নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, শুভ্র কাশফুল আর শিউলি ফুলের গন্ধে জানান দিচ্ছে শরতের আগমন। শরতে উদ্যাপিত হবে সনাতনী সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজা। দুর্গোৎসবকে ঘিরে সনাতনী সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রতিমা শিল্পীরা তুলির শেষ আঁছড়ে ও সাজপোশাকে প্রতিমাকে দিচ্ছে পূর্ণ রূপ। প্রতিমা সাজানীকে ঘিরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে শিল্পীরা। পূজা মন্ডপে ইতিমধ্যে চলছে ডেকোরেটার্স, লাইটিংয়ের চুড়ান্ত প্রস্তুতি। পূজা উপলক্ষে প্রতিটি মন্দিরে বাড়তি আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়। এছাড়া থাকে বাড়তি নিরাপত্তা। প্রতিটি বাড়িতে তৈরি করা হয় নারিকেলের নাড়–সহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। প্রতিবছরের মতো এবারও মীরসরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার ৮৪টি মন্ডপে বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে শারদীয়া দূর্গা পূজা উদ্যাপন করা হবে। তাই চলছে পূজার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি।
মীরসরাই পূজা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবছর মীরসরাইয়ে ৮৪টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হবে। ৮২টি মন্ডপে প্রতিমা ও ২টি মন্ডপে ঘট পুজা (প্রতিমা বিহীন) হবে। পূজা মন্ডপগুলোতে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দুইটি থানার অধীনে পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৮৪টি পূজা মন্ডপের মধ্যে ৪৬টি পূজা মন্ডপের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। বাকিগুলোতে থাকবে মীরসরাই থানা পুলিশ।
দেওয়ানপুর শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ সেবাশ্রম শারদীয় পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পী তাপস দে জানান, ইতিমধ্যে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রংয়ের কাজ। এরপর গহনা ও শাড়ির মাধ্যমে প্রতিমা পাবে মায়ের পূর্ণ রূপ।
প্রতিমা শিল্পীরা জানায়, প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মাটি, খড়, পাট, কাপড়, রং ইত্যাদি। ওরিয়েন্টাল ও পোশাক সাজানীর মাধ্যমে দুই ভাবে প্রতিমা কারিগরের প্রতিমা তৈরি করেন। সুনিপুন হাতের কাজ প্রতিমাকে আরো বেশি উজ্জ্বল ও সুন্দর করে। তাই দূর্গা পুজা পরিচালনা পরিষদ সব সময় দক্ষ কারিগর খোঁজে থাকেন।
মীরসরাইয়ের জোরারগেঞ্জের দেওয়ানপুর গ্রামে সবচেয়ে বেশি দুটি ঘটপূজাসহ ১০টি পূজা হয়। জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পূজা কমিটির সভাপতি বাবুল সেন জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর মহাপঞ্চমীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের শুরু পরদিন মহাষষ্ঠী পূজা থেকে মন্ডপে মন্ডপে বেজে উঠবে ঢাকঢোল আর কাঁসার শব্দ। ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসব। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মীরসরাই পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি উত্তম শর্মা জানান, এবছর মীরসরাইয়ে ২টি মন্ডপে ঘট পূজাসহ ৮৪টি পূজা মন্ডপে দূর্গা পূজা উদ্যাপন হবে। তবে এবার কোনো পূজা মন্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ইতিমধ্যে পূজা উদ্যাপন পরিষদ প্রশাসন ও কমিটির সাথে কয়েকটি প্রস্তুতিমূলক সভা সম্পন্ন করেছে।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, জোরারগঞ্জ থানার অধীনে ৪৬টি পূজা মন্ডপ রয়েছে। দূর্গা পূজা উপলক্ষে ৩ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পূজা মন্ডপের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মীরসরাই থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) সাইরুল ইসলাম জানান, সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব নির্বিঘেœ পালন করতে সব মন্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।