মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বখাটের ছুরিকাঘাতে মুন্নি এখনো আশংকাজনক

mirsarai-munniখবরিকা রিপোর্ট :: মেয়েটা বসতে পারেনা, দাঁড়াতেও পারেনা হাঁটাতো দুরের কথা। সারাণ বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। খাওয়া-দাওয়াতো নেই বললেই চলে। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর চোখের পানি ফেলে। এভাবে দীর্ঘ চার মাস পার হয়েছে। নিজের যা সঞ্চয় ছিলো, এলাকার লোকজন ও আত্মীয় স্বজনদের সাহায্য নিয়ে প্রায় ৬ লাখ টাকা মেয়ের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছি। কিন্তু শারীরিক কোন উন্নতি হয়নি। মনে হয় আমার মেয়েটা বাঁচবেনা বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন অসহায় দরিদ্র দিনজমুর পিতা জাফর আহম্মদ। বর্তমানে ঢাকার সাভারস্থ সিআরবি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এই মুন্নি।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৯নম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের উত্তর গড়িয়াইশ এলাকায় স্ত্রী রিজিয়া ও ৩ মেয়ে ১ ছেলেকে নিয়ে ছোট্ট একটি কুঁড়ো ঘরে বসবাস করেন জাফর আহম্মদ। বাড়ি ভিটে ছাড়া সম্পদ বলতে কিছু নেই তার। সংসারে অভাব অনটনের কারণে ৭ম শ্রেণির বেশি পড়া হয়নি বড় মেয়ে মুন্নি আক্তারের (১৭)। সে বাড়িতে মায়ের কাজে সাহায্য করেন। কিছুদিন ধরে মুন্নিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো একই গ্রামের শাহ আলমের ছেলে মোজাম্মেল হোসেন (২৪)। কিন্তু সে বখাটে ও মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে মুন্নির বাবা-মা তার কাছে বিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সে ছাড়া অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে দিবে না বলে হুমকি দেয় মোজাম্মেল। তার সাথে বিয়ে দিতে হবে না হলে তাকে বাঁচতে দেবেনা বলেও তার পরিবারকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় বখাটে মোজাম্মেল। গত ২৯ জুন সকাল ১০টার দিকে বাড়ির পাশে ছোট বোন তানিয়াকে নিয়ে মাটি খুঁড়তে যান মুন্নি আক্তার। এসময় মোজাম্মেল পেছন দিকে থেকে এসে ছুরি দিয়ে মুন্নিকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ছোট বোন তানিয়ার আত্মচিৎকারে লোকজন ছুটে এলে মোজাম্মেল পালিয়ে যায়। এরপর তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর শারীরিক কোন উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকা সিআরপিতে নেয়া হয়। সেখানে না রাখায় পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করানো হয়। পরবর্তিতে গত ৯ নভেম্বর সিআরপিতে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পর মুন্নি আক্তারের চাচা খাইরুল আলম বাদি হয়ে বখাটে মোজাম্মেল সহ ৪জনকে আসামী করে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু অর্ধবদি মোজাম্মেল গ্রেপ্তার হয়নি।
মুন্নি আক্তারের আত্মীয় জয়নাল আবেদীন বলেন, চুরি দিয়ে কুপিয়ে মুন্নির মেরুদন্ডের হাড় দুভাগ করে পেলেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন সে আর কখনো হাঁটতে পারবেনা। সবোর্চ্চ হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করতে পারবেন।

মুন্নি আক্তারের পিতা জাফর আহম্মদ বলেন, ২৯ জুন কাজ না থাকায় আমি লাকড়ি কাটতে পাহাড়ে যায়। পাহাড় থেকে এসে দেখি আমার কে কুপিয়ে ত-বিত করেছে মোজাম্মেল। এই ঘটনায় মামলা করার পরও এখনো গ্রেপ্তার হয়নি মোজাম্মেল। ফোন করে উল্টো মামলা তুলে নিতে আমাকে হুমকি দিচ্ছে এবং আমার আরেক মেয়ে রাজিয়া আক্তারকে তুলে নেয়ারও হুমকি দিচ্ছে মোজাম্মেল। ভয়ে মেয়েটি স্কুলে যাচ্ছেনা। সে মিঠাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে পড়ে। আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবী করছি বখাটে মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে।

তিনি আরো বলেন, মেয়েকে কোপানের পর থেকে ধার-দেনা করে মেয়ের চিকিৎসা করতে প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখনো মেয়ের শরীরের কোন উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরা বলছে মোটামুটি সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। কয়েকদিন পরে একটা অপারেশন করতে হবে। আমি চিকিৎসার টাকা কোথায় পাবো? যদি আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষ ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে তাহলে বাঁচানো সম্ভব হতো। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা বিকাশ নম্বর ০১৮৮২৫৬৮৬৮৬ (পার্সোনাল) জাফর আহম্মদ।
মিরসরাই থানার জৈষ্ঠ উপ-পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম পিপিএম বলেন, ঘটনার পর থেকে মোজাম্মেল পলাতক রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, মুন্নির চিকিৎসার জন্য আমাদের প থেকে অনেক সহযোগীতা করেছি। আগামীতেও সহযোগীতার আশ্বাস দেন তিনি।