মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনতা রুখে দাঁড়াও

বিশ্বের যাহা কিছুর সৃষ্টির চির কল্যানকর ,অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। এতে বুঝা যায় মানব সভ্যতার ইতিহাস রচনা করতে গেলে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবধান কোন অংশে কম নয়। অথচ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা হয়েছে নির্য়াতিত নিষ্পেষিত নিগৃহিত জিগাংসার বলি হয়েছে বার বার। তার সাম্প্রতিক প্রমাণ বগুড়ায় মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনা মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার উদাহরণ য়থেষ্ট।

দেশে হঠাৎ ধর্ষণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ক্লাসরুমে শিক্ষিকাকে ধর্ষণ,আর ধর্ষণ থেকে বাদ যাচ্ছে না ছোট বাচ্চারাও। গ্রামগঞ্জে, শহরে, রাস্তাঘাটে, ঘরেবাইরে, বাসে-লঞ্চে কোথাও নিরাপদ নয় নারীরা। ঘরে ঢুকে বাবা-মা কিংবা স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণ, রাস্তা আটকিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে পিঠমোড়া বেঁধে ধর্ষণ, বেড়াতে গেলে ফুঁসলিয়ে চকলেট দিয়ে বাচ্চাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিকারের নেই কোনো উদ্যোগ।

শিশুরা যেমন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে তেমনি সবচেয়ে বেশি ধর্ষিত হচ্ছে তারাই। প্রথমে যৌন হয়রানি কিংবা কু-প্রস্তাব, পরে ধর্ষণ। বাদ যাচ্ছে না বয়স্করাও। স্কুল-কলেজ-মাদরাসার ছাত্রীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রেমিকের কাছে প্রেমিকা, ভাইয়ের কাছে বোন, শ্বশুরের কাছে ছেলের বউ এমনকি বাবার কাছে মেয়েও এখন আর নিরাপদ নয়।

সামাজিক অস্থিরতা, অপসংস্কৃতি, আকাশ সংস্কৃতি, অশ্লীলতা, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা কারণে দিনে দিনে সামাজিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি অশ্লীলতার আগ্রাসনে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অভাব ও সামাজিক অবক্ষয়ে ধর্ষণের ঘটনা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। ধর্ষণের শিকার যারা, তাদের অধিকাংশই শিশু। স্কুল, কোচিং এমনকি নিজ বাড়িতেও নিরাপদ নয় শিশুরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে চরম নৈতিক অবক্ষয়, আকাশ সংস্কৃতি, মাদকের বিস্তার, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১২ সালে ৮৬ জন, ২০১৩ সালে ১৭৯ জন, ২০১৪ সালে ১৯৯ জন, ২০১৫ সালে ৫২১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ চিত্র থেকেই স্পষ্ট- প্রতিবছরই শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৬৮৬টি শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ইভ টিজিং, যৌন হয়রানীসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকারী বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বিভিন্ন গণমাধ্যম পর্যলোচনা করে নারী ও শিশু নির্যাতনের নানা ঘটনা সংরক্ষণ করে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৭২৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬ বছরের কম বয়সী শিশু ৬২ জন, ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ১৭৮ জন এবং ১৩ থেকে আঠারো বছর বয়সীর সংখ্যা ২৫১ জন। অর্থাৎ ধর্ষণের শিকার হওয়া প্রায় সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক। আসক-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত মোট ২৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যাদের ২০ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। এ রকম বিভিন্ন সংস্থার হিসাবেও একথা স্পষ্ট যে ধর্ষণের মতো নির্মম ঘটনার শিকার হওয়াদের অধিকাংশই শিশু।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা শারমীন বেনু বলেন, নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সমবেত সোচ্চার হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আইন দিয়ে কখনোই এমন বর্বর ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে না। দেশে নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বহু আইন রয়েছে, তারপরও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। পারিবারিকভাবেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এখন নারী ও শিশু নির্যাতনের ধরন পাল্টাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। নির্যাতন প্রতিরোধ কিংবা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন আরও জোরদার করতে হবে।

ব্রাকের এই কর্মসূচির প্রধান ফারহানা হাফিজ বলেন, দেশের ৫৫টি জেলার ১২ হাজারেরও বেশি কমিউনিটিভিত্তিক নারী উন্নয়ন সংগঠন ‘পল্লী সমাজ’ এবং ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচির বিভিন্ন প্লাটফর্মের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পাওয়া গত বছরের নারী ও শিশু নির্যাতনের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ ডাটাবেজ তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, গবেষণায় গত বছরের ৫৫ জেলায় ৭ হাজার ৪৮৯ নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়।
নারী ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে এক হাজারেরও বেশি নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সংগঠনটি নারীদের ওপর নির্যাতনের এমন নির্মম ও নিষ্ঠুর ধরনকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছে। যুগান্তরসহ বাংলাদেশের ১৪টি দৈনিক পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি বলছে, গত বছর এক হাজার ৫০ জন ধর্ষণের শিকার হয়ে ছে।