দুু’দফা শুনানির পর বহুল আলোচিত ডেসটিনির লাইসেন্স বাতিল করল সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডেসটিনিকে কোনো লাইসেন্স না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় চিঠি তৈরি করছে। লাইসেন্স বাতিলের কারণে ডেসটিনি দেশের ভেতরে আর এমএলএম ব্যবসা করতে পারবে না। ডেসটিনির আগের সব এমএলএম ব্যবসা অবৈধ বলে গণ্য হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও বিপুল অংকের অর্থ আÍসাতের অভিযোগ রয়েছে। এরপরও এমএলএম ব্যবসা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ডেসটিনি এমএলএম ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স পেতে মন্ত্রণালয়ে আপিল করে। আইন অনুযায়ী, শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ডেসটিনির আবেদন খারিজ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গ্রাহকের কাছ থেকে এই এমএলএম কোম্পানি বিভিন্ন কৌশলে ৩ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাড়ে ৮ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা আÍসাৎ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে মাত্র ৭শ’ কোটি টাকার। ডেসিটিনিসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা জানান, ডেসটিনির সমবায়ের মোট আট লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহকের ঠিকানা সংরক্ষণ করা হয়নি। এসব গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পাশাপাশি অন্যান্য গ্রাহকের অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ ও ফামস (আরজেএসসি) ব্যাপক তদন্ত শেষে ডেসটিনিরি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের পুরনো ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করা হয়। কিন্তু নতুন এমএলএম আইন তৈরির পর আইনের বিধিমালার ১২ ধারার আলোকে ২ হাজার টাকা ট্রেজারি ফি জমা দিয়ে লাইসেন্স বাতিলের বিষয়টি প–ন ঃবিবেচনার জন্য আপিল করে ডেসটিনি। আইনের বিধিমালায় বলা হয়েছে নির্ধারিত হারে ট্রেজারি ফি জমা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স ফিরে পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করতে পারবে এমএলএম কোম্পানিগুলো। সে সুযোগ গ্রহণ করে ডেসটিনি।
মন্ত্রণালয়ের আপিলে ডেসটিনির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানের ৪৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে। মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির গ্রাহক সাড়ে ৮ লাখ। ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড, ডিএমসিএসএল ও ট্রি প্লানটেশন ২০০০ সাল জন্মলগ্ন থেকে ৫ হাজার ১২১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর বিপরীতে ৪১০ কোটি টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করেছে। সম্পদ ক্রয় খাতে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন ভাবে ব্যবসা পরিচালনার প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়।
জানা গেছে, এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমএমএল আইনের বিধিমালার ১২ ধারার উপধারা (২) মতে, আপিলের ৩০ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে ডেসটিনির বিষয়ে শুনানির দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। প্রথম দফার শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বক্তব্য পেশ করে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই বক্তব্য শুনে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পরে ডেসটিনির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফা শুনানির সুযোগ দেয়া হয়। এরপরও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আইনগত বক্তব্য উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মতে, শুনানির শেষে এমএলএম আইনের উপধারা (৩) মোতাবেক ৪৫ দিনের মধ্যে লাইসেন্স দেয়া বা না দেয়ার ব্যাপারে সরকারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই হিসাবে বাণিজ্যমন্ত্রী গত দু’দিন আগেই ডেসটিনিকে লাইসেন্স না দেয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আইনের বিধান অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে তা জানিয়ে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, ডেসটিনির লোকজন ভিন্ন নতুন নামে এমএলএম ব্যবসার লাইসেন্স নেয়ার চেষ্টা করেছে। এই লাইসেন্স পেলে ডেসটিনির কার্যক্রম নতুন নামে পরিচালনা করা হতো। সেটিও মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাখান করা হয়েছে। কারণ ডেসটিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।জানা গেছে, ডেসটিনির রেজিস্ট্রেশন নম্বর হচ্ছে সি-৪২০৭৫(১৪৩৪)/২০০০। বিগত ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কোম্পানি আরজেএসসি অফিস থেকে নিবন্ধন গ্রহণ করে। কোম্পানির মোট ডিস্ট্রিবিউটর হচ্ছে ৪৩ লাখ ৪০ হাজার, শাখা রয়েছে ১০১টি। এর কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে ২৩৫০ জন ও শেয়ার হোল্ডার ৪৯ জন এবং পরিচালক ১২ জন। অবশ্য ১২ পরিচালক এখন অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত।