বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

প্রকাশ্যে ফারুকীর ‘ডুব’ কাহিনী

খবরিকা ডেক্সঃ  নির্মাণের পর নানা জটিলতায় পড়ে সেন্সরবোর্ডে আটকে আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ডুব’। চলচ্চিত্রটির কাহিনি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ পত্নী মেহের আফরোজ শাওন। কী আছে চলচ্চিত্র ‘ডুব’-এ এমন প্রশ্নের উত্তর জানা গেলো সমপ্রতি প্রকাশিত ‘হলিউড রিপোর্টার’-এর একটি রিভিউতে।

দেশে মুক্তি থেমে রইলেও দেশের বাইরে প্রশংসা কুড়িয়ে এনেছে ‘ডুব’। ‘২০তম সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ ও ‘৩৯তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’এ প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শক ও সমালোচকদের। মস্কো ফিল্ম ফ্যাস্টিভালে চলচ্চিত্রটি অর্জন করেছে কোমারস্যান্ত জুরি পুরস্কার। উৎসবের লাল গালিচায় হেঁটে দেশে ফিরেছেন নির্মাতা ফারুকী ও অভিনেত্রী তিশা।

শুধু কি তাই? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এসেছে ছবিটির প্রশংসা। আলোচনায় এসেছে হলিউড রিপোর্টার-এ প্রকাশিত এক সমালোচনা। সেখানে চলচ্চিত্র সমালোচক দেবোরাহ ইয়াং তার সমালোচনায় তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রটি নিয়ে তার নানা পর্যবেক্ষণ। ফারুকী যে তার পূর্ববর্তী নির্মাণশৈলী থেকে সরে এসে আরও সামনে এগিয়েছেন তাও ধরা পড়েছে তার চোখে। ইয়াং বলেন, ‘টেলিভিশন’ এবং ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ ছবি দুটোর তুলনায় একদম আলাদা এই ছবিটি। ছবির ভিজ্যুয়াল স্টাইল এবং কাহিনির গভীরতা মস্তিষ্কে নাড়া দেবে।

কাহিনিও উন্মোচন করেছেন তিনি- ফারুকীর ছবির মূল চরিত্র জাভেদ হাসান খানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইরফান খান। তার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী মায়া’র ভূমিকায় আছেন রোকেয়া প্রাচী। তিশা অভিনয় করেছেন মেয়ে সাবেরির ভূমিকায়। সাবেরির সহপাঠী নিতুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী পার্ণো মিত্র। ‘ডুব’ ছবির কাহিনি একজন মধ্যবয়স্ক স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতাকে নিয়ে। ছবিতে নির্মাতা তার স্ত্রীকে ছেড়ে মেয়ের সহপাঠীকে বিয়ে করেন। কোনো হত্যার কাহিনি নয় এটি। বরং অহংকার ও আত্মমর্যাদার কাহিনি যা ঢাকার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের অবস্থান পাল্টে দেয় এবং প্রতিটি সদস্যের মন ভরিয়ে তোলে কষ্টে এবং অনুতাপে।

তার বর্ণনামতে ছবিতে দেখানো হয়েছে, জাভেদ হাসানের নামে গুজব ছড়াচ্ছে যে, সে তার ছবির অভিনেত্রী এবং মেয়ের সহপাঠী নিতুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। স্ত্রী মায়ার কাছে সত্য জানানোর সাহস ছিল না জাভেদ হাসানের। মায়াকে গাড়িতে করে লং ড্রাইভে যান জাভেদ। ধীরে ধীরে কঠিন সত্যটা জানান। জাভেদ জানান, তাদের বৈবাহিক জীবন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। অতীতের মতো নেই আর। জাভেদের মুখে এ ধরনের কথা শুনে অবাক হয়ে যান মায়া। জাভেদের সন্তানেরা এসব জানতে পেরে বাবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।

নিতুকে জীবন থেকে আলাদা করার জন্য জাভেদ তার ফিল্ম স্টুডিওর এক পাশে তৈরি করা ঘরে একা থাকা শুরু করে। স্ক্যান্ডাল এড়াতে নিতু ছবির কাজ ছেড়ে দেয়। কিন্তু খুব সহজেই জাভেদের মন গলাতে সক্ষম হয় নিতু। জাভেদের পরিবারের জন্য পরিস্থিতি মেনে নেয়া এবং জাভেদের অনুপস্থিতি খুব কঠিন ছিল। পরিবার ও প্রেমিকার মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার সময়টাতে জাভেদকেও স্বার্থপর হতে হয়েছে। প্রাণবন্ত এবং শক্তিশালী একটি চরিত্র ছবি নির্মাতার মেয়ে সাবেরি। বাস্তবসম্মত, আবেপ্রবণ ও শক্তিশালী এই চরিত্র সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিশা। ইয়াং তার সমালোচনায় ‘ডুব’ ছবির বর্তমান অবস্থা নিয়েও লিখেছেন। ‘লাইফ অব পাই’, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’, ‘ইনফার্নো’খ্যাত ইরফান খানের জন্য চলচ্চিত্রটি বাজার মাত করবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সেন্সরবোর্ডে চলচ্চিত্রটি ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদনের জন্য আটকে যায় এবং অনুমতি ছাড়া অন্যের পরিবারকে নিয়ে ছবিটির কাহিনি তৈরির জন্য ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়। এ অভিযোগ পরবর্তীতে উঠিয়ে নেয়া হলেও একজন পুরুষের বিচ্ছেদ এবং নিজের থেকে অনেক কম বয়সী নারীকে বিয়ে করার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ রয়েছে দোলাচলে। এটি খুবই জটিল প্রক্রিয়া, যদিও ছবিটিতে কামোদ্দীপক ও আবেদনময় দৃশ্য নেই বললেই চলে।

এদিকে, দুই আন্তর্জাতিক উৎসব থেকে দেশে ফিরেই ফারুকী জানিয়েছেন, অচিরেই সেন্সরবোর্ডকে মোকাবেলা করে ‘ডুব’ ছবিটি মুক্তির প্রত্যাশা করছেন তিনি। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিবেন তিনি।

সুত্র- দৈনিক জনতা