বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

desh

ফিলিপাইনে এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন হাইয়ানে প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশংকা করছে দেশটির প্রশাসন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে ঘণ্টায় ২৭৫ কিলোমিটার বেগের ঝড়োহাওয়া নিয়ে দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে আঘাত হানে ভয়াবহ এ ঝড়।এর আগে শনিবার প্রাথমিক হিসাব করে দেশটির রেডক্রস জানিয়েছিল হাইয়ানের কবলে প্রায় ১২শ’ লোক নিহত হয়েছে। তবে সেই সঙ্গে তারা এটিও জানায়, কয়েক দিন যাওয়ার পরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য দেয়া সম্ভব হবে।প্রলয়ংকরী এ ঝড় দ্বীপপুঞ্জের পুব থেকে পশ্চিমে যাওয়ার পথে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ সময় ৪৫ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় উপকূলীয় এলাকা। হয়ে যায় লণ্ডভণ্ড। ভারি বৃষ্টিতে ভূমিধসও ঘটে। যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হাইয়ানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লিতি প্রদেশ। এ প্রদেশের তাকলোবান শহর এখন ধ্বংসযজ্ঞের এক নাম।লিতির গভর্নরের বরাত দিয়ে প্রাদেশিক পুলিশের প্রধান এলমার সোরিয়া বলেন, কেবল পূর্বাঞ্চলেই ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা। ঘরছাড়া হয়েছে কয়েক লাখ লোক। বিস্তীর্ণ এলাকা ঢেকে গেছে জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে উঠে আসা কাদা আর আবর্জনার নিচে। ২ লাখ ২০ হাজার লোকের শহর তাকলোবানের প্রশাসক টেকসন লিম জানান, কেবল তার শহরেই নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।এলমার সোরিয়ার মতে, হাইয়ান যাত্রাপথে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বাড়িঘর ও স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গেছে। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে এবং ধসে পড়া ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ঝড়ে বিধ্বস্ত গাড়ি একটার উপর আরেকটা পড়ে আছে। বাড়িগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।ফিলিপাইন রেডক্রসের সেক্রেটারি জেনারেল গেনডোলিন প্যাং জানান, তাকলোবানে হাজারের বেশি মানুষের মৃতদেহ পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। এগুলো তীরে এনে গণনা করা হচ্ছে। সামার প্রদেশে দেখা গেছে আরও দু’শর বেশি মৃতদেহ। ৪০ হাজার জেলের এ প্রদেশেই প্রথম আঘাত হানে হাইয়ান।
তাকলোবানের বিধ্বস্ত জনপদ দেখে জাতিসংঘের দুর্যোগ মূল্যায়ন সমন্বয় দলের প্রধান সেবাস্তিয়ান রোডস স্ট্যাম্পা বলেন, সর্বশেষ ভারত মহাসাগরে সুনামির পর এ মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ আমি দেখেছিলাম। ২০০৪ সালের ভূমিকম্প ও তার প্রভাবে সৃষ্ট সুনামিতে ক্ষয়ক্ষতির তুলনা করে একথা বলেন তিনি। দেশটির নৌবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা জিম আরিস আলাগো বলেন, জলোচ্ছ্বাসে বিমানবন্দরও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ফিলিপাইনের জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার মুখপাত্র মেজর রে ব্যালিডো বলেন, ঝড়ের পর ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এখনও ফেরি ও বিমান চলাচল শুরু না হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতায় কাক্সিক্ষত গতি আসছে না। মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য কর্মকর্তাদের শুধু রেডিওর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।ফিলিপাইনের অনুরোধে সামরিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল জানান, প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডকে সেখানে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ফিলিপাইনের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।গত বছর মিন্দানাও দ্বীপে টাইফুন ভোপায় ১১শ’ মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি প্রায় একশ’ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছিল। সেখানে ১৯৭৬ সালে ৭ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে ৮ হাজার লোক নিহত হয়। হাইয়ানের আঘাতে ১০ হাজার লোকের প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত হলে এটি হবে ফিলিপাইনের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন।
উৎস- যুগান্তর

Leave a Reply