বিশেষ প্রতিনিধি :
আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের ওপর হুমকি এসেছে জানিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের ঢাকাসহ সারাদেশে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এদিকে মীরসরাই উপজেলায় ও রাজপথে থাকার ঘোসনা দিয়েছেন ছাত্রলীগ সহ বিভিন্ন আঙ্গসংগঠন। উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানা বলেন প্রধান্মন্ত্রি কে নিয়ে কটুক্তি, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস এর পরও দেশে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে ছাত্রলীগ তা মেনে নেবে না। তিনি ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মিদের রাজপথে সতর্ক থাকার আহবান জানান।
আবার মীরসরাইয়ের আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংগঠন এর সভাপতি নয়ন কান্তি ধুম যানান বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অসম্মান করার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ র্যালি মীরসরাই সদরে অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন অপশক্তি লেলিয়ে দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা বলে মনে করছে সরকার। মঙ্গলবার আলাদা অনুষ্ঠানে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত তাদের ‘প্ল্যান্টেড’ লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। সেই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান এসেছে। সর্বোচ্চ আদালতের আশ্বাসের পরও এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। আদালতের চূড়ান্ত রায় আসা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথাও জানান। তারা বলেন, চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে, তা নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু তারা যদি ভাঙচুর করেন, কারও পরামর্শে ধ্বংসাত্মক কাজ করেন, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী : দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা ধৈর্য ধরছি। ধৈর্য ধরা মানে দুর্বলতা না। আন্দোলনের নামে জনজীবনে দুর্ভোগ সরকার মেনে নেবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবমাননা সহ্য করবে না। অবশ্যই জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ অ্যাকশন নেওয়া হবে। সময়মতো সবকিছুই দেখবেন।
তিনি বলেন, আজ কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশে চলছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়েছেন লন্ডনের পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান। তার দল বিএনপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে তারা রাজনীতি করার চক্রান্ত করছে। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের মতো আবার অরাজনৈতিক আন্দোলনে বিভিন্ন অপশক্তি লেলিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করতে অপচেষ্টা করছে তারেক রহমান। বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি কিছু সমমনা দলও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৮ সালেও আমরা দেখেছি এরা (বিএনপি) সড়ক ও কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে রাজনৈতিকভাবে ফসল কুড়াতে চেয়েছিল। সে ব্যর্থ চেষ্টার পর অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। সেই অগ্নিসন্ত্রাসে কত মানুষ, কত পুলিশ, চালক, নিরীহ যাত্রীদের পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের সে সন্ত্রাসী আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে জনগণের কাছে।
জনগণের শক্ত অবস্থানের কাছে তারা পরাস্ত হতে বাধ্য হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার জন্য দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।’ প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী কোটা আন্দোলনকারীদের কাউকে রাজাকার বলেননি। তাহলে এগুলো কেন হচ্ছে। আদালতের রায় বল প্রয়াগের মাধ্যমে পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এসবের পেছনে একটা মতলবি মহল আছে। এ সময় আদালতের চূড়ান্ত রায় আসা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন ওবায়দুল কাদের।
আইনমন্ত্রী : এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সেমিনারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে কিছুই করবে না। তিনি বলেন, আদালতে যখন একটি বিষয় যায়, তখন সরকার অপেক্ষা করে আদালত কী বলে, তারপর সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার সময় হয়। তাই কোটার বিষয়ে সরকার আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। মন্ত্রী বলেন, সরকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান করবে। কোটার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দেবেন, সরকার সেটা বিবেচনা করবে। সেটা প্রতিপালন করার চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্রছাত্রীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেন। আদালত মূল দরখাস্ত বিবেচনা, নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন। সর্বোচ্চ আদালত তাদের এ আশ্বাস দিয়েছেন। তারপরও এ আন্দোলন করার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে? আন্দোলনের যে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, এর প্রয়োজনীয়তা থাকে?
তিনি বলেন, যৌক্তিক কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুনবেন। কিন্তু তার সরকার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে না। সেই আদর্শ হলো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ নষ্ট করতে পারবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ অসম্মান করতে পারবে না।
এদিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে, তা নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু তারা যদি ভাঙচুর করে, কারও পরামর্শে-নেতৃত্বে ধ্বংসাত্মক কাজ করে, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ধ্বংসাত্মক কিছু করলে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে, রক্ত ঝরালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ করবে। তাদের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) প্রতি তাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানেই ভাঙচুর হবে, রক্তপাত হবে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায়িত্ব পালন করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাস্তা অবরোধ করে দাবি আদায় সঠিক পন্থা নয়। এসব পরিহার করতে হবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আদালতে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। আন্দোলনের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ছে কি না-এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা সঠিকই আছে। তারা চলছে, আপনারা চলছেন, সবই চলছে। তারা (আন্দোলনকারীরা) জায়গায় জায়গায় বিক্ষিপ্ত কিছু কাজ করতে গিয়ে ভুল করছে। আমি সব সময় বলছি তারা ভুল করছে। ছাত্রদের মধ্যে অনেকে পরিপক্ব হয়েছে, অনেকে এখনো পরিপক্ব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে পারদর্শী, তারা শিক্ষার্থীদের পেছনে লেগে গেছেন। বিএনপি ও জামায়াত যারা নির্বাচনে আসে না, তারাও এর পেছনে ইন্ধন দিতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, এরা আমাদের নতুন প্রজন্ম, এরা সঠিক পথে যাবে। তারপরও কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে তারা যদি নেমেই আসে, আমরা আমাদের কাজটি করব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে যারা রাজাকারের পক্ষে স্লোগানে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী যখন আন্দোলন শুরু করে, তখন সেখানে বিএনপি-জামায়াত তাদের ‘প্ল্যান্টেড’ লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। সেই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান এসেছে।
তিনি বলেন, যারা এই আন্দোলন করছে, তারা দেশের সংবিধান মানতে চায় না। দেশের অনগ্রসর গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রের কার্যক্রমে যুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি সংবিধানে আছে। কোটার বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারভুক্ত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটি বুঝেও বিএনপি-জামায়াতের প্ল্যান্টেড যারা, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝাচ্ছে, আবেগ-অনুভূতিকে ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে, এমনকি শেখ হাসিনার বিরূদ্ধেও অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ সময় আওয়ামী লীগকে দেশ পাহারা দিতে হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা নির্বাচন ভন্ডুল করতে চেয়েছিল, সেটি না পেরে কখনো কোটা, কখনো তেল-গ্যাসের মধ্যে ঢুকছে। আর আমরা নির্বাচনের আগে রাজপথে থেকেছি, জয়লাভ করেছি বলে ঘরে বসে থাকা নয়, এখন দেশ পাহারা দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, দেশবিরোধী অপশক্তি যখন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তরুণদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বেদিমূলে আঘাত হানার চেষ্টা করছে-তাদের রুখে দিতে রাজপথে থাকতে হবে, দেশ পাহারা দিতে হবে।