বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

‘ সুরাকসিত চেলি, হামরো জিম্মেউয়ালী ’ : নেপালে গ্লোবাল চেইঞ্জ ক্যাম্পেইন

: মোহছেনা মিনা :

10253184_532136853570048_1939833796_n

বিদেশের মাটিতে আড়াই মাস ব্যাপী গ্লোবাল চেইঞ্জ ক্যাম্পেইন কোর্স ‘সেইফ সিটি ফর ওমেন’ শীর্ষক বিষয় ভিত্তিক ক্যাম্পেইন সম্পন্ন হলো। নেপালের কাঠমুন্ডুর গ্লোবাল প্লাটফর্মে একশন এইড কর্তৃক আয়োজিত এ ক্যাম্পেইন কোর্সে বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা ১৩ জন একটিভিস্টা অংশগ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ থেকে আমি (মোহছেনা মিনা), আহনাফ তামিদ ও আসাদুল হক অমি, পাকিস্থান থেকে গোলাম জিলানী ও মাহমুদ বাজাই, ডেনমার্ক থেকে এমিলি এবং নেপাল থেকে শিশির, এঞ্জেলা, আসমা, বিনীতা, কিরণ ও সুরাজ। আমাদের ট্রেইনার হিসেবে ছিলেন একশন এইডের নীলস, আমান, বিকাশ ও জিনিতা।

আমাদের ক্লাস চলতো প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। ইংরেজি লেকচারের মাধ্যমেই ক্লাসে ক্যাম্পেইনের বিভিন্ন টুলস নিয়ে আলোচনা করা হতো। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও পরে ঠিক মানিয়ে নিয়েছিলাম। ক্লাসে মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষরা বিভিন্ন ধরনের গেম খেলতেন আমাদের সাথে। প্রতিটি সেশনে ব্রেইন স্টর্মিং থাকায় আমরা খুব ভাল করেই বিষয়বস্তুগুলো বুঝতে পারতাম। “এখঙইঅখ ঈঐঅঘএঊ ইঊঈঙগঊ অ ঈঅগচঅওএঘঊজ”  বইটি আমাদের গাইডলাইন হিসেবে সহায়তা করেছিল।

শনিবার ও রবিরার ছিলো ছুটির দিন। গ্লোবাল চেইঞ্জ কোর্স ছাড়াও  গ্লোবাল প্লাটফর্মে ছিল গ্লোবাল সিটিজেনশীপ ও গ্লোবাল ভলান্টিয়ার কোর্স। প্রতি মঙ্গলবার সকল কোর্সের অংশগ্রহনকারীরা প্লাটফর্মের সামনে পার্রিং এড়িয়াতে মিলিত হতাম হাউজ মিটিং এর জন্য। প্রশিক্ষকরা আমাদের নতুন নতুন বিষয় শিখাতেন। প্রায় ১ ঘন্টার শেসন শেষে সকলের মিলে ক্লিনিং এ ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। এই দিনটা সকলের নিকট ক্লিনিং ডে হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতি বুধবার সন্ধায় অনুষ্ঠিত হতো কালচারাল নাইট। সকল দেশের কালচার নিয়ে আয়োজন করা হতো কালচারাল অনুষ্ঠান।

কোর্সের শেষের দিকে আমরা ৩ সপ্তাহের একটি ক্যাম্পেইন করি। এই ক্যাম্পেইনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছিল “হামরো চেলি” অর্থাৎ আমাদের নারী (এখানে চেলি বলতে শুধু নারী বুঝায় না, যখন কোন নারীকে চেলি বলে সম্বোধন করা হয় তখন তার প্রতি সকলের বোনের মতো একটা দায়িত্ববোধ কাজ করে। তখন সেই নারীকে সকলেই সম্মানের চোখে দেখতে হয়, তার প্রতি কোন অসম্মান করা যায়না)।

এ ক্যাম্পেইনের ভিশন হলো অবিচার, বৈষম্য ও হয়রানি মুক্ত একটি শহর গড়ে তোলা। যেখানে নারীকে যথার্থ মর্যাদা ও প্রতিক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়া হয়। উদ্দেশ্য হলো ২০১৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে আমরা পাবলিক একশনের মাধ্যমে মানুষকে সংঘবদ্ধ করবো এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করবো এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে এডভোকেসি এবং লবিং এর মাধ্যমে নারী যাত্রীদের প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কাজ করে যাওয়া। ক্যাম্পেইনে আমরা যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছি তা হলো প্রেস কনফারেন্স, ফ্লাস মব, স্টেনসিল, ফোরাম থিয়েটার, সেফটি ওয়াক, সেফটি জার্নি, ক্যান্ডেল র‌্যালি, ওয়ার্কসপ, ফ্লাইয়ার ডিসট্রিবিউশন, পোস্টার ইত্যাদি।

‘নারীদের জন্য নিরাপদ শহর’ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আমাদের এই কোর্সের বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। জনগনের জন্য আমাদের ম্যাসেজ হল – ‘আজ কাঠমুন্ডুর নারীরা উচ্চহারে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, যা আমাদের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই আসুন, আমরা একত্রিত হই এবং এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে জাগ্রত হই। আমাদের অভিযানে যোদান করুন এবং নিরাপদ শহর গড়ায় সহায়তা করুন।’

এসএমএস, কলার টিউন এবং পাবলিক সার্ভিস এনাউন্সমেন্টের মাধ্যমে এই ম্যাজেস জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও আমাদের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে। যেমন- ফেইজবুক পেইজ (ঐধসৎড় ঈযবষর), ফেইজবুক একাউন্ট, টুইটার একাউন্ট ইত্যাদি। আমাদের শ্লোগান- ‘সুরাকসিত চেলি, হামরো জিম্মেউয়ালী।’ অর্থাৎ, নারীদের সুরক্ষা করা আমাদের সকলে দায়িত্ব।

কাঠমুন্ডুতে কর্মজীবি নারীরা ও স্কুল কলেজগামী মেয়েরা প্রতিনিয়ত উন্মুক্ত জায়গায় ও যানবাহনে চলাফেরা করছে। এসব স্থানে তারা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার। নারীদের বিরুদ্ধে এইসব হয়রানি প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের এইসব কার্যক্রম। শুধু কাঠমুন্ডুতে নয়, বাংলাদেশেও এই সমস্যা প্রবল। আর এই সমস্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম চলবে নিরন্তর।

ক্যাম্পেইন শেষে আমরা দুইদিনের জন্য নেপালের বিখ্যাত এবং খুব সুন্দর শহর পোখরায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। পোখরায় না গেলে নেপালের আসল সৌন্দর্যটায় বুঝতে পারতাম না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে নেপাল বাংলাদেশের মতোই অতুলনীয়। পরিশেষে সার্টিফিকেট বিতরনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হলো আমাদের কোর্স।