বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মীরাক্কেলের মঞ্চে চট্টগ্রামের রাসেল

Mirbg_988039842-300x166
বিনোদন ডেস্ক: যতদিন ও দেশে ছিল, যেখানেই যাচ্ছিল ওকে ঘিরে থিক থিকে একটা ভিড় লেগেই ছিল। সবার আগ্রহ-জোবরা গ্রামের ছোট্ট ছেলেটা ওপার বাংলায়ও ‘নাম’ করেছে ফেলেছে।
তাই, একবার যদি তার চাঁদমুখটার দেখা মেলে…
একবার যদি তার পাশে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তোলা যায়…
মানুষের এমন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ ‘ছোট্ট ছেলেটি’ হলেন চট্টগ্রামের ইয়াকুব রাসেল। ২২ বছর বয়সী এ তরুণ ভারতের কলকাতাভিত্তিক স্যাটেলাইট চ্যানেল জি বাংলা’র জনপ্রিয় অনুষ্ঠান মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার সিজন-৯ এর অন্যতম প্রতিযোগী। যার কল্যাণে মীরাক্কেলের মঞ্চ থেকে সারাবিশ্ব শুনেছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা।
ইয়াকুব রাসেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই তার বাড়ি। বেড়ে উঠেছেন এ ক্যাম্পাসেই।
শনিবার (২ জানুয়ারি) যারা জি বাংলা খুলে টিভির সামনে বসেছিলেন তাদের চোখে হয়তো এখনও ভাসছে-ঠোঁটের ওপর দু’পাশে বেশ লম্বা করে নেমে যাওয়া গোঁফ। চীনের বাসিন্দাদের রূপ ধারণ করে হেলে-ধুলে শরীর বাঁকিয়ে মঞ্চে আসছে ছোটখাট গড়নের একটা ছেলে।
এর পরেরটা তো সবারই জানা। ছোট্ট ছেলেটার গলা থেকে একের পর এক বেরিয়ে আসছে বড় বড় হাস্যরস। মঞ্চে তখন ক্ষণে ক্ষণে হাসির রোল। টিভির সামনে যারা ছিলেন তারাও নিশ্চয়ই বুঁদ হয়ে ছিলেন ইয়াকুব রাসেলে। তবে সবার নজর কেড়েছে কৌতুকের ঢংয়ে তার চট্টগ্রামের ভাষায় দেওয়া ‘ডায়ালগ’।
দেশের দর্শকেরা তো মজা পেয়েছেনই। মঞ্চে বিচারক হিসেবে থাকা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা শ্বাসতের মত ঢালিউডের পোঁড় খাওয়া অভিনেতারাও উচ্ছ্বসিত প্রশাংসা করেছেন এ তরুণের। রাসেলের চট্টগ্রামী ডায়ালগে রীতিমত মুগ্ধ ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখাও।
তবে চমকটা তখনও বাকি ছিল। চট্টগ্রামের ছেলে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বেশ। তাই বলে মীরাক্কেলের মঞ্চেও। হুম।
উপস্থাপক মীর চট্টগ্রামের ভাষায় অনুষ্ঠানস্থলের বর্ণনা দিতে বলতেই যেন খই ফোটালেন রাসেল। এক নাগাড়েই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বর্ণনা দিয়ে গেলেন। রাসেল যেন মীরাক্কেলের মঞ্চে একখণ্ড চট্টগ্রাম।
এরমধ্যেই রীতিমতো তারকাখ্যাতি পেয়ে গেছেন এ তরুণ। এপার বাংলা তো বটেই, ওপার বাংলা থেকেও অনেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাকে।
ইয়াকুব রাসেল বলেন, ‘আমার একটা শো দেখানোর পরেই দর্শকদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। সবাই অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি সবার ভালোবাসা নিয়ে শেষ পর্যন্ত যেতে চাই।’
তবে দেশে যারা কৌতুক নিয়ে কাজ করেন তাদের কাছে পুরাতন নাম ইয়াকুব রাসেল। দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের রিয়েলিটি শো হা-শো’র সিজন-২–এর সেরা দশে ছিলেন তিনি। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইয়াকুব রাসেল মানেই ‘হাসির রাজা’।
কীভাবে এতদূর আসা? জানতে চাইতেই ইয়াকুব রাসেল বলেন, ‘ছোটকাল থেকেই মানুষকে হাসাতে ভালোবাসি। সেজন্য নিজে নিজে কৌতুক বানাতাম। এক বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় হা-শো সিজন-২ তে অংশগ্রহণ করি। প্রতিযোগিতায় সেরা দশে ছিলাম। এভাবেই এগিয়ে যাওয়া।’
শুধু কি মঞ্চেই কৌতুক শুনিয়ে বেড়ান। মোটেও না। চিটাগাং কমেডি ক্লাব নামের একটি সংগঠনের অন্যতম ‍উদ্যোক্তা তিনি। যে ক্লাবের উদ্দেশ্যে হাসির মাধ্যমে নগরজীবনে সংকটের বোঝা হালকা করা। প্রায়সময় নগরীর বিভিন্ন জায়গায় কৌতুক করে বেড়ান তারা। তাদের এ অনুষ্ঠান বিনাখরচে উপভোগ করতে পারেন দর্শকরা।
রাসেলের ভাষায়, ‘বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে মানুষের মনও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। মানুষ ভুলতে বসেছে হাস্যরস। কিন্তু হাসলে মানুষ অনেকটা সুস্থ থাকে। তাই আমার এ প্রচেষ্টা।’
মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার শো তে অংশ নিতে নভেম্বরের ৬ তারিখ দেশ ছেড়েছিলেন। বেশ কয়েকটি শো করে ২৯ ডিসেম্বর দেশে আসেন। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ৭ জানুয়ারি আবার এক ছুটে কলকাতা। জীবন যেন পাল্টে গেছে এ তরুণের।
মঞ্চের এ দারুণ ক্ষীপ্র ছেলেটা কিন্তু ব্যক্তিজীবনে দারুণ আমুদে। সুযোগ পেলেই বন্ধুদের নিয়ে ঘোরাঘুরি-হই হুল্লোড়-গান আড্ডা-ক্রিকেটে ডুবে যাওয়া। আকারে ছোট হলেও পাড়ার ক্রিকেটে বড় বড় ছক্কা মারতে তার বেশ খ্যাতি আছে। আর হে, নুডলস তার প্রিয় খাবার। এ খাবার পেলে ভাতকে না বলতেও দ্বিধা নেই। স্বপ্ন দেখেন একদিন বড় অভিনেতা হবেন।
অনুষ্ঠানে তার পরবর্তী এপিসোড কখন দেখানো হবে তা নিয়ে আগেভাগে গণমাধ্যমে কিছু বলতে আয়োজকদের বারণ আছে। জানালেন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় জি বাংলায় দেখানো হয় মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার প্রতিযোগিতা।
ইয়াকুব রাসেল যেকোন দিন মীরাক্কেলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবারও হাসির রঙ মিশিয়ে ছুড়ে দেবেন নানা কথামালা। মনটা যাদের ভার হয়ে আছে তারা রাসেলের কৌতুকে মজে সহজেই মন হালকা করে নিতে পারেন।