জাকারিয়া, সাধারণ সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন, সমিতির সাবেক নেতা আবদুর রহীম, কামরুল ইসলাম, আবদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া, বর্তমান সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীসহ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।