শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মীরসরাইয়ে ঝরঝর শব্দে মুখর দর্জি দোকান

রাজিব মজুমদার ॥
মেশিনের অবিরত ঝরঝর শব্দ। কর্মব্যস্ত নারী-পুরুষ একের পর এক সেলাই করে চলেছেন নতুন পোশাক। এই ঈদকে সামনে রেখে ধনী-গরীব সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের নতুন পোশাকের সন্ধানে। আর তাদের চাহিদা জোগান দিতে গিয়ে আরো বেশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দর্জিরা। ফ্যাশন সচেতন নারী-পুরুষ ভিড় জমাচ্ছেন নামিদামি টেইলার্সগুলোতে। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোষাক তৈরীতে মেতে উঠেছেন তারা। কাজের চাপে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন মীরসরাইয়ের দর্জিরা। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার দর্জি দোকানের কারিগররা। একটি প্রবাদ আছে, “গডস্ ক্রিয়েটস্ এ ম্যান, বাট টেইর্ল ক্রিয়েটস্ এ জেন্টলম্যান।” অর্থাৎ ঈশ্বর মানুষ তৈরি করেছেন কিন্তু ভদ্র মানুষ তৈরি করেন দর্জি।

সরেজমিনে দেখা যায়, জোরারগঞ্জের শুভ টেইলার্স, মীরসরাইয়ের প্রিয়াংকা টেইলার্স, বারইয়ারহাটের ফেমাস টেইলার্স, বড়দারোগারহাটের এলিগেনস্ টেইলার্সের কারিগররা নর-নারীদের পোষাক তৈরীতে চরম ব্যস্ত সময় পার করছে। আর কয়েক দিন পর মুসলমানদের অন্যতম ধমীয় উৎসব ঈদ-উল ফিতর। তাই ঈদকে সামনে রেখে গ্রাহককের চাহিদা মেটাতে পছন্দের কাপড় তৈরীতে মহা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এই উপজেলার প্রায় ১ হাজার দর্জি।

দিনরাতই এখন দর্জিদের সেলাই মেশিনের ঝরঝর শব্দের মুখরিত হয়ে উঠছে মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট, করেরহাট, জোরারগঞ্জ, মিঠাছরা, মীরসরাই, বড়তাকিয়া, আবুতোরাব, বড়দারোগারহাট বাজার। মহা খুশির ঈদে যেমন বাড়ছে কেনাকাটা, তেমনি তার সাথে পাল্টা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে দর্জিদের কর্ম ব্যস্ততা। ক্রেতাদের চাহিদা মত পোষাক তৈরীতে তাদের দম ফেলানোর সুযোগ নেই বলে জানান অনেক কারিগর।

ঈদকে ঘিরে দর্জিদের রাতে সুখের ঘুম হারাম বললেও চলে। ক্রেতাদের মানানসই পোষাক তৈরীতে রীতিমত হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। এছাড়াও পুরুষ দর্জিদের কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি মহিলা দর্জিরাও থেমে নেই তাদের দর্জি কাজে। এই সুযোগে তারাও কিছু আয়ের পথ সৃষ্টি করে নিজেকে সাবলম্বি করার চেষ্টা করছেন।

জোরারগঞ্জের শুভ টেইলার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী সূর্য্য নাথ জানান, যারা একটু ভিন্ন ডিজাইন আর ফিটিং পোশাক পরতে পছন্দ করেন তারাই মূলত টেইলার্সে আসেন। শবেবরাতের পর থেকেই শুরু হয়েছে অর্ডার নেয়ার কাজ। এরই মাঝে অনেকের হাতে তুলে দিয়েছেন নতুন পোশাক। তবে কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে নতুন করে পোশাকের অর্ডার নেয়া। এরপর চলবে শুধু পোশাক তৈরি আর ডেলিভারির কাজ। এই কাজ চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। আর তাই দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের।

ব্যবসায়ী রেজাউল করিম মাষ্টার নামের একজন গ্রাহক জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি তৈরি করা শার্ট-প্যান্ট পরেন। প্রতি বছর তিন থেকে চার সেট পোশাক বানাতে হয় তার। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের ঈদেও। একটি টেইলার্স দোকানে একটি শার্ট ও একটি প্যান্ট ৮০০ টাকা মজুরিতে সেলাই করিয়েছেন তিনি। তবে এবার মজুরি বেশি নিচ্ছেন দোকানীরা।

দর্জি কারিগর গোবিন্দ কুমার ও মিলন নাথ বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা আধুনিক ফ্যাশনের পোশাক তৈরি করছেন। এ কারণে আমাদের দোকানে প্রচুর ভিড় হচ্ছে। রমজানের আগেই কাজের চাপ শুরু হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় এবার অনেকটাই কম।

মীরসরাইয়ের তাসলিমা সুরভী নামের একজন মহিলা গ্রাহক জানান, যুগের সাথে তালমিলিয়ে সবাই চায় নতুন পোশাক পড়তে। রেডিমেড পোশাকের দোকানে একই নকশার অনেক পোশাক থাকে। ফলে সেখান থেকে কেনা পোশাকটির স্বাতন্ত্র অনেক েেত্রই থাকে না। এজন্য প্রতিবারই ঈদে নিজের পছন্দমতো কাপড় কিনে দর্জির কাছে বানাতে দেই।

এ বছর বেশির ভাগ পোশাক জর্জেট, কাতান সিল্ক, ভেলভেট চিকেন, নেট, তসর, টিস্যু, জরি, চুমকি, কুন্দনের কাজ করা সহ নানা কাপড়ের বানানো হচ্ছে। তবে এ বছর ফ্যাশনেবল পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে সুতি কাপড়ের পোশাক একটি বিশাল বাজার দখল করে আছে বলে জানিয়েছেন টেইলার্স মালিকরা।