মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মারুফ টাইগার ফিরেছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে

খবরিকা রিপোর্টঃ
তাকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালের বিপিএলে। এরপর এক বছর দুই মাসের দীর্ঘ বিরতি। অবশেষে ঘুঁচলো তাকে মাঠে না দেখার অপূর্ণতা। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথমদিন থেকেই বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে তাকে দেখা যাচ্ছে মাঠে। মাঠে হাজির যথারীতি ওই বাঘের ডোরাকাটা শরীরে। তার সঙ্গে লাগানো নকল ‘হিংস্র’ দাঁত, যা তাকে দিয়েছে বাঘের সেই ভয়ংকর চাহনি। আর দু’হাতে শক্ত করে ধরে রাখা একটি নাতিদীর্ঘ বাঁশ। যার মাথায় পতপত করে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা।

ছেলেটার নাম খাইরুল ইসলাম মারুফ। ‘মারুফ টাইগার’ নামেই যাকে চেনেন চট্টগ্রামের ক্রিকেটপ্রেমীরা। ওই যে চট্টগ্রামের একমাত্র ‘বাঘরূপী মানুষ।’ মারুফ মিরসরাই উপজেলার ১৩ নম্বর মায়ানী ইউনিয়নের বাসিন্দা।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকেই বাঘরূপে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন এই গ্যালারি থেকে সেই গ্যালারি। যেখানেই গেছেন সেখানেই ছিল তাকে ঘিরে পুরোনো সেই থিকথিকে ভিড়। সেলফি-ছবি তোলার সেই ক্লান্তিহীন আবদার।
মাঝখানের ওই সময়টা কোথায় ছিলেন ‘মারুফ টাইগার’। এই প্রশ্নের উত্তরে লুকিয়ে আছে চরম বাস্তবতা। দেশের অন্যান্য ক্রিকেট সমর্থক মারুফেরও স্বপ্ন ছিল দেশে-বিদেশে ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দেওয়ার।

মাঝখানের ওই সময়টা কোথায় ছিলেন ‘মারুফ টাইগার’। এই প্রশ্নের উত্তরে লুকিয়ে আছে চরম বাস্তবতা। দেশের অন্যান্য ক্রিকেট সমর্থক মারুফেরও স্বপ্ন ছিল দেশে-বিদেশে ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দেওয়ার।

কিন্তু একদিকে আর্থিক দূরাবস্থা অন্যদিকে ‘চট্টগ্রামের বলে’ সেভাবে নজরে না আসা, স্পন্সর না পাওয়া সবমিলিয়ে দেশের বাইরে দলকে সমর্থন দিতে যাওয়াটা ছিল তার কাছে এক লাফে অ্যাভারেস্ট ছোঁয়ার মতোই। ওদিকে শুধু বাঘ সেজে মাঠে গিয়ে দলকে সমর্থন দিলে তো হবে না, পেটেও তো কিছু ফেলতে হবে, অন্যদিকে ঘরের মানুষদেরও পেটও ততদিনে তার ওপর নির্ভর হতে শুরু করেছে।


২০১৪ সালের শুরুতে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার ম্যাচ চলছিল। আমি ভাবলাম বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে সাধারণভাবে যাব না। বাঘ সেজে সমর্থন দিতে যাব। যেই কথা সেই কাজ। বাঘরূপে গেলাম, সবাই সমর্থন জানাল। তখন থেকে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই এভাবে আসা।’

‘দেশের অন্যান্য ভেন্যু আর দেশের বাইরে দলকে সমর্থন দিতে যেতে বিভিন্ন জায়গায় স্পন্সরের আশায় ঘুরেছি। কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। সবকিছু ছেড়ে তাই ২০১৬ সালের শেষের দিকে চলে যাই কুয়েতে। কষ্ট হচ্ছিল খুব। কিন্তু চরম বাস্তবতার কাছে আমি হয়ে পড়ি অসহায়। সেখানে (কুয়েতে) হাজকুম নামের একটি কোম্পানিতে নিরাপত্তা দপ্তরে চাকরি নেই।’-শব্দ না, যেন কষ্ট ঝরছিল মারুফের কণ্ঠ থেকে।’

‘তবে সেই আবেগটা ছাড়িনি। বাঘ সাজার রঙ-তুলি, কাপড় আর প্যান্ট সঙ্গে নিয়ে গেছি। সেগুলোর ওজনই দাঁড়ায় সবমিলিয়ে ৮ কেজি। কিন্তু এগুলো ছাড়া তো আমি বাঁচতে পারবো না।’-যোগ করেন মারুফ।
এদিকে দু’সপ্তাহ আগে এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন মারুফ। উদ্দেশ্য শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়া। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বাঘ সাজার ওই কাপড়-ছোপড় আর রঙ-তুলি। তারপর প্রথম টেস্টের প্রথমদিন থেকেই দেশকে সমর্থন দিতে মাঠে পড়ে আছে বছর ২২ এর শরীরটা। তবে এই দফায় এই টেস্টই তার শেষবারের মতো বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে মাঠে আসা। ছুটি যে শেষের পথে। কয়েকদিন পরেই ধরতে হবে কুয়েতের প্লেন। তবে সঙ্গে নিতে ভুলবেন না ওই কয়েকটা জিনিস। রঙ তুলি আর ডোরাকাটা ওই গেঞ্জি-প্যান্ট। #বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম