বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

প্রশ্নের মুখে উৎসবের দিনগুলি : স্বর্ণালী দত্ত


সারা বিশ্ব যখন থমকে গেছে, যখন প্রাণ ভরে বাতাস নিতেও মন ভীত তখন সবকিছুই কেমন যেন সরে সরে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে। দিনের পর দিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃতের হার। মানুষ আজ বড়ই অসহায় এবং বিভ্রান্ত। রোজকার জীবন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। অনেই কাজ হারিয়ে আজ বেকার। অন্ধকারে দিন গুনছেন এরা প্রতি নিয়ত। কাল তাদের জন্য কি নিয়ে আসবে তাতেও তারা সন্দিহান।
এহেন পরিস্থিতিতে বাহ্যিক কর্ম জগৎ যতটা জটিল রূপ নিয়েছে তাতে মানুষ দিন দিন ভেঙে পড়ছে। মনকে ভালো রাখার সব উপায়গুলো কেমন করে যেন কুয়শায় ঢাকা পড়ছে। ঠিক যেমন ঢাকা পড়ছে উৎসবগুলো। বাঙালি নমঃ নমঃ করে সেরেছে পয়লা বৈশাখ, রমজানের ঈদ, লক ডাউনের সমস্ত পার্বণ। উরিশ্যার রথও নিয়মের কবলে আটক। আসন্ন ঈদুল আযহা, জন্মাষ্টমী, গণেশ চতুর্থী, মহরম সবই অনিশ্চয়তার মধ্যে। গৃহবন্দী হয়েই বোধ হয় পালন করতে হবে সব নিয়ম। যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে কাছের লোকজনের উপস্থিতি ছাড়াই একাকিত্বে কাটবে উৎসবগুলো।
সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে এক সপ্তাহ ব্যাপী যাপিত দুর্গাপুজো। বলা ভালো বারোয়ারি দুর্গাপুজো। বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব। অন্য সময়ে মার্চ এপ্রিল থেকেই পুরো দমে শুরু হয়ে যায় খুঁটি পুজো, প্যান্ডেল তৈরির কাজ কর্ম। এরই সঙ্গে জোর কদমে চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। কিন্তু এবার সব কিছুই শান্ত। বড় পুজো কমিটিগুলো আগেই জানিয়েছে তারা বেশি রমরমা করে পুজো করতে পারবেনা। মানুষের বাস্তব কঠিন পরিস্থিতি ও আর্থিক অনটনকে মাথায় রেখে তাদের এইরকম সিদ্ধান্ত। কিন্তু ছোট করেই বা পুজো কিভাবে হবে? কারা বেরোবে ঠাকুর দেখতে ? কারা মাতবে খাওয়া দাওয়ায় ? প্যান্ডেল থেকে প্যান্ডেলে ঘোরায় ? উল্লাস উদযাপনে ? সবই প্রশ্নের মুখে।
যে আতঙ্ক হাওয়ায় ভাসছে তার থেকে সাধারণ মানুষ কবে বেরোতে পারবে এই নিয়ে চিন্তা হলেও যেভাবে কর্মজীবনের গতি ফিরছে আশা করা যায় দৈনন্দিন জীবনও সুস্থ হয়ে উঠবে তাড়াাতাড়ি। মানুষ আরও বেশি সচেতন হলে কমবে সংক্রমণ। কমবে মৃতের সংখ্যা। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে জনজীবন। আর তারপর আমরা নিজেদের জড়িয়ে নিয়ে পারবো আমাদের যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও উৎসবের সঙ্গে।

স্বর্ণালী দত্ত, কবি প্রাবন্ধিক : কলকাতা থেকে।