শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আইভীকে দুষলেন শামীম

36422_f5

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হওয়ার পর এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, ‘গডফাদারদের’ ওপর দোষ চাপিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া র‌্যাব সদস্যরা দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তারপরও আইভী ‘গডফাদাররা জড়িত’ বলে মন্তব্য করছে। শামীম ওসমান বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির পরও যখন সে এ কথা বলছে, এজন্য আমার মনে হচ্ছে সে কাউকে না কাউকে বাঁচাতে চাইছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শামীম ওসমান তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটির সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, একদিন আগে গত সোমবার নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইভী সাংবাদিকদের বলেন, সাত খুনের নেপথ্যে নারায়ণগঞ্জের গডফাদাররা জড়িত। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শামীম ওসমান বলেন, উনি এবার আমার নাম উচ্চারণ করেননি। প্রথম প্রথম আমার নাম বলতেন। এখন গডফাদার বলছেন। আগামীতে গডফাদারও বলবেন না। নারায়ণগঞ্জের এই এমপি বলেন, আমি ওকে এত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি না। সে যদি আমাকে বা আমাদেরকে গডফাদার বুঝিয়ে থাকে, তাহলে তার উচিত ছিল তদন্তকারীদের কাছে তথ্যপ্রমাণ হাজির করা। মেয়র আইভীকে দুর্নীতিগ্রস্ত উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, আইভী যে দুর্নীতিবাজ তা তিনি যে কোন সময় প্রমাণ করে দিতে পারেন। নারায়ণগঞ্জে সত্যিই কোন গডফাদার আছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভাই মানুষ মারল র‌্যাবে যাইয়া, লোক মরলো আমার, আর গডফাদার হইলাম আমরা। শব্দটা তৈরি করেছিল একটা পত্রিকা। গডফাদার আছে কি নেই, আপনারাই তার বড় সাক্ষী। তিনি দাবি করেন, সারা দেশের মানুষ যতটা নিরাপদ, নারায়ণগঞ্জের মানুষও ততটাই নিরাপদ। নারায়ণগঞ্জ দেশের অনেক জায়গার চেয়ে শান্তিপূর্ণ এলাকা। আর কিলিং তো ওয়াশিংটন ডিসিতেও হয়। মেয়র আইভী এর আগে ত্বকী হত্যার ঘটনাতেও তাকে জড়াতে চেয়েছেন দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আজ হাইকোর্টের কাছে আবেদন করছি, এই ঘটনার মতো ত্বকীর ঘটনারও তদন্ত করা হোক। তিনি বলেন, রানা ও আরিফের মতো কর্মকর্তারাই ত্বকী হত্যার তদন্ত করেছে। একজন দুর্নীতিবাজ দিয়ে তদন্ত কিভাবে সুষ্ঠু হয়- তা আমার প্রশ্ন। শামীম ওসমান বলেন, নূর হোসেন তার দলের লোক হলেও তার লোক নন। বরং মেয়র আইভীই ওই কাউন্সিলরকে বড় বড় পদে বসিয়ে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। এখন সে নূর হোসেনকে আমার লোক সাজাতে চেয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করেন, সে কাকে সেইভ করতে চাইছে? সাত খুনের ঘটনায় নূর হোসেন জড়িত বলে মনে করেন কিনা – এমন প্রশ্নে শামীম ওসমান বলেন, আমার মনে হয়, কোন না কোনভাবে সে ইনভলভড, আগে হোক বা পরে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। শামীম বলেন, আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে আজকেই নূর হোসেনকে দেশে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতাম। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে শামীম ওসমানের সঙ্গে নূর হোসেনের ফোনালাপ হয়। সেই ফোনালাপ গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছিল। পরে ফোনালাপের কথা স্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শামীম বলেন, সে বলেছে, আপনি আমার বাপ লাগেন, আমি লেখাপড়া করি নাই, আমারে মাফ করেন ভাই। তার কথাতেই প্রমাণ হয়, আমি তাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেইনি। আমি পরে কিছু কথা বলেছিলাম, আমি তাকে সারেন্ডার করতে বলেছিলাম, সেগুলো ক্লিপে নাই।
তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের এই এমপি বলেন, ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই মন্তব্য করেছিলাম, সর্ষের মধ্যে ভুত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই-একজন কর্মকর্তা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমার কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এক ঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক ঘণ্টা না, আমি আধা ঘণ্টার মধ্যে জানতে পেরেছি র‌্যাব তাদের তুলে নিয়ে গেছে। ওটা আমার নির্বাচনী এলাকা। আমার নির্বাচনী এলাকার পাগলও আমি চিনি। আর সাধারণ মানুষ কিন্তু এলাকার নেতাকেই আগে খবর দেয়। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে গেছে তখন তারা তো আমার কাছেই আসবে। তিনি বলেন, আগামী দিনে যাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা আর না হয় সে জন্য কমিটিকে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। শামীম প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, সাত জনের শরীরে ইট বেঁধে পেট কেটে নদীতে ফেলে দেয়ার পর সবগুলো লাশ একসঙ্গে কিভাবে ভেসে উঠলো? তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার কোন চেষ্টা থাকতে পারে। শামীম ওসামনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান শাজাহান আলী মোল্লা। তিনি বলেন, স্থানীয় একজন এমপি ও একজন সাক্ষী হিসেবে শামীমের জবানবন্দি নিয়েছি আমরা। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম ওসমান আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে তিনি একজন সংসদ সদস্য। এলাকার অনেক খুঁটিনাটি উনি জানেন। এ কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, পরামর্শ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। ওই ঘটনা আমাদের সবাইকে নাড়া দিয়েছে। তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা কাজ শেষ করবো। সত্য ঘটনা উদঘাটন করে প্রতিবেদন দেবো। সাত খুনের ঘটনায় শামীম ওসমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কোন প্রশ্ন করা হয়েছিল কি না জানতে তিনি বলেন, এটাও আমাদের তদন্তের একটি অংশ। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, আগামী ৯ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন তারা।