বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

হ.শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ হচ্ছে

বিমান পরিবহনের চাহিদা পূরণ এবং আন্তর্জাতিকমানের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩৯৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিব সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ থেকে ১১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পরবর্তী বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ৯ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ একটি শক্তিশালী প্রকল্প মনিটরিং ইউনিট গঠন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় অন্যান্য দেশের পরিবর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করা এবং প্রকল্পের ফিজিক্যাল ও প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে ব্যয় কমিয়ে নিয়ম অনুযায়ী যথাক্রমে ২ ও ৮ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে।

কিন্তু বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকার ও জাইকার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক এবং জাইকার স্ট্যাডি টিম প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করেছে। এর ভিত্তিতেই মিউনিটস অব ডিসকাশন (এমওডি) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ অবস্থায় বিষয়টি একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ৮টি বিমানবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ। এর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দেশের অন্যতম। বাংলাদেশে ১৭টি বিমান সংস্থার বিমান চলাচল করছে এবং এ বিষয়ে ৫২টি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। এ বিমানবন্দরের বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী পরিবহন হ্যান্ডলিং সক্ষমতা রয়েছে। দেশের বিমান পরিবহন চাহিদা বিবেচনায় এটির অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। বিদ্যমান বিমান প্যাসেঞ্জার টার্মিনালটির মাধ্যমে আধুনিক ও বড় বোয়িং ৭৪৭-৮ এফ, ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য বিমানবব্দরটি যথেষ্ট নয়।

২০১৫ সালে কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের দুটি পরামর্শক ফার্ম বিমানবন্দরটি সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত মাস্টার প্ল্যান আপডেট করা হয়েছে। এছাড়া নতুন তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো ডিজাইন করা হয়েছে। এয়ার ট্রাফিকের বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় বর্তমান টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা ২০১৮ সালের মধ্যে পরিপূর্ণ হবে। ২০১৫ সালের ১৪ মিলিয়ন যাত্রী ২০৩৫ সালের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন যাত্রী বৃদ্ধি পাবে বলে সমীক্ষায় ওঠে এসেছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় বিমানবন্দরটিতে একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- টার্মিনাল ও সিকিউরিটি ইক্যুপমেন্টসহ ২ দশমিক ২৬ লাখ বর্গমিটারের নতুন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ, ট্যানেলসহ ৬২ হাজার বর্গমিটার মাল্টি লেবেল কার পার্কিং তৈরি, ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার নতুন কার্গো কমপ্লেক্স, ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার ভিভিআইপি কমপ্লেক্স তৈরি, ১ হাজার ৮৪০ বর্গমিটার রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ও ইকুইপমেন্ট ক্রয়, ৬৬ দশমিক ৮৭ লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৪ দশমিক ৯৯ লাখ বর্গমিটার অ্যাপ্রোন তৈরি, এক লাখ বর্গমিটার ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ, ১ লাখ ৫৮ হাজার বর্গমিটার সোল্ডার তৈরি, ৮ লাখ ৩৮ হাজার বর্গমিটার জিএসই রোড এবং ৩৩ হাজার বর্গমিটার সার্ভিস রোড তৈরিসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।