শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

পাহাড় ঘেরা ফুজিরায় বনভোজন

juju
প্রবাসের খাটুনির জীবনে মৌসুমে মৌসুমে মনের ফিতায় উঁকি মারে স্বদেশ স্মৃতি। আমিরাতের রুক্ষ বালিতে শীতের শিশির ঝরলে মনে পড়ে যায় গাঁয়ের চড়ুইভাতির কথা। ক’টি সাহসী পরিবার মিলে বিদেশেই নিয়ে নেয় দূর-পাহাড়ে বনভোজনের উদ্যোগ। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশকে তারা বানিয়ে ফেলেন আনন্দময় স্বদেশ। লিখেছেন- কামরুল হাসান জনি
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চড়ুইভাতি ’১৪। দুবাইস্থ বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশী কমিউনিটি পিকনিকের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল আমিরাতের ফুজিরাহ বিভাগের মাধব সালফিউরিক স্প্রিং পার্ক। ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার উৎসবের আমেজে আমিরাতের প্রায় সব বিভাগ থেকে কমিউনিটির প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী এতে অংশগ্রহণ করেন। চড়ুইভাতি’র আয়োজন ছুটির দিনে হওয়ায় আনন্দের মাত্রা ছিল দ্বিগুণ।
শারজাহর মালিহাস্থ অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে সকাল ৮টায় প্রবাসীরা সমাবেত হতে থাকেন। চড়ুইভাতি’তে অংশগ্রহণে ইচ্ছুকরা সেখানে সকালের নাস্তা শেষ করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়। এর আগে সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি নওশের আলীর গাড়িকে ক্রমিক নং-১ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ সময় ক্লাবের অন্য কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের ২ থেকে শুরু করে ১৫ নম্বর পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও নম্বর সংগ্রহ করে র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেছে ৮৪টি গাড়ি। যা আমিরাতে বাংলাদেশী কমিউনিটিদের রেকর্ড সৃষ্টিকারী ‘কার র‌্যালি’। এ ব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘এটাই আমিরাতে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বৃহত্তম গাড়িবহর। এছাড়াও বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের আয়োজনে পূর্বে একটি কার র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেছিল ৩৫টি গাড়ি।’
সকাল ৯.১৫ মিনিটে শুরু হওয়া মোটর শোভাযাত্রাটি যাত্রাপথে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করে পৌঁছে যায় চড়ুইভাতি’র জন্য নির্ধারিত স্থান ফুজিরাহর মাধব সালফিউরিক স্প্রিং পার্কে। প্রসঙ্গত, সংযুক্ত আরব আমিরাত সাতটি ভিন্ন ভিন্ন আমিরাতের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো হল আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমান, ফুজিরাহ, রাস-আল-খাইমাহ ও উম-আল-কোয়াইন। পাহাড়ে ঘেরা ফুজিরাহ বিভাগের আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে অন্যসব বিভাগের চেয়ে ভালো। এখানে বৃষ্টিপাতও হয় তুলনামূলক বেশি।
চমৎকার আবহাওয়ায় ভেন্যুতে পৌঁছানোর পর সংগঠনের নেতাদের ব্যস্ততা বাড়ে দ্বিগুণ। একযোগে শুরু হয় দুপুরের রান্নার আয়োজন। এ ফাঁকে উপস্থিত সবার জন্য হালকা নাস্তা হিসেবে বিতরণ করা হয় বাংলাদেশী পিঠা। এ সময় আয়োজন ছিল বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী বাচ্চাদের জন্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতা। শুধু বাচ্চারাই নয় প্রাপ্তবয়স্করাও অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। পুরুষদের মার্বেল দৌড় আর মহিলাদের জন্য ছিল ব্যতিক্রমধর্মী অংকন প্রতিযোগিতা। নিজ নিজ স্বামীর ছবি আঁকাই ছিল অংকনের বিষয়বস্তু। প্রতিযোগিতা পর্ব শেষে ফল প্রকাশের সময় বিচারকরা মহিলাদের আঁকা ছবিগুলো উপস্থিত দর্শকদের দেখালে বিনোদন হিসেবে এটি অনুষ্ঠানে আলাদা মাত্রা যোগ করে। এছাড়া স্বামী-স্ত্রীর জুটি বেঁধে প্রতিযোগিতাও সবাইকে ব্যাপকভাবে আনন্দ দিয়েছে।
আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে সব প্রতিযোগিতা শেষে আয়োজন ছিল দুপুরের ভোজ। ভোজন রসিকরা গল্প আর আড্ডার সঙ্গে তাদের খাবার শেষ করে। এরপর শুরু হয় গান-বাজনা। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরেও হারমোনিয়াম আর তবলা বাজিয়ে সুরের তালে উচ্চারিত হয় আসর জমানো বাংলা গান। সে সময় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণও করা হয়। সর্বশেষ, সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি নওশের আলী ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম জাহিদ চৌধুরী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে চড়ুইভাতি ’১৪-এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানটি যেন পরিণত হয়েছিল এক টুকরো বাংলাদেশে। চমৎকার এ অনুষ্ঠানের স্মৃতি হৃদয়ে ধারণ করে উপস্থিত প্রবাসীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন প্রবাসের কর্মবস্ত জীবনে ফিরে যাওয়ার।