বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

স্বৈরাচারের বাপ এই সরকার বিদায় হবে – খালেদা জিয়া

1_43436

 

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, অল্প সময়ের মধ্যে এই সরকার বিদায় নেবে। ক্ষমতার মোহ ছেড়ে সরকারকে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচারের বাপ হচ্ছে এই সরকার। দুই স্বৈরাচার মিলে এখন দেশটাকে লুটেপুটে ও গিলে খেতে বসেছে।’ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় সরকারই দায়ী।  ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ জাতীয় নির্বাচনের পর এই প্রথম ১৮ দল সমাবেশ করল। সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর এই মাঠে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া।
গতকাল সভাপতির বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া প্রহসনের নির্বাচন মেনে না নেওয়ায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনই বলে দিয়েছে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচনের পরের দিন ৬ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, যাঁরা ভোটার, তাঁরা সেদিন ভোটকেন্দ্রে যাননি। পত্রিকার সেদিনের শিরোনাম পড়ে শুনিয়ে তিনি বলেন, “এই সরকার ‘কলঙ্কিত’ সরকার। নির্লজ্জ সরকারকে বলব, অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন”। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তারা ভেবেছে আমাদের ওপর হামলা-মামলা দিয়ে সরকারের মেয়াদ বাড়াবে; কিন্তু তা হবে না। এই সরকারের মেয়াদ খুবই ক্ষীণ, খুবই অল্প।’নির্বাচনে মানুষের সমর্থন না পেয়ে ব্যর্থতা ঢাকতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি প্রধান। খালেদা জিয়া বলেন, তারা হিন্দু ভাইদের বাড়িঘরে হামলা করছে, তাদের ওপর নির্যাতন করছে, বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করছে, দখল করছে। সরকার ব্যর্থ হয়ে এখন যৌথ অভিযানের নামে একের পর এক ‘হত্যা, গুম’ শুরু করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। যেখানে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি, সেখানে এই নির্বাচন কমিশন তিন দিন সময় নিয়ে ৪০ শতাংশ ভোট দেখিয়েছে।দশম সংসদ নির্বাচনের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, আগামী ২৯ জানুয়ারি যে দশম জাতীয় সংসদ বসবে, সেখানে কোনো সংসদ সদস্য থাকবে না; বরং কিছু সং বসে থাকবে। খালেদা জিয়া বলেন, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তারা কী করে সংসদে বসবে? তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি মন্ত্রিপরিষদেও আছে আবার বিরোধী দলেও থাকতে চায়। সত্যিকার অর্থে এই সংসদে কোনো বিরোধী দল নেই। তিনি আগামী ২৯ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল সফল করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় সমাবেশ দুপুর সোয়া ২টায় শুরু হলেও গতকালের সমাবেশে শরিক দল জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সংগঠন শিবিরের কোনো ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যায়নি। জোটের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা বক্তব্য দিলেও জামায়াতের কোনো নেতা বক্তব্য দিতে যাননি। গণসমাবেশে জামায়াত নেতার নির্ধারিত আসনে জায়গা পান জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ। বিকেল ৪টায় খালেদা জিয়া সমাবেশস্থলে উপস্থিত হলে নেতা-কর্মীরা করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। বিএনপি নেত্রী হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব আহসানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক ও সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম, যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, গণ ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, নির্বাহী কমিটির সহ তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আবু সাইদ খান খোকন, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাৎ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ। এ ছাড়া ১৮ দলের উপস্থিত ছিলেন, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জে. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রমুখ।
সমাবেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (একাংশ) কাজী জাফর আহমদ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ শতাংশের বেশি ভোট কাস্ট হয়নি। এতে করে আমরা একটা সফলতায় পৌঁছেছি। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেটা এখন প্রমাণিত।
শেখ হাসিনাকে শতকরা ৫ জনের প্রধানমন্ত্রী বলে মন্তব্য করেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি ড. অলি আহমেদ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সিলেক্টেড পার্লামেন্টের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ৯৫ শতাংশ মানুষ এই নির্বাচনে ভোট দেয়নি। তিনি দাবি করেন, যেখানে ৩টি ভোট পড়েছে সেখানে ১৩০০ দেখানো হয়েছে। যেখানে ৭টি ভোট পড়েছে সেখানে ১৭০০ ভোট দেখানো হয়েছে।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সকাল-বিকেল-দুপুরে যাঁদের দেখবেন তাঁদের চেহারা যদি আপনাদের চেহারার সঙ্গে না মেলে, মনে করবেন এরা ভারতের লোক। আওয়ামী লীগের ভাড়াটে। এ সরকারের পতন ও নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৫৩ আসনে যেসব প্রার্থী অংশ নেননি, তাঁদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। মামলা-হামলা সহ্য করে যাঁরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাই।ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশের মানুষ সাজানো নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৪৭টি আসনে ৪ শতাংশ ভোটকে ৪০ শতাংশ ভোট বানিয়েছে। এর মাধ্যমে একটি ভুয়া সরকার বানিয়েছে। তিনি বলেন, একদলীয় সরকার দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। সামনে আমরা বহুদলীয় সরকার গঠন করব।বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, ‘আমরা নাকি ট্রেন মিস করেছি। সরকারকে বলতে চাই, যে ট্রেনে জনগণ চড়ে না। সেই ট্রেনে ১৮ দল যায় না। আমরা ট্রেন মিস করিনি।’সমাবেশে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানের সমর্থন করেছে, তারা পাকিস্তানের রাজাকার। আর ২০১৪ সালে যারা ভারতের সমর্থন করছে, তারা ভারতীয় রাজাকার।
উৎস- কালেরকন্ঠ

Leave a Reply