ঘরোয়া হকি তো দূরের কথা, জাতীয় দলের খেলা দেখতেও হকি স্টেডিয়ামে দর্শকের দেখা মেলে না। দেশের বাইরে তো এর প্রশ্নই উঠে না। পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে পুস্কর খিসা মিমো দেশের বাইরে কখনই দর্শকদের সমর্থন নিয়ে মাঠে নামেননি। তবে এবার ব্যতিক্রম ঘটছে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে। সেনহাক স্টেডিয়ামে সাত-আট গোল খাওয়ার পরও বাংলাদেশ হকি দলকে সমর্থন যুগিয়েছে তাগিহো গার্লস মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচেও মাঠে এসেছিল তারা। বাংলাদেশের প্লাকার্ড হাতে পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ বাংলাদেশ করে চিৎকার করেছে স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা। এদের উৎসাহে জাপানের সঙ্গে ৮-০ আর মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ৫-১ গোলের হারের পর জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ হকি দল। জয়টি এসেছে ২-১ গোলের। গোল দুটি করেছেন পুস্কর খিসা মিমো ও খোরশেদুর রহমান। পেনাল্টি কর্নার থেকে গোলটি শোধ করেন সিঙ্গাপুরের তান ইং রু। এ জয়ে সপ্তম হওয়ার আশা জেগে রইলো বাংলাদেশের। সপ্তম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ৩০শে অক্টোবর ওমানের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে নাভিদের শিষ্যরা।
জাপান ও মালয়েশিয়ার লজ্জায় পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ হওয়ার আশা আগে ধূলিসাৎ হয়েছে। গতকাল সিঙ্গাপুরের সঙ্গে হারলে সাত, আট হওয়ার আশাও ভেস্তে যেত বাংলাদেশের। সেনহাক স্টেডিয়ামে এমন ম্যাচে শুরুতে বাংলাদেশকে পেয়ে বসেছিল সিঙ্গাপুর। ম্যাচের প্রথম দশ মিনিট তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। মাঝমাঠে প্রবল ভাবে ফুটে উঠছিল জিমি, রানাদের অনুপস্থিতি। ডিফেন্সেও অভিজ্ঞতার ঘাটতি ভুগিয়েছে এশিয়ান গেমসের আগের দুই ম্যাচে। চয়ন, খোরশেদ সুবিধা করতে পারছেন না। তারপরও গোলশূন্য ড্র নিয়ে প্রথম কোয়ার্টার শেষ করে বাংলাদেশ। ২২ মিনিটে পুস্কর খিসা মিমোর কল্যাণে প্রথম গোল পায় বাংলাদেশ। চয়নের ড্রাগ থেকে মিমো, কৃষ্ণার সহায়তায় দারুণ এক গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। গোল করার সঙ্গে সঙ্গে কোরিয়ার স্কুলপড়ুয়া কিশোরীরা মিমো মিমো বলে চিৎকার শুরু করে।
কোরিয়ানদের সঙ্গে তার চেহারার মিল থাকায় অন্যদের চেয়ে আলাদা সাপোর্ট পেয়েছেন এই মিডফিল্ডার। ম্যাচ শেষেও তা লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে মিমোকে ভালবাসারও প্রস্তাব দিয়েছেন। লিডের পরই মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে বাংলাদেশের হাতে। নিলয়, সারোয়ার, মিমোর কল্যাণে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে দুটি পেনাল্টি কর্নারও আদায় করে নেয় তারা। যার একটি পেনাল্টি স্ট্রোকে পরিণত করে গোল করেন খোরশেদ। এছাড়া এই কোয়ার্টার বেশকিছু সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মিমো ও নিলয়। শেষ দুই কোয়ার্টারে আরও চারটি পেনাল্টি কর্নার পায় বাংলাদেশ। পেনাল্টি কর্নারগুলোতে গোলে পরিণত করতে ব্যর্থ হন পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট মামুনুর রহমান চয়ন। জাপান ও মালয়েশিয়া ম্যাচেও একই কাজ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
সহজ এসব সুযোগ নষ্ট করায় শেষে আক্ষেপে পুড়তে দেখা গেছে বাংলাদেশের কোচ নাভিদ আলমকে। ‘এই ম্যাচে আমরা ৫-১ বা ৬-১ গোলে জিততে পারতাম। এমন সুযোগও তৈরি হয়েছিল, যা কাজে লাগাতে না পারায় ব্যবধান কম হয়েছে।’ যদিও ম্যাচ শেষে ভিন্ন কথা বলতে শোনা গেছে সিঙ্গাপুরের কোচকে। দলটির কোচ সুনিল বলেন, বল পজিশনে এগিয়ে ছিল তার দল। পুরো ম্যাচে নিয়ন্ত্রণও করেছে তার শিষ্যরা। তবে গোল না করতে পারায় হারতে হয়েছে।’
২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা সিঙ্গাপুর শেষের কোয়ার্টারে ভাল একটা চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ থেকে ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ব্যবধান কমান তান উইং। বাংলাদেশও সুযোগ পেয়েছিল ব্যবধান বাড়ানোর, কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন কৃষ্ণা। ম্যাচে বেশকিছু সুযোগ নষ্ট করলেও, সপ্তম হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না বাংলাদেশ। প্রথম শনিবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার হারের ব্যবধানটা কম রাখতে চাইছে। আর স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ওমানকে হারিয়ে সপ্তম হওয়ার বাসনা জেগেছে তাদের মনে। গুয়াংজুর এশিয়ান গেমসে অষ্টম হয়েছিল বাংলাদেশ।