শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আরও ক্ষমতা পাচ্ছে সংসদ

w020080529488668445892_24951

বিচারপতিদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহা হিসাব-নিরীক্ষক (সিএজি) ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অপসারণের ক্ষমতাও পাচ্ছে জাতীয় সংসদ। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের পদ্ধতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশন, অন্য নির্বাচন কমিশনার, দুদক কমিশনার, পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং সিএজি অপসারণের পদ্ধতি একই। তাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে গেলে এসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অপসারণের ক্ষমতাও সংসদ পাবে।নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মহা হিসাব-নিরীক্ষক অপসারণের বিষয়ে সংবিধানের ১১৮, ১৩৯ ও ১২৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-‘সুপ্রীম কোর্টের কোন বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত (ইসি, পিএসসি, সিএজি) তারা অপসারিত হবেন না।’ সংবিধানের ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ বা অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সোমবার মন্ত্রিসভা ‘সংবিধান (ষষ্ঠদশ সংশোধন) আইন, ২০১৪’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এ ক্ষেত্রে অন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অপসারণ ক্ষমতাও সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের হাতে যাবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনেই এ-সংক্রান্ত বিলটি পাস হতে পারে।এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্দীন মালিক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যৌক্তিকভাবেই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে গেলে অন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তথা নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও সরকারি কর্ম কমিশনের অপসারণের ক্ষমতাও সংসদের কাছে যাবে। তিনি বলেন, কেননা এসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অপসারণ ও বিচারপতিদের অপসারণ একইভাবে হয়। তিনি বলেন, সব ক্ষমতা যদি সংসদের কাছে যায়, তবে সংবিধান ভাবসাম্য হারাতে পারে। এটা আমাদের সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী। তবে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকার কী করে তা-ও দেখার বিষয়।অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের অপসারণ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিলের সংশোধনী পাস হলে বিচারপতিদের মতো ইসিকে অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে। আগে কমিশনকে অপসারণের সুযোগ ছিল না। আগামীতে তা পারবে। সাবেক এই কমিশনার বলেন, বিচারপতিদের অপসারণে বর্তমানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রয়েছে। তা বাদ দিয়ে সংসদ এ ক্ষমতা পেলে তো কোনো রক্ষাকবচ থাকবে না। বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্তে রূপ পাবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, ‘বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ পেলে আমাদেরও একইভাবে অপসারণ করা যাবে।’ সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদবলে বিচারপতিদের অপসারণের ‘পদ্ধতি’ ইসির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ অনুচ্ছেদের ৫ ধারায় বলা হয়েছে- ‘সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে : তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রীম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না।’ অন্যদিকে সংবিধানের ১২৯ অনুচ্ছেদের ২ ধারায় মহা হিসাব-নিরীক্ষক বিষয়ে বলা হয়েছে- ‘সুপ্রীম কোর্টের কোন বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত মহা হিসাব-নিরীক্ষক অপসারিত হইবেন না।’আর সংবিধানের ১৩৯ অনুচ্ছেদে ২ ধারায় সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিষয়ে বলা হয়েছে- ‘সুপ্রীম কোর্টের কোন বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্য কোন সদস্য অপসারিত হইবেন না।’ তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের বিষয়ে ৬৪ অনুচ্ছেদের ১ ধারায় বলা হয়েছে- ‘সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্য কোন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল-পদে নিয়োগদান করিবেন।’ তবে তার ক্ষেত্রে অপসারণ একই পদ্ধতি কি না তা স্পষ্ট করা হয়নি সংবিধানে।উল্লেখ্য, সোমবার বিচারপতিদের অপসারণ বা অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষষ্ঠদশ সংশোধন আইন, ২০১৪ মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে বর্তমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর স্থলে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হবে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এ-সংক্রান্ত বিলটি উপস্থাপিত হবে এবং বিলটি পাস হলে তিন মাসের মধ্যে আইনে পরিণত করা হবে।