শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মীরসরাইতে শিক্ষক সমিতির নামে উৎকোচ আদায় অভিযোগ

1408774590.
বিশেষ প্রতিনিধি: মীরসরাই উপজেলায় শিক্ষক সমিতির নামে সংশ্লিষ্ট সরকারি শিক্ষা বিভাগসহ একটি গোষ্ঠি স্বল্প বেতনের চাকুরীজীবি প্রাথমিক শিক্ষকদের থেকে নানা কৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার ঘুষের টাকার জন্য শিক্ষা অফিসার প্রকাশ্য বক্তব্য দিলেন সভায়। বিষয়টি শিক্ষক মহলে বর্তমানে বহুল আলোচিত, কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না কেউ।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মীরসরাই উপজেলার ৪০টি রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় এর মধ্যে ৩৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়। উক্ত ৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে প্রধান শিক্ষক ও ৪জন করে সহকারি শিক্ষক জাতীয়করণ এর আওতাভুক্ত হন। উক্ত শিক্ষকগন সরকার ঘোষিত নিয়মনীতি মোতাবেক সরকারি বেতনভাতা, পে-স্কেল, সার্ভিসবুক, প্রভিনেন্ড ফান্ড ইত্যাদি সুবিধা পাবেন, কিন্তু শিক্ষকদের এসব সুবিধা পাইয়ে দেবার নামে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও ট্রেজারী বিভাগে মাশোহারার জন্য সকল প্রধান শিক্ষকদের থেকে ১৫০০ টাকা, সহকারি শিক্ষকদের থেকে ৪০০টাকা বাধ্যতামূলক, আবার বিভিন্ন শ্রেণীভেদে অন্যান্য সমস্যা থাকলে সেক্ষেত্রে দু-তিন হাজার টাকা করে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করছেন শিক্ষক সমিতি নামের একটি গোষ্ঠি।

উক্ত শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক নুর নবী এসব টাকা ভাগ-বাটোয়ারার দায়িত্বে রয়েছেন। উক্ত টাকা বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু ঘুষ দিয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখিয়ে কিছু নিজের পকেটস্থ ও করছেন বলে শিক্ষকদের থেকেই একাধিক অভিযোগ উঠে।

কোন শিক্ষক যদি এই মাশোহারার টাকা না দেন তাকে উপরের মহল ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষিকা জিনাত। উক্ত অভিযোগের প্রক্ষিতে এই প্রতিবেদক বিশ্বদরবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন, খৈয়াছরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জিনাত ফেরদৌস, শাহ আব্দুল মজিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালেহ আহমদ ও কয়েকজন সহকারি শিক্ষক এর কাছ থেকে পৃথক পৃথক ভাবে বক্তব্য গ্রহনকালে জানা যায় সার্ভিস বুক এর নামে ১৫০০ টাকা সহ ৩৮ টি বিদ্যালয় থেকে ৩১০০ টাকা করে ১লক্ষ ১৭হাজার টাকা আদায় করেছে এক মাস পূর্বে।

এভাবে কয়েকদফা অসহায় শিক্ষকদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছে এই চক্র। ২১ আগষ্ট বৃহ¯প্রতিবার পূনরায় অপর অজুহাতে চাঁদা উত্তোলনের জন্য শিক্ষক সমিতির নামের উক্ত গোষ্ঠি হরিহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষককে বাধ্যতামূলক যেতে বলে, আর সেখানে স্বয়ং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম রহমান চৌধুরী ও যান।

শিক্ষা অফিসার গোলাম রহমান নিজে সেখানে বক্তব্যপ্রদানকালে বলেন ‘আমি আপনাদের প্রভিডেন্ড ফান্ড ও টাইমস্কেল এর সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছি, সেজন্য আপনাদের থেকে আমি একটাকা ও সহযোগিতা নিব না, তবে ট্রেজারি ও জেলা শিক্ষা অফিসে কিছু টাকা দিতে হবে। শিক্ষকদের এমন সুবিধা আদায়ের জন্য মীরসরাইয়ের পূর্বে কক্সবাজারে থাকাকালিন ওখানকার শিক্ষকরা আমাকে একটি বক্সখাট গিফ্ট করেছিল।’

একজন শিক্ষা কর্মকর্তার এহেন বক্তব্য শুনে কিছু বিবেকবান শিক্ষক আঁৎকে উঠেন। গ্রামীন মফস্বলের অনেক শিক্ষকদের যেখানে নুন আনতে পানতা ফুরোয় এর মতোই দৈন্যদশা রয়েছে। সেখানে শিক্ষা অফিসার স্বয়ং অসহায় শিক্ষকদের থেকে এভাবে বাধ্যতামূলক মাশোহারা আদায় করলে জাতির মেরুদন্ডের বিবেক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসার গোলাম রহমান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন উক্ত শিক্ষকদের কিছু অনিয়মের কথা শুনে সেই সভায় অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। আবার অভিযুক্ত মাশোহারা উত্তোলনকারী শিক্ষক নেতা নুরনবী এর বক্তব্য নিতে বার বার ফোন দেবার পর তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি এবং পরে ফোন বন্ধ করে দেন।

তবে এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বলেন বিষয়টি কোন শিক্ষক আমায় অবহিত করেনি। আমি আমার পক্ষ থেকে তদন্ত পূর্বক সকল প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ গ্রহন করবো।