বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা

1_34588

ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা। কর্মব্যস্ত নগরীর অসংখ্য মানুষ পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটছেন বাড়ি। ফলে রাজধানীর ভিড়ভাড়াক্কা কমে গেছে। হালকা হয়ে এসেছে ছোটাছুটির বিশৃঙ্খলা। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়েকদিন ধরেই নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। শেষ কর্মদিবসের কারণে গতকালও অনেকে রাজধানীতে অবস্থান করেন। কিন্তু অফিস শেষ হতে না হতে তারাও ছুটে যান ট্রেন স্টেশন, বাস টার্মিনাল বা লঞ্চঘাটের দিকে। প্রতিবছরের মতো এবারও সঙ্গী দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা।

বিপুল সংখ্যক মানুষ এরই মধ্যে বাড়িতে চলে যাওয়ায় ঢাকার যানজট কমতে শুরু করেছে। হুড়োহুড়ি করে বাসে ওঠার দৃশ্যও কমেছে। যেসব স্থানে সারা বছর যানজট ও হৈচৈ লেগে থাকে সেই চিরচেনা গুলিস্তান মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, অচেনা দৃশ্য। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, নয়াপল্টন, জিরো পয়েন্ট, কাকরাইল, মালিবাগ মোড় ও মগবাজার মোড়ে নেই যানজট। বিপণিবিতানেও ভিড় কমে এসেছে। তাই যারা ঢাকায় থাকছেন, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করছেন স্বস্তিতে। সবমিলে নিত্যদিনকার ঢাকার স্বাভাবিক চিত্র পাল্টে গেছে। দিনভর স্টেশন, টার্মিনাল, লঞ্চঘাট এবং রাজধানীর গরুরহাট ও আশপাশের এলাকায় কিছু জটলা থাকলেও বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা ফাঁকা। ঈদ উপলক্ষে স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়েছে আগেই। অফিস-আদালতও গতকাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যথারীতি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে টার্মিনালগুলোতে। ট্রেন, লঞ্চ, বাস টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। কারও টিকিট আগে থেকেই কাটা, কেউ আবার টিকিটের অপেক্ষায় আছেন। রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলী, সদরঘাট, কমলাপুরসহ বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে এবং ট্রাকে করে যাচ্ছেন। ঝুঁকির মধ্যেই লঞ্চে বাড়ি যাচ্ছেন দক্ষিণবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ। ছাদে যাত্রী বহন নিষিদ্ধ হলেও সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া সব লঞ্চের ছাদেই ছিল যাত্রী বোঝাই। বেশিরভাগ লঞ্চেই জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িফেরা মানুষের চাপে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকারও জায়গা নেই। প্রতিটি পন্টুনে লঞ্চ। কয়েকটি মাঝ নদীতে নোঙর করে নৌকা দিয়ে যাত্রী তুলছে। নৌকায় এ জন্য জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকেই কল্যাণপুর টেকনিক্যাল, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এবং কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল ঘরেফেরা মানুষের ভিড়। শিডিউলে বড় কোনো বিপর্যয় না থাকলেও প্রায় সব ট্রেনই ছেড়েছে কিছুটা দেরিতে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের মতে, এটা ঈদের চাপে নয় সারা বছরই ট্রেনে কিছুটা বিলম্ব হয়ে থাকে। ৭ থেকে ১১ ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করা ট্রেনযাত্রীদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে ট্রেনে ওঠার জন্য। নিজের নামে বরাদ্দ নেওয়া আসনে বসার জন্য যেন সংগ্রামের শেষ নেই। গত দুই দিনের ট্রেনের সব আসনের টিকিট বিক্রি হয়েছে আগেই। এখন কোনো আসনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। তবে চলতি যাত্রীদের জন্য আসনবিহীন টিকিট ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রেনের আসন সংখ্যা বা ধারণ ক্ষমতা বিবেচনা করে চলতি টিকিট বিক্রি করা হয় না। টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী। সে কারণে টিকিটধারী শত শত মানুষকে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। দূরপাল্লার পরিবহন কোম্পানিগুলো ঈদের বিশেষ ট্রিপ শুরু করলেও চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে, শিডিউল জটে। যাওয়ার ব্যবস্থা যেমন তেমনভাবে হয়ে গেলেও ফেরার ব্যবস্থা নিয়েও দুশ্চিন্তায় অনেক যাত্রী।

কারণ বাড়তি ছুটি না পাওয়া কর্মজীবীদের ঈদের পরের দুই দিনেই ঢাকায় রওয়ানা দিতে হবে। ফলে ঢাকাগামী বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শামীমুল ইসলাম নামে এক যাত্রী জানান, ঢাকা থেকে গাইবান্ধা যেতে অনেক কষ্টে ৫৫০ টাকায় একটি পরিবহন কোচের টিকিট ম্যানেজ করেছেন। কিন্তু ফেরার টিকিটের জন্য যোগাযোগ করা হলে ৯০০ টাকা হাঁকা হচ্ছে। লঞ্চের ফিরতি টিকিটেও দ্বিগুণ টাকা চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।