শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়ার পাহাড়ী ঝরনা

Bartakia jarna-01রাজিব মজুমদার : প্রকৃতির অপূর্ব এক সৃষ্টি মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়ার জলপ্রপাত। টলমলে স্বচ্ছ পানির ধারা গড়িয়ে পড়ছে শক্ত পাথরের মতো পাহাড়ের শরীর লেপটে। নির্জন, শান্ত পাহাড়ের প্রায় আটটা ধাপ পেরিয়ে আছড়ে পড়া স্রোত ধারার কলকল শব্দ বয়ে যাচ্ছে সমতলে। নাম না-জানা লতাপাতা-গুল্ম, বাঁশবন, বুনোফুল ও ফলের গাছ আগলে রেখেছে পরম মমতায় সৃষ্টির বিষ্ময় এই ঝরনাটিকে। এই বুনো ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না সহজে। সৃষ্টির সৌন্দর্য আর প্রকৃতির মাধুর্য- এই দুই মিলে যখন তৈরি হয় এক অপরূপ মিশ্রণ, তখন তার দর্শনে বেঁচে থাকার ইচ্ছে হয়ে ওঠে আরেকটু প্রবল। প্রকৃতির পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝর্ণা। দূর থেকে বাংলার প্রতি প্রান্তঘেরা সবুজ-শ্যামল মিলন যেন প্রকৃতির রূপের এক বিশাল ক্যানভাস। উঁচু নিচু অসংখ্য পাহাড় আর পাহাড়ের গায়ে নাম না জানা নানা রকম গাছের সবুজে ঘেরা পাহাড়কে মনে হয় যেন এক সবুজের অভয়ারণ্য। আর এই সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে কলকল ধ্বনিতে নেমে আসছে বুনো ঝরনা খৈয়াছড়া। মীরসরাইয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বড়তাকিয়া এলাকার খৈয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের উল্টো দিকের মূল রাস্তা থেকে পিচঢালা পথ চলে গেছে রেললাইন পর্যন্ত। সেখান থেকে মেঠোপথ আর ক্ষেতের আইলের শুরু। তারপর চলতে চলতে হঠাৎ করেই যেন মাটি সরে গিয়ে উদয় হবে একটা ঝিরিপথের। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। স্থানীয় লোকদের ক্ষেতের আইলের পাশে বেড়ে উঠেছে আম, নারকেল আর পেঁপের বাগান। এরপরে শুধু ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকরা পেয়ে যাবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িংয়ের মিছিল! যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মন মাতানো গুঞ্জন শোনা যায়। হাঁটতে হাঁটতেই শুনতে পাওয়া যায় পানি পড়ার শব্দ। চারপাশে মন ভাল করে দেয়া সবুজ দোল খাচ্ছে ফড়িংয়ের পাখায়। মাঝে মাঝে এখানে হরিণের ডাক শোনা যায়। কিছুদূর হেঁটে একটা মোড় ঘুরলেই চোখের সামনে নিজের বিশালতা নিয়ে হাজির হবে খৈয়াছড়া ঝরনা। অনেক ওপর থেকে একটানা পানি পড়ছে। সৌন্দর্যের শুরু এখান থেকেই, পর্যটকরা এখান পর্যন্ত এসেই চলে যায়, ওপরের দিকে আর যায় না। এই ঝরনার ওপরে আছে আরও আটটা ধাপ। এখানকার নয়টা ধাপের প্রতিটিতেই রয়েছে প্রশস্ত জায়গা, যেখানে তাঁবু টানিয়ে আরাম করে পূর্ণিমা রাত পার করে দেয়া যায়। একটু চুপচাপ থাকলেই বানর আর হরিণের দেখা পাওয়া যায়। অদ্ভুত সুন্দর এই সবুজের বনে একজনই সারাক্ষণ কথা বলে বেড়ায়, বয়ে যাওয়া পানির রিমঝিম ঝর্ণার সেই কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যায় নিশ্চিন্তে।
মীরসরাই উপজেলার এমন সুন্দর দর্শনীয় স্থান আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল এতদিন, ভাবতেই অবাক লাগে। দুর্গম পাহাড়ি এই ঝরনা ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে প্রতিদিন। অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা আর প্রচারণার অভাবে খৈয়াছড়া নামের এই জলপ্রপাতটি রয়ে গেছে সকলের দৃষ্টির আড়ালে।