নাছির উদ্দিন, মীরসরাই ঃ-
একাত্তরের রণাঙ্গণের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। কোন প্রকার লোভ-লালসা ছাড়া কেবল দেশ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে দেশের টানে, মা-মাটির টানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পরবর্তি সময়ে ১৯৮০ সালে জীবন জীবিকার তাগিদে চলে যান সুদূর প্রবাসে। সেখানে দীর্ঘ ৩৫ বছর দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে পরিশ্রম করে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করেছেন। যা আয় করেছেন (৩ মেয়ে ১ ছেলে ও স্ত্রী) পরিবার পরিজন নিয়ে কোনভাবে জীবন অতিবাহিত করেছেন। গত ৪ বছর পূর্বে তিনি একেবারে দেশে ফিরে এসেছেন। গত ৩ মাস থেকে তিনি প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানা সয্যায় রয়েছেন।
বলছি একজন মুক্তিযোদ্ধার কথা। তিনি হলেন- মীরসরাই উপজেলার ১২ নং খৈয়াছরা ইউনিয়নের পূর্ব পোল মোগরা গ্রামের মৃত মনির আহমদের ছেলে রফিউজ্জামানের কথা। এখন তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে শরীরের অর্ধাংশ অবস হয়ে গেছে। ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না। এখন তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অর্থাভাবে ভালো কোন চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না তার। তার পরিবারের দাবী অন্তত মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটা যেন পায়। তার যুদ্ধকালী প্রশিক্ষণ অস্ত্র চালানো, জমাদান এবং সহযোদ্ধা সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মে মাসে ভারতের হরিনা ক্যাম্পের বগাপায় ভারতীয় শিক সেনার হাতে ১ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেণ। এসময় তিনি ৩০৩ রাইফেলস, স্টেনগান ও এম এম গ্রেনেড় চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে এসে যুদ্ধ কালীন ১ নং সেক্টরের মেজর রফিকুল ইসলামের নের্তৃত্বে ও ছোট কমলদহের নিজাম কমান্ডারের নের্তৃত্বে মীরসরাইয়ের বিভিন্নস্থানে যুদ্ধ করেন। তার সহযোদ্ধা হিসেবে রয়েছেন পূর্ব পোলমোগরা গ্রামের সিরাজুল হক, একই এলাকার ছালামত উল্লাহ ও মাঝির তালুক গ্রামের মকছুদ আহমদ। যুদ্ধ পরবর্তি সময়ে তিনি নিজামপুর কলেজে অস্ত্রজমা করেন। গত বছর মুক্তিযোদ্ধা ডাচাই বাচাইয়ের পর তিনি অনলাইনে আবেদন করেন। তাঁর আবেদন নং- ২০৩। তার ছোট ভাই নুরেরজ্জামান জানান, ‘একাত্তরে একটি গাভী গরু ১২০ টাকায় বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে ভাইকে যুদ্ধে পাঠিয়েছি। কিন্তু ভাই জীবনের শেষ সময়ে এসেও এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলো না।’ আরেক ছোট ভাই হোসেনেজ্জামান বলেন, আমিও যুদ্ধে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাই আমাকে বাড়ী দেখা শোনার জন্য রেখে গেল। গত কয়েক বছর পূর্বে ভারত থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একটা কাগজ এসেছিল। সেটা ভাবী (ভাইয়ের স্ত্রী) অজ্ঞাতস্থানে হারিয়ে ফেলেছ।’
মীরসরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহম্মদ বলেন, ‘গত বছর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাইয়ের সময় রফিউজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছিল। তার সাথের যোদ্ধারা তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাক্ষী দিয়েছেন। অনলাইনে আবেদনের পর সমস্ত কাগজপত্রসহ আবেদিত সকলের কাজগপত্র আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট আকারে পাশ হয়ে যাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে তারা মুক্তিযোদ্ধ হিসেবে সরকারী স্বীকৃতি এবং ভাতাভুক্ত হবেন।’