শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বৈশাখের রঙিন সাজ

images

বৈশাখ বরণে হাতে আছে আর কয়েক ঘণ্টা। এ উৎসবের মূল আয়োজন হলো সাজসজ্জা। সবাই নিজেকে ভিন্ন সাজে সাজাতে চায়। বর্ষবরণে নিজেকে নতুন রূপে সাজাতে শাড়িই সাজের অন্যতম অনুষঙ্গ। বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃৃতিকে পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলবে শাড়ি। তবে গ্রীষ্মের বাড়তি গরমে কেমন শাড়ি পরলে ভালো লাগবে বৈশাখের সাজে, তাও ভাবানায় রাখতে হবে। পড়ন্ত রোদে বাড়তি গরমে সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যেহেতু দিনের অনেকটা সময় শাড়ি পরে থাকতে হবে, সে ক্ষেত্রে সুতি কিংবা সিল্কের শাড়িতেই আরাম পাওয়া যাবে। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বৈশাখের শাড়ি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তবে তাঁতে বোনা সুতি জামদানি শাড়ি কিংবা তাঁতে বোনা সুতি শাড়ির ওপর সুতার কাজ ও ব্লক বাটিকে সুতির শাড়িগুলো বৈশাখের পোশাকে তুলে ধরে ভিন্ন রকম আমেজ।

এ বিষয়ে ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স-এর শীর্ষ নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ বলেন, সুতি কাপড়ের শাড়ির ওপর স্ক্রিন ও এম্ব্রয়ডারির কাজ বেছে নেওয়া যেতে পারে। বৈশাখের সাজ মানেই লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। তবে সময়ের সঙ্গে এসেছে নতুনত্ব। এখন আর লাল-সাদায় সীমাবদ্ধ নেই বৈশাখ। ফ্যাশন সচেতনরা বেছে নিচ্ছেন পোশাকে বিভিন্ন রঙ। হালকা গোলাপি, কমলা, মেরুন কিংবা নীল রঙের সুতি শাড়ির মধ্য দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন বৈশাখের সকালে।

সাজে ভিন্নতা আনতে তাই এখন শাড়ি বাছাইয়ের পাশাপাশি পছন্দের ব্লাউজ তৈরিও সমান গুরুত্ব পায় বর্ষবরণে। শাড়িটা সাদামাটা হোক কিংবা জমকালো, ব্লাউজটা হওয়া চাই ভিন্ন ধাঁচের। ফ্যাশন-সচেতন সব নারীই এখন মনোযোগ দিচ্ছেন বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর ব্লাউজের দিকে। এখনকার ট্রেন্ড হলো শাড়ির সঙ্গে কন্ট্রাস্ট ব্লাউজ পরার। পহেলা বৈশাখ আমাদের অন্যতম উৎসব। এর প্রতীক্ষায় থাকেন অনেকেই। বৈশাখ বরণে সুতি বা তাঁতের শাড়িই পরতে দেখা যায় বেশি। এই শাড়িগুলোর সঙ্গে কাঁথা স্টিচ, টাই ডাই, প্যাচওয়ার্কের কাজ করা ব্লাউজ পরা যেতে পারে। গামছা কাপড়ের ব্লাউজও ভালো লাগবে।

বৈশাখে সবার আগে যে বিষয়টি তরুণীদের ভাবায়, সেটি বৈশাখের সকালের সাজ। কেমন হবে বৈশাখের সকালের সাজের ধরন? সাজসজ্জার নানা পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ গীতিবিল্লাহ। তার মতে, বৈশাখের প্রথম সকালে শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন বিভিন্ন ডিজাইনের মাটির গহনা। এ ছাড়াও শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পাট কিংবা পুঁতির মালাও পরতে পারেন। আর বৈশাখের সাজে এসব গহনা আপনার সঙ্গে অনায়াসে মানিয়ে যাবে।

মেকআপ করার আগের দিন-রাতে অবশ্যই ফেসিয়াল করে নিতে হবে। কারণ তা না হলে ত্বকে মেকআপ বসবে না। যদি সেটা করা না যায়, তাহলে মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। সব ধরনের ত্বকে মেকআপ লাগানো যায়। এ ক্ষেত্রে জরুরি হলো মেকআপ বেল্গন্ডিং। তার পর টোনার দিয়ে ত্বক টোন করে নিতে হবে। এবার মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ৫ মিনিট পর সানস্ক্রিন বা ফাউন্ডেশন লাগান। তার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ট্রান্সলুশান পাউডার অথবা পিঙ্ক শেডের ফেস পাউডার পাফ করুন। একটু অপেক্ষার পর লাগালে মেকআপটা ত্বকে ভালোভাবে বসবে। এ সময় মুখে বেশি পাউডার লাগান। তারপর সামান্য পানি স্প্রে করুন। এবার পাউডার ত্বকের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তাতে দেখতে সুন্দর লাগবে। তখন মেকআপ বেশি মনে হবে না। তা ছাড়া পানি স্প্র্রে করে নিলে সারাদিন ঘাম হওয়ার ভয় থাকে না। এর পর চিকবোন হাইলাইট করুন বল্গাশন দিয়ে। বল্গাশন যেন হালকা হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। তাতে আপনার ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলে যাবে বা কাছাকাছি হবে। ফর্সা মেয়েদের গাঢ় রঙের বল্গাশন যেমন লাল, মেরুন, গোলাপি বল্গাশন লাগাতে হবে। আর যাদের গায়ের রঙ চাপা তারা বাদামি রঙের বল্গাশন লাগাতে পারেন।

এবার চোখের সাজ। চোখের সাজ চেহারাকে আলাদা একটা লুক দেয়। ড্রেস বা শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে শ্যাডো দিতে পারেন চোখে। চোখকে আকর্ষণীয় করতে চোখের মাঝখানের অংশে একটু হালকা কালার দিন। কোনার অংশে দিন ডার্ক আর ওপরের অংশে দিন সফ্ট গোল্ড আইশ্যাডো। আর বেশি ন্যাচারাল লুক চাইলে আইশ্যাডো ছাড়াই ব্রাউন কাজল দিয়ে আউটলাইন করতে পারেন। চোখের নিচের পাতায় দিন কাজল।

নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে ঠোঁটের সাজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। বৈশাখের পোশাকে বেশিরভাগই লালের প্রাধান্য থাকে। তাই আপনিও পরতে পারেন লাল লিপস্টিক। ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী লিপলাইনার দিয়ে প্রথমে ঠোঁট এঁকে নিন। তারপর লিপস্টিক লাগান। ক্যাজুয়াল লুক আনতে চাইলে বেছে নিন ন্যাচারাল কালার।

বৈশাখে টিপ ছাড়া যেন পুরো সাজই অসম্পূর্ণ। তাই কপালে মাঝারি বা বড় করে পরতে পারেন লাল টিপ। অথবা লাল, সাদা, সবুজ মিলিয়ে দিতে পারেন কুমকুম টিপ। হাতভর্তি লাল, সাদা মিলিয়ে কাচের চুড়ি পরতে পারেন ইচ্ছেমতো। শাড়ির সঙ্গে চুলের সাজে বেণি বা খোঁপা করাটা বেশ মানানসই। খোঁপাভর্তি বেলি ফুলের মালা বা গাজরা, গোলাপ অথবা পছন্দমতো কাঁচা ফুল গুঁজে দিতে পারেন। ফুলে ফুলে বরণ হয়ে গেল আপনার বৈশাখ।

বর্ষবরণের সঙ্গীতানুষ্ঠান, মঙ্গলযাত্রা, মেলায় ঘোরা, রান্না, অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ততার কমতি নেই। তাই দরকার কিছুটা হালকা সাজসজ্জা। এবার বৈশাখী সাজে চোখের সাজে স্মোকি খুব চলবে। তবে চোখের সাজের সঙ্গে ঠোঁটের সাজে সামঞ্জস্য রাখুন। বিকেলে একটু কমলা, পার্পেল, পিঙ্ক, ক্ল্যাসিক রেডের মতো রঙ অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন। কুমকুম দিয়ে একটা টিপ এঁকে নিলে বেশ দেখাবে। কিংবা দুটি ভিন্ন আকারের টিপ পরপর বসিয়ে সাজ শেষ করুন। হাতব্যাগে পাউডার, আয়না, চিরুনি, লিপস্টিক ও পানি রাখুন। প্রয়োজনমতো সাজটা টাচ্আপ করে নেওয়া যাবে।