শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মেয়েটা যেন হঠাৎ করেই অনেকটা বড় হয়ে যায়

একটা মেয়ে সাধারনত নিজের বিয়েতে বা গাঁয়ে হলুদে মোটামুটি হাসিখুশি ভাবেই সবার সাথে কথা বলে। কারন তাকে বলতে হয়। মন খারাপ করে থাকলে মানুষ ভাবে- হয়তো পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হয়নি বা বর পছন্দ হয়নি তাই মন খারাপ। আবার বেশি হাসলেও বেহায়া ভাবে। এসব নেগেটিভ কথার হাত থেকে বাঁচার জন্য ঠোঁটে কৃত্রিম একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখে বিয়ের কনেরা। কিন্তু কেও কি বোঝার চেষ্টা করে বিয়ের দিন একটা মেয়ের বুকের ভেতর কতটা ঝড় বয়ে যায়? হলুদের স্টেজে খেলার পুতুলের মতো বসে থেকে সেই ছোট্টবেলার খেলার সাথী টাকে খোঁজে, যার সাথে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেড় ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মেয়েটার খুব ইচ্ছে করে, সেই খেলার সাথীটা এসে যদি গাঁয়ে একটু হলুদ মেখে দিতো! গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আনন্দে মেতে থাকে সবাই আর মেয়েটা ভাবে তাকে এই আনন্দ উৎসব ছেড়ে চলে যেতে হবে এক অচেনা ভূবনে, যেখানে এই কাছের মানুষগুলো থাকবেনা। বিয়ের দিন ঘরের প্রতিটা কোণায় মেয়েটা তার হারানো স্মৃতি খুঁজে বেড়ায়।তখন নিজের ঘরের একটা ছোট্ট টিকটিকিকেও খুব আপন মনে হয়। মায়া লাগে জড় পদার্থ গুলোর জন্যও- নিজের ঘর, পড়ার টেবিল, কলম দানি, অগোছালো আলনা, এমনকি নিজের বালিশটার জন্যও মায়া লাগে। মায়া লাগে নিজ হাতে লাগানো পেয়ারা গাছটার জন্য, বাড়ির উঠোনে সাজানো বাগানটার জন্য, যেখানে রোজ বিকেলে মেয়েটা নিত্যনতুন গাছের গোড়ায় জল দিতো। মেয়েটার খুব ইচ্ছে করে তার বহু বছরের সঙ্গী কোলবালিসটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে, কিন্তু মেয়েটা কাঁদতে পারেনা। মেয়েটার চোখে ভাসতে থাকে বৌছি, দাঁড়িয়াবান্ধা খেলার বিকেলগুলো, দাপাদাপি করা সেই জংলা পুকুর, গামছা দিয়ে মাছ ধরা, শাপলা তোলা, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে কাটানো হাজারো মুহূর্ত, সব মনে পড়ে। মেয়েটা জানে স্কুলের গেইটে দাঁড়িয়ে আর কোনোদিন ঝালমুরি, চটপটি বা ফুচকার আড্ডা হবেনা, হবেনা আইসক্রিম খেতে গিয়ে ড্রেস নষ্ট করা। মেয়েটা মানতে চেষ্টা করে, সে একটা যান্ত্রিক পৃথিবীতে চলে যাচ্ছে, যেখানে তাকে আর ছেলেমানুষী করা মানাবে না, তাকে সবার দায়িত্ব নিতে হবে, একটা সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে। মেয়েটা যেন হঠাৎ করেই অনেক বড় হয়ে যায়, অনেক কিছু বুঝতে শিখে যায়। অবশেষে মেয়েটা যখন কবুল বলে, তার ঠোঁট কাঁপে, দু’চোখ ভেঙে কান্না আসে এই ভেবে যে- আজ থেকে আমার সুখ গুলো বিনামূল্য বিক্রি করে দিলাম। মেয়েটাকে যখন ছেলেটার হাতে তুলে দেয়া হয়, মেয়েটা মেনে নেয়- আজ থেকে আমি আমার স্বাধীনতা হারালাম। মেয়েটা যখন বিদায় নিয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, মেয়েটার খুব ইচ্ছে করে বাড়ির চারপাশটা একবার দেখে নিতে, যেখানে তার শৈশব আর কৈশোর কেটেছে, মেয়েটা ঘোমটার আড়ালে মাথা নিচু করেই তার কাছের মানুষ গুলোর গন্ধ খুঁজে।মেয়েটার তখন খুব ইচ্ছে হয়, ছোটবেলায় যার পুতুলের সাথে তার পুতুলের বিয়ে দিতো, সেই খেলার সাথীটা এসে একবার ওকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদুক, যেই কান্না কোনো বাঁধ মানেনা। মেয়েটার মনে হয়, সে অনন্তযাত্রার পথে পাড়ি জমাচ্ছে। মেয়েটা তখন খুব কাঁদে। কজনইবা সে কান্নার ভাষা বুঝতে পারে। বিদায়বেলায় না চাইলেও মেয়েকে কাঁদতে হয়। তা না হলে সমাজ মেয়েটাকে বেহায়া, নিলাজ বলতে দ্বিতীয় বার ভাবেনা। আবার বেশি কাঁদলে বলে- এমন কান্না শুরু করছো মনে হয় কেও মারা গেছে, সারাজীবনের জন্য তো চলে যাচ্ছোনা, এত কাঁদার কি আছে! কাঁদলেও উপহাস করে, না কাঁদলেও উপহাস করে। সবকিছুর পরেও মেয়েটার চোখে একটা নতুন স্বপ্ন থাকে জীবনসঙ্গী কে নিয়ে। ক’জনের সে স্বপ্ন পূরন হয় তার খবর কেও রাখেনা।

অতঃপর- মেয়েটার সত্যিকারের অনুভূতি কেওই জানতে পারেনা কোনোদিন।।