মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মীরসরাইয়ে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। হেমন্তের আগমনে পদধ্বনি পাওয়া যায় শীতের। আর শীতের সঙ্গে সম্পর্ক খেজুর রসের। হেমন্তকালেই শুরু হয় গাছিদের তোড়জোর। রস আহরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা। চারদিকে সেই আয়োজনই চোখে পড়ছে। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় মীরসরাইয়ের শুরু হয়েছে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গাছ পরিস্কার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। আবার কোনো কোনো গ্রামে মাসখানেক আগেই গাছ পরিষ্কারের কাজ শেষ করেছেন তারা। ফলে কোনো গাছে পুরোদমে আবার কিছু সংখ্যক গাছে অল্প অল্প করে রসও নামতে শুরু করেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার করেরহাট, হি্গংুলী, জোরারগঞ্জ, মিঠাছরা, মীরসরাই, খৈয়াছড়া, মায়ানী, মঘাদিয়া, হাইতকান্দি, সাহেরখালী, ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শীতের সুস্বাদু প্রাকৃতিক পানীয় খেজুর রস মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের নিকট কোমল পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রথমে খেজুর গাছের ডালপালা কেটে পরিষ্কার করে নেন গাছিরা। এরপর গাছের একটি নির্দিষ্ট স্থান হালকা কেটে কয়েকদিন পরপর পরিষ্কার করেন। এই কাজে গাছিরা ধারালো অস্ত্র বাড়াইল (স্থানীয় ভাষায়) ব্যবহার করেন। খেজুর গাছ প্রস্তুত করার পর রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়। খেজুর রস বড়ই মধুর। শীতের সকালে মানুষ খেজুর রসে ভিজে মুড়ি খান।
দক্ষিণ মঘাদিয়া গ্রামের গাছি জেবাউল হক জানান, গাছের মাথা হালকাভাবে ছেটে দিয়ে প্রত্যহ বিকেলে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র ঝুলে দেয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছ ভেদে ৬-৭ কেজি হারে রস পাওয়া যায়।
মায়ানী ইউনিয়নের ঘড়ি মার্কেট এলাকার গাছি জসিম উদ্দিন জানান, বাণিজ্যিকভাবে কেউ খেজুর গাছ লাগায় না। পতিত জমি, ভিঠা, জমির আইলসহ বিভিন্ন স্থানে একাই এসব খেজুর গাছ জন্ম নিয়েছে। একটি সময়ে এই উপজেলায় বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ ছিল। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষ সিংহভাগ খেজুর গাছ কেটে ফেলেছেন। এরপরও এ অঞ্চলে যেসব খেজুর গাছ রয়েছে তা থেকে সংগৃহীত খেজুর রস থেকে বিপুল পরিমাণ গুড় উৎপাদন সম্ভব হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণ জ্ঞানের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আন্তরিক হলে এখানকার খেজুর রস দেশীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তারা মনে করেন।
গাছিরা আরো জানান যে, শীতের শুরু থেকেই পুরো মৌসুম জুড়ে খেজুর রস সংগ্রহ করে সুস্বাদু গুড় তৈরি করা শুরু করে দিয়েছেন। সারা বছর অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকা গ্রাম-গঞ্জের খেজুর গাছের কদর বেড়েছে। তারা নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে আবার কেউ কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুর গুড় দেয়ার চুক্তিতে পুরো মৌসুমের জন্য গাছ লিজ নিয়ে রস সংগ্রহ এবং সেই রস থেকে গুড় তৈরি করছেন। তবে খেজুরগাছ সঙ্কটের কারণে এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছেন গাছিরা ।

মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ জানান, শীত মৌসুমে এই খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। সে মোতাবেক নভেম্বর থেকে শুরু করে মোটামোটি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। ইতোমধ্যেই এই উপজেলার গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ অভিযানে মাঠে নেমেছেন বলে তিনি জানান।