বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মীরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১৮ লক্ষ টাকা অনিয়মের অভিযোগ : সভাপতি পদ নিয়ে নাটকীয়তা

নিজস্ব প্রতিনিধি :: মীরসরাই উপজেলা সদরস্থ অন্যতম আলোচিত বিদ্যাপীঠ মীরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎের অভিযোগ রয়েছে। উক্ত অনিয়মের অভিযোগ আরো ২ বছর পূর্বে উত্থাপিত হলে ও আজো এই বিষয়ে সরকারি পর্যায়ের কোন তদন্ত হয়নি। প্রধান শিক্ষক দাবী করেন অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয় । আবার এই অনিয়মের তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে বিদ্যালয়ের অর্থ রিফান্ড করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিতে চান বলেন সভাপতি ।

মীরসরাই সদরস্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানিক নানা অনিয়মের অভিযোগ ও কমিটি নিয়ে টানাপোড়নে ক্ষতিগ্রস্থই হবে শিক্ষার্থিরা। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হবে সাধারন মানুষ সহ অভিবাবক মহলের তাই সকল বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন সচেতনমহল সহ বর্তমান পরিচালনা পরিষদের অনেক সদস্য।
উক্ত বিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির অভিবাবক সদস্য মীরসরাই পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, অভিবাবক সদস্য ও মীরসরাই বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর চৌধুরী ও অভিবাবক সদস্য জেবল হোসেন স্থানীয় গনমাধ্যমকমীগনকে লিখিত বক্তব্যে জানান জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভূঞা বিদ্যালয়ের মার্কেট নির্মানের সময় ১২টি দোকানে ২ লক্ষ টাকা করে ২৪ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। আবার ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট ভাউচারে ১৮ লক্ষ টাকা অনিয়ম করে আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের অডিট রিপোর্টেই এই অনিয়ম প্রমানিত হবার পর উক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে সভাপতি মাষ্টার এনামুল হক সহ সদস্যগন নানাভাবে প্রধান শ্ক্ষিককে চাপ প্রয়োগ করলে প্রধান শিক্ষক উক্ত সভাপতিকে বিদ্যালয়ে থেকে সরানোর নানামুখি চেষ্টায় লিপ্ত। এমনটি জনৈক অভিবাবককে দিয়ে আদালতে মামলা করিয়ে ও চেষ্টা তদবীরের অন্ত নেই। অভিবাবক প্রতিনিধিগন প্রধান শিক্ষকের সকল অনিয়েমের সুনির্দিষ্ট তদন্ত দাবী করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে।

অভিভাবকগন গত লিখিত অভিযোগে জানান, মীরসরাই উপজেলা সদরের আমাদের কন্যা সন্তানদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কিছু অসাধু মানুষের কবলে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ। আর্থিক নানা অনিয়মের বিষয় উত্থাপিত হবার পর কমিটির সভাপতি যেন এইসব বিষয়ে আর মাথা না ঘামাতে পারে তার জন্য সভাপতিকে দায়িত্ব পালনে বিঘœ সৃষ্টি করার জন্য প্রধান শিক্ষক নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে নানাভাবে মরিয়া। আর তাই ইতিমধ্যে জনৈক অভিবাবককে দিয়ে আদালতে একটি লিগ্যাল নোটিশ করিয়ে কমিটি স্থগিত করার চেষ্টায় লিপ্ত। অথচ উক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ১৮ লক্ষ টাকার অনিয়মের তথ্য প্রমান সহ তদন্ত রিপোর্ট উত্থাপিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত উক্ত অনিয়মের বিষয়ে ৮ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিমের রিপোর্টে বিদ্যালয়ের মার্কেট নির্মান, সততা ষ্টোর নির্মান সহ কিছু উন্নয়ন কাজে ২৪ টি ভাউচারে অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয়ছে। ভাউচার নং ৬২১/ ৪ এ ছোট্ট একটি গ্রীল তৈরীতে হাজার দুয়েক টাকা খরচ হবার স্থলে ১৬৫০০ টাকা ভাউচারে তোলা হয়েছে। ভাউচার ৫১১, এপ্রিল ১৫ইং এ ৩১ ট্রান্সফরমার বাবদ ৩১ হাজার টাকার ভাউচার ২ বার পৃথকভাবে দেখানো হয়েছে, এছাড়া মার্কেট নির্মানের বাবদ বিভিন্ন বড় অংকের লেনদেন এর ভাউচারে গ্রহিতার স্বাক্ষর নেই। সততা ষ্টোর নামক ওয়াল টিন শেড দোকানটির ব্যয় সর্বোচ্চ দুই লাখ এর উর্দ্ধে হতে পারে না সেখানে দোকানটির ব্যয় ৯ লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছে। যার ৯০ শতাংশই ভুতুড়ে ভাউচার। বিদ্যালয়ের অডিট টিম কর্তৃক আর্থিক এসব অনিয়ম নিয়ে তদন্তের পর প্রধান শিক্ষক নিজে ও একজন প্রকৌশলী দিয়ে অসংঙ্গতি পূর্ণ ব্যয় এর সম্ভাব্য পরিমান নির্ধারন করেছেন ১৪ লক্ষ টাকা। প্রধান শিক্ষক এর আবাসিক বাসার বিদ্যুৎ বিল তিনি নিজের ব্যক্তিগত খাত থেকে দেয়ার কথা রেজুলেশানে থাকলে তিনি সকল বিল বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে দেন। যা এখনো অনাদায়। ২০১৮ সালে ও বনভোজন এর আয় ব্যয় এর হিসেব শেষে ২৩ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকলে সেই টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হয়নি। এইসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভূঞা এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি যেসব ভাউচার নিয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার পৃথক পৃথক ব্যাখ্যা আমার কাছে রয়েছে। তিনি বলেন আমি বিদ্যালয়ের কোন অর্থ আত্মসাৎ করিনি বরং শিক্ষার ও পরিবেশের মান উন্নয়নের আপ্রান চেষ্টা এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ বিল এর বিষয়ে তিনি বলেন আমি তো বিদ্যালয়ের ভেতর থাকতে ও চাইনি। কমিটি আমাকে জোর করে এনে রেখেছে। এর দায়িত্ব আমি কেন নেব। অনেক ভাউচারে স্বাক্ষর নেই কেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন তখন হয়তো কয়েকটি বিল একসাথে করা হয়েছে। অফিসিয়ালি পরে জবাবদিহী বা তসরুপের অভিযোগে পড়বো ভাবলে সকল কাগজ আগেই পাকাপোক্ত করে নিতাম। সভাপতি নিয়ে চলমান সমস্যা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন এই বিষয়টি ও আমার অধিনস্থ নয়। বর্তমান সভাপতি সভা করতে বললে আমি করছি। আবার আদালত থেকে কোন নোটিশ এলে তখন থমকে দাড়াচ্ছি। যা নিয়ে আমরা ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বর্তমান কমিটিকে আদালত স্থগিত করেছে এমন কোন পেপার্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জর্জ কোটের একটি আইনগত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশনাপত্র দেখান । তবে উক্ত পত্রে কোথাও বর্তমান কমিটিকে স্থগিত করা হয়েছে তা খুঁজে দেখাতে বললে তা দেখাতে পারেন নি।
এই বিষয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সরকারি কর্তৃপক্ষ মীরসরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হুমায়ুন কবির খান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের বিষয় আমি ও শুনেছি। বিদ্যালয় তদন্ত টিম এই বিষয়ে উদ্যোগ নিবে তাই আমাদের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে এখন যেহেতু এই বিষয়ে আবার নানা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে তাই এখন প্রশাসনিক ভাবে আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করবো।
এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন অনিয়মের বিষয়টি আমি পূর্বে অবহিত ছিলাম না। এই বিষয়ে কমিটি কেউ সহযোগিতা চাইলে আমরা উদ্যোগ গ্রহন করবো। আর সভাপতির পদ বিষয়ে বিতর্ক এর বিষয়ে তিনি বলেন ‘ আমি ও শুরুতে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অন্য বিদ্যালয়ের সভাপতি তা ভালোভাবে নিই নাই। কিন্তু শিক্ষা বোর্ড থেকে এই বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে যে, একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষক প্রতিনিধি সভাপতি হতে পারবেন না। অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষক সভাপতি হতে পারবেন। বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় ঠিক এমনি ভাবে এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অন্য বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এতে আইনগত কোন বাধা নেই।
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মাষ্টার এনামুল হক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি শিক্ষার উন্নয়ন ও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে মাথা ঘামানো শুরু করায় প্রধান শিক্ষক আমাকে সরাতে চায়। দেশের শিক্ষা বিভাগ যতোক্ষন আমাকে সভাপতির পদে বহাল রাখবে ততোক্ষন শিক্ষার উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিয়ম নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ন্যায় নীতির প্রতি অবিচল আমি।